অনেক কিছুই লিখি আমি ?

অনেক কিছুই লিখি আমি,আজ একটু গল্প বলি আসেন।খুব সাধারণের গল্প,আপনার সময়ের মুল্য অনেক হলে স্কিপ করে যেতে পারেন।
আমাদের বাড়িতে চাউল বেছে রান্না করা হতো,মানে আম্মু একটা একটা করে চাউল বেছে নিতো যেন কোন কালো চাউল না থাকে ভাতের মধ্যে।সেখানে চুল বা অন্য কিছু থাকাত চান্স ১ লক্ষ ভাগে ১ ভাগ।
গোষ্ঠীর বড় ছেলে আর ফুফুদের একমাত্র ভাইপো তখন আমি,মোটামুটি আমাকে কোনদিন একটা গ্লাস পানিও ঢেলে খেতে হতোনা।ক্লাস ৫/৬ এ পড়ার সময়েও মেজো ফুপু আর ছোট ফুপু গোসল করিয়েই দিতো🙈🙈।আর এখনো সব ফুফুই আমায় আব্বা বলেই ডাকে,আমার নাম ধরে কেউ ডেকেছে বলে আমার মনে পড়েনা।
এই আমিটাই ২০০৭ এ যখন কলেজের হোষ্টেলে এসে উঠলাম,প্রথম দিনেই প্রথম চামচ ভাত ওঠানো মাত্রই একটা পেরেক (তেলিকাটা ও বলে অনেকে) পড়লো ভাতের সাথে।আমি ভাত রেখে উঠে যাচ্ছি এমন সময় একজন বড় ভাইয়া বললেন- সৌভিক,না খেলেও মিলরেট যোগ হবে আর খাবেই বা কোথায়? এমন হতেই পারে ২৫০ জনের রান্নায় তো চাউল বেছে দেয়া সম্ভব না,প্রতিদিন কি বাইরে খেতে পারবে?
এই কথার উত্তর না দিতে পেরে আমি সেদিন খেয়ে নিয়েছিলাম,আমি অসুস্থ ও হয়েছিলাম তারপরে।একটা পর্যায়ে এসে সহ্য হয়ে যায় সবটা।
একবার বাড়িতে যেয়ে আম্মুর সাথে কথায় কথায় কষ্টের কথাটা বলে ফেলেছিলাম- আম্মু অনেক কান্না করেছিলো,এটা দেখার পরেই সিধান্ত নিয়েছিলাম যে,আর কখনো আমি আম্মুকে বলবোনা এসব।
এরপর থেকে যাই খেতাম আম্মুকে বলতাম খুব ভালো রান্না ছিলো আর দারুন রান্না করে হোষ্টেলে,মেসে।এবং খাবারের মান ও ভালো।রোজার সময় সন্ধ্যায় রান্না করে রেখে দিলে সেটা ভোর রাতে খাওয়া যেতোনা,তাই নিজেই রান্না করেছি আবার সবাইকে ডেকে তুলেছি।
আসলে আমরা হয়তো সহ্য করে ফেলি অনেককিছু,বলা যায় শিখে যায়।আজকে বাইক চালিয়ে যখন আসছিলাম রাস্তায় একা একা তখন ভাবছিলাম-
সেই ছেলেটা যে কিনা একটা গ্লাস পানিও ঢেলে খেতোনা,সেই ছেলেটা সারা সপ্তাহের একটা ছুটির দিনেও ১০০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে তার স্বপ্ন “অর্জন কুরিয়ার” এর জন্য বাইক কিনত গিয়েছিলো।এসেই আবার ICT CARE অফিসে বসে পড়েছে।যেখানে আজকের দিনটা তার নাকি ছুটিতে কাটানোর কথা।
জীবন কিভাবে বদলে যায়,স্বপ্নের ওজন আমরা কতটা আঁচ করতে পারি, একটা স্বপ্ন আছে বলেই এসব সব সহজ হয়ে যায়।পজিটিভ ভাবা যায় বলেই ক্লান্তির পরিবর্তে এটাকে এনার্জী বলে মনে হয়।
আমি এজন্য প্রায়ই বলি- মেয়েকে বিয়ে দেবার সময়ে অন্য সব বাদ দিয়ে কনে পক্ষের জেনে নেয়া উচিত যে,ছেলে হোষ্টেলে বা মেসে থেকেছে কিনা।কেননা এই ছেলেগুলি খুব দ্রুত সহ্য করতে শিখে যায়।
Life is all about sacrifice & Compromise. Its all about the happiness. Find your happiness with work.
If you have a Dream then your workload will always enjoyable to you.
দিন পালটে গেছে,সেই সৌভিক এখন অন্য বাচ্চাকে খাইয়ে দেয়,অন্য একটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ গড়তে কাজ করে।হারিয়ে গেছে সেই পুরানো দিনগুলি যদিও স্মৃতিতে আজো অমলীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *