গত পোষ্টে আমি অপ্ল অল্প করে এগিয়ে যাবার বিষয় নিয়ে লিখেছিলাম, সেখানে একটি প্রশ্ন রয়েই যায়- অল্প করে না করে, একবারে করলে কি হবে?
একবারে করতে গেলে কি হবে?
কামারের উদাহরণটাতো আগেই দিয়েছি। একবারে একটি অভ্যাস করতে গেলে নিজের ওপর অনেক বেশি চাপ দিতে হয়। আপনি যদি ৫ বছর ধরে দিনে ৬ ঘন্টা ফেসবুক চালান, একদিনে সেটাকে ২ ঘন্টা করতে গেলে আপনার ওপর প্রচন্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে। ১০ বছর ধরে দিনে মাত্র ৩ ঘন্টা পড়ার অভ্যাসকে হুট করে ১২ ঘন্টা বানানো যায় না। হয়তো প্রথম দুই একদিন পারবেন, কিন্তু সেটা স্থায়ী হবে না।
ম্যাজিক ফর্মূলা
বড় লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে আগে সেই লক্ষ্যকে ছোট ছোট প্ল্যানে ভাগ করতে হয়। তারপর সেই প্ল্যান ধরে ধরে এগুতে হয়। একবারে করতে গেলে প্রথমেই ব্যর্থ হয়ে যেতে পারেন। আপনি যদি ১০ তলায় উঠতে চান – তবে আপনাকে মাটি থেকে শুরু করে এক তলা এক তলা করে উঠতে হবে, এক লাফে উঠতে পারবেন না। – এগুলো খুব সাধারণ বিষয়। সবাই জানে। কিন্তু কিছু মানুষ এই সাধারণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে অসাধারণ থিওরি বের করে আনতে পারেন।
ডিপ ওয়ার্কের মত কঠিন একটা অভ্যাস, যা শুধু সেরাদের সেরা যারা, তাদেরই আছে – তেমন একটা অভ্যাস এক দিনে রপ্ত করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ডিপ ওয়ার্ক বই এর লেখক, এই অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য কয়েকটি পদ্ধতির কথা বলেছেন। সেই পদ্ধতিগুলোর আলোকে আমি আরও সহজ কয়েকটি পদ্ধতি আপনার সামনে তুলে ধরছি:
নির্দিষ্ট সময়ে একবার:
দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আপনি পৃথিবীর আর সবকিছু ভুলে নিজের লক্ষ্য পূরণের কাজ করবেন। হতে পারে সেটা সকাল ৭টা থেকে ৮টা। প্রথমে অল্প করে শুরু করুন। তারপর ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা, ৯টা, ১০টা, ১২টা। এভাবে ধীরে ধীরে বাড়ান। তাহলেই দেখবেন অভ্যাসটি স্থায়ী হচ্ছে।
নির্দিষ্ট জায়গায়:
হতে পারে আপনার কাজ করার একটি নির্দিষ্ট জায়গা আছে। চাইলে বিশেষ চেয়ার ও টেবিল কিনে নিতে পারেন। ঐ চেয়ার টেবিলে বসে যতক্ষণ কাজ করবেন – ততক্ষণ আর কিছু করবেন না। কয়েকদিন এভাবে অভ্যাস করলে, ঐ জায়গায় বসা মাত্রই আপনার ব্রেন ডিপ ওয়ার্কের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।
আনুষ্ঠানিকতা:
চেয়ার টেবিল ছাড়াও আপনি নির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারেন। অনেকেই মোমবাতি জ্বালিয়ে এই কাজটা করে। একটি মোমবাতি নিয়ে তাতে চিহ্ন দেয়। প্রথমে আধা ইঞ্চি বা এক ইঞ্চি দৈর্ঘের চিহ্ন দেয়। মোম পুড়ে সেই চিহ্ন পর্যন্ত আসার আগে কাজ বা পড়া থামায় না – যতই কষ্ট হোক, নিজেকে জোর করে বসিয়ে রাখে। দিন যাওয়ার সাথে সাথে মোমবাতির দাগও বড় হয়, এক ইঞ্চি পর পর চিহ্নের বদলে দুই ইিঞ্চ পরপর চিহ্ন দেয়া হয়।
এভাবে অভ্যাস করতে থাকলে এক সময়ে পুরো মোমবাতি পুড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি গভীর মনোযোগের সাথে কাজ করতে পারবেন। তারপর এক সময়ে মোমবাতিরও দরকার হবে না। মোমবাতি ছাড়াই আপনি ওই পরিমান সময় গভীর মনোযোগের সাথে কাজ করতে পারবেন। ব্যাপারটা আসলেই ম্যাজিকের মত কাজ করে।
ভালো না লাগলেও কাজ করুন, ৫টা মিনিট কাজ করুন:
কাজ করতে করতে বা পড়তে পড়তে একটা সময়ে বোর লাগতেই পারে। বোর লাগলেই আমরা রেস্ট নেয়া বা বিনোদন করার চিন্তা করি। কিন্তু এই সময়টাই আসলে ডিপ ওয়ার্কের অভ্যাস করার সেরা সময়। অসাধারণ সফল মানুষেরা যত বোর লাগুক আর কষ্টই হোক, হাতের কাজ শেষ না করে ওঠেন না।
যতক্ষণ কাজ করবেন বলে ঠিক করেছেন – ততক্ষণই বসে থাকেন।এখন আপনি প্রথমেই ঘন্টার পর ঘন্টা এটা করতে পারবেন না। আপনাকে প্রথমে অল্প করে শুরু করতে হবে। হয়তো আধঘন্টা পড়ার পর বা কাজ করার পর ফেসবুক চালাতে ইচ্ছে হচ্ছে – আপনি ৫টা মিনিট জোর করে বসে থাকুন। প্রথম কয়দিন ৫ মিনিট বসে থাকার পর সেটা ১০ মিনিট করে ফেলুন। সাতদিন পর ১৫ মিনিট। এভাবে করতে করতে দেখবেন বোর লাগলেও ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে যেতে পারছেন।