অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারিনা-এটার কি কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে 

অনেকের মনের মধ্যেই এই প্রশ্নটা কাজ করে- যে অভ্যাস টা খারাপ সেটা ত্যাগ করতে এত সমস্যায় পড়ি কেন?এইটা নিয়ে আমার পূর্বে দুইটি কন্টেন্ট আছে আজ তার শেষ অংশ।
আমাদের অভ্যাসগুলো আসলে আমাদের মস্তিষ্কের নিউরোনগুলোর মধ্যে সংযোগ পথ বা নিউরাল পাথওয়ে। নিউরোনগুলোর মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমেই আমাদের দেহ ও মনের কাজগুলো হয়।
প্রতিটি চিন্তা ও কাজের জন্য মস্তিষ্কে আলাদা আলাদা নিউরাল পাথওয়ে আছে।
একটি কাজ বা চিন্তা আপনি যত বেশিবার করবেন পাথওয়েটি আরও চওড়া ও মসৃণ হতে থাকবে। আবার যদি আপনি সেই চিন্তা বা কাজটি নিয়মিত না করেন, তাহলে একটি রাস্তায় বহুদিন না চললে যেমন তা ঢেকে যায়, নিউরাল পাথগুলিও তেমন ছোট আর অমসৃণ হয়ে আসে।
যেসব কাজ করতে আমাদের কোনও প্রকার চিন্তাভাবনার প্রয়োজন হয় না, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ হয় আমাদের ব্রেনের “basal ganglia” অংশ থেকে।
যেমন আপনি যদি একজন এক্সপার্ট ড্রাইভার হন, তাহলে আপনাকে গিয়ার পাল্টানো বা ব্রেক চাপার জন্য কোনওরকম চিন্তাভাবনা করতে হয় না – কারণ এই কাজের তথ্যগুলো আপনার basal ganglia তে মজুদ আছে। এই ব্যাসাল গ্যানাগ্লিয়া আসলে আমাদের অবচেতন মনের (subconscious mind) একটি অংশ। নিয়মিত গাড়ি চালানোর কারণে এই কাজের নিউরাল পাথওয়ে যথেষ্ঠ মসৃণ আছে।
কিন্তু আপনি যদি দুই বছর গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন, তাহলে গাড়ি চালানো না ভুললেও আগের মত এতটা ভালোভাবে চালাতে পারবেন না।
মস্তিষ্কের অবচেতনের basal ganglia অংশটি এতটাই শক্তিশালী যে এর কাজ যদি আমাদের সচেতন মন করতে যায়, তবে সে দারুন ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
আমাদের চেতন মন হলো আমাদের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশ যার নাম “prefrontal cortex”; এই অংশের কাজ করার ধরন basal ganglia এর চেয়ে আলাদা।
prefrontal cortex যখন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়, তখন সে অনেক বিষয় বিবেচনা করে। এই অংশের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, কোনও বড় সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে – কারণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অনেক শক্তি খরচ হয়।
ধরুন আপনি সিগারেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপনার হাতের কাছে সিগারেটের দোকান থাকলেও আপনি অনেক্ষণ ধরে সেটি না খেয়ে থাকবেন। এর কারণ, আপনার সিদ্ধান্ত পালন করার প্রাথমিক নির্দেশ prefrontal cortex থেকে আসছে।
কিন্তু যখনই বিভিন্ন চিন্তা করতে করতে মস্তিষ্কের চেতন অংশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখনই basal ganglia আপনার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এবং যেহেতু বহুদিন ধরে করার ফলে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আপনার basal ganglia এর অংশ হয়ে গেছে, তাই আপনি আবার সেটা শুরু করবেন।
আমাদের অভ্যাসগুলো আসলে এভাবেই সৃষ্টি হয়। বার বার একটি কাজ করতে করতে সেই কাজের প্রক্রিয়াটি সচেতন মনের prefrontal cortex থেকে অবচেতনের basal ganglia এর অংশ হয়ে যায়, তাই অটোমেটিক ভাবেই কাজগুলো হতে থাকে। – এটাই আসলে অভ্যাস।
এখানে আপনার বোঝার বিষয়টি হচ্ছে একটি নতুন অভ্যাস অল্প অল্প করে অনুশীলন করতে করতে এক সময়ে সেটি করতে আপনার আর কোনও কষ্ট হবে না। তাই একবারে একটি অভ্যাস রপ্ত করার চেয়ে, সেটিকে আস্তে আস্তে আপনার অবচেতনের অংশ করে ফেলুন।
কাজের পরিমানের বদলে প্রক্রিয়াটিকে অভ্যাসে পরিনত করুন। প্রক্রিয়া নিউরাল পাথ এ মানিয়ে গেলে, সময় বা পরিমান কোনও ব্যাপার নয় – সেগুলো একা একাই বাড়বে। এক সময়ে দেখবেন এটিই আপনার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।
আপনি চাইলেই বদ অভ্যাসগুলো একবারে বাদ দিতে পারবেন না, এতেকরে আপনার মস্তিষ্ক ও শরীরের ওপর চাপ পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের Duke University এর এক গবেষণায় দেখা যায় আমাদের ৪৫ শতাংশ কাজই অভ্যাসে করা হয়। আমরা জানিওনা যে, আমাদের কত ত্রুটি আসলে আমাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফসল।
আমাদের সবারই উচি‌ৎ নিজের দিকে একবার তাকানো এবং কোন কোন অভ্যাস দূর করা দরকার – তা খুঁজে বের করা এবং Mini habits এর উপায় কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে নতুন করে সাজানো।
Mini Habits নিয়ে তিন পর্বের লেখাটি শেষ হলো আজ।কেমন লেগেছে জানাবেন কমেন্টে।

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *