বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন’ বর্তমান সময়ে নবজাতক শিশুটি ব্যতীত প্রায় সব বয়সের মানুষের কাছে এটি
বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। এই যান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থায় প্রায় অধিকাংশ মানুষই কম-বেশি ডিপ্রেশনে ভুগে
থাকে। বিশেষ করে মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ বয়সী মানুষের মাঝে এ ব্যাধিটি বেশি প্রকাশ পায়।
বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন হলো ইমোশনাল ইলনেস বা আবেগজনিত মানসিক ব্যাধি। যেকোনো উদ্বিগ্নতা যখন
কোনো ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কর্মতৎপরতা ও পারষ্পারিক সম্পর্কসমূহের মধ্যে
বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তখন মস্তিষ্কের ‘সেরোটনিন’ জাতীয় রাসায়নিক পদার্থের গুণগত ও পরিমাণগত তারতম্য ঘটে
যা ব্যক্তিকে প্রচন্ড রকমভাবে ডিপ্রেশনে ভুগিয়ে থাকে।
তবে, যেহেতু এটি একটি মানসিক ব্যাধি; তাই এর থেকে দূরে থাকতে হলে আপনার ইচ্ছাশক্তি ও পজিটিভ মানসিকতাই যথেষ্ট।
দেখে নিন যে কাজ গুলি আপনাকে ডিপ্রেশন হতে দূরে রাখবে-
নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পারেন:
জীবন মানেই সংগ্রাম। জীবনের প্রতিটি পদে পদে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকতে হয়। একজন ব্যক্তি তার স্বপ্ন পূরণে বা লক্ষ্যে
পোঁছাতেই সংগ্রাম করে থাকে। বিশাল জলসমুদ্রে একটি পালহীন নৌকার যেমন দিশেহারা হয়ে যায় ঠিক তেমনি লক্ষ্যহীন
মানুষ তার জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে না। লক্ষ্যহীন জীবন যখন পালহীন নৌকার মতো দিশেহারা হয়ে
যায় তখনই একজন ব্যক্তি প্রচন্ড রকমভাবে বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে।
তাই জীবনটাকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হলে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করুন এবং প্রতিদিন সেই লক্ষ্যে পোঁছাতে কাজ করুন।
একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আপনার প্রতিটা দিন সুন্দরভাবে পরিচালনা করার
শক্তি সঞ্চয় করবে, ফলে বিষণ্ণতাও আপনাকে ঘিরে ধরতে পারবে না কখনোই।
নিয়মিত মেডিটেশন করতে পারেন:
নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি।
যেমন- খেলা-খুলা, শারীরিক ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করা। তবে এসবের পাশাপাশি
‘মেডিটেশন’ শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতা বজায় রেখে বিষণ্ণতা হতে দূরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে থাকে। মেডিটেশন হলো এমন একটি ব্যায়াম যা আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয়
বিষয়াদি দূর করে বিষণ্ণতা হতে মুক্তি ও নিঁখুতভাবে মস্তিষ্কের কার্যসাধন করে থাকে।
বিষণ্ণতাকে দূরে রাখার অন্যতম একটি উপায় হলো ‘মেডিটেশন’। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর
Willem Kuyken এর মতে, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষেরক্ষেত্রে মেডিটেশন ‘Anti-Depression’
ঔষধের মতো কাজ করে থাকে। এবং নিয়মিত মেডিটেশন করা একজন ব্যক্তির বিষণ্ণতায় আক্রান্ত
হবার ঝুঁকি ৩১% কমে যায়। অতএব, ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা হতে নিজেকে মুক্ত রাখতে আপনার
প্রতিদিনের ১৫-২০ মিনিটের মেডিটেশন হতে পারে অন্যতম সেরা একটি মাধ্যম।
ঘুম নিয়ন্ত্রন করতে পারেন:
‘ঘুম’ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ। ঘুম ব্যতীত একটি মানুষের স্বাভাবিক
জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। তবে শুধু কম ঘুমালেই নয়, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ঘুমালেও একজন
ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক ব্যাধির সম্মুখীন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের পরামর্শপত্র
অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ থেকে ৬৫ বছর) মানুষের ৭ ঘন্টার কম অথবা ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমানো উচিত নয়।
কম অথবা বেশি, দুটোই একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ক্ষতিসাধন করে থাকে। যা
বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনে ভোগাতে ভূমিকা পালন করে। মূলত ‘নিয়ন্ত্রিত ঘুম’ হলো সকল শারীরিক ও
মানসিক সমস্যা সমাধানের প্রথম শর্ত। তাই বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন হতে দূরে থাকতে সর্বপ্রথম আপনার ঘুমকে নিয়ন্ত্রন করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করতে হবে:
‘খাদ্য গ্রহন’ আমাদের জীবনের অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বেঁচে থাকার সর্বপ্রথম শর্ত হলো-
খাবার গ্রহন করতে হবে। তবে খাবার গ্রহন যদি হয় অনিয়মিত ও অস্বাস্থ্যকর তাহলে তা আমাদের
শারীরিক ও মানসিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে যা আমাদেরকে বিষণ্ণতায় ভুগিয়ে থাকে।
আপনজন ও বন্ধুদের সময় দিতে শিখুন:
নিঃসঙ্গ ব্যক্তিদেরই বিষণ্ণতা সবচেয়ে বেশি আকঁড়ে ধরে। সাধারণত আমরা যখন একা থাকি ঠিক
তখনই আমাদের অতীতের যত কষ্ট-বেদনা ও ব্যর্থতাসমূহ মনে পড়ে যায়। নিজেকে তখন মূল্যহীন মনে
হয়। জীবনের প্রতি কোনো ভালোবাসা থাকে না। তখন একজন মানুষ আত্মহত্যার মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত
নিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। যা জীবনের সবচেয়ের বড় ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
আপনাকে ভালোবাসার মতো অনেক মানুষ রয়েছে। বিশেষ করে আপনার পরিবারের মানুষগুলো।
নিজের খারাপ সময়গুলোতে তাদের সাথে সঙ্গ দিন। তাদের মতো করে আর কেউ বুঝবেনা আপনাকে।
এমনকি মন খারাপের সময়গুলোতে আপনার ভালো বন্ধুগুলোর সাথেও সময় কাটাতে পারেন। কিছু বন্ধু
থাকে, যাদের সাথে সময় কাটালে মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তাদেরকে ভালোবাসুন, দেখবেন
তারাও আপনাকে বড্ড বেশি ভালোবেসে কাছে টেনে নিবে। আর ভালোবাসার মাঝে বিষণ্ণতা কখনোই ভাগ বসাতে পারে না।