কাস্টমার হলো সকল ব্যবসায়ের প্রাণ। তাই প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানই চায় তাদের কাস্টমার সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য এবং এতে করে ব্যবসায় দ্রুত সম্প্রসারন হবে। যদিও আপনার প্রতিষ্ঠান সঠিক পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কখন আপনার কাস্টমার সিদ্ধান্ত নিবে তিনি আর আপনার প্রতিষ্ঠানের পন্য বা সেবা চান না তা আপনি হয়ত অনেক সময় নাও জানতে পারেন।
তাই প্রতিনয়ত মার্কেটিং এর মাধ্যমে কাস্টমারের দ্বারপ্রান্তে পোঁছানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেজন্য যখন মার্কেটিং করবেন সে ক্ষেত্রে নতুন উদ্ভাবনী কিছু মানুষের সামনে ফুটিয়ে তুলতে হবে যাতে করে মানুষ অনেক বেশি উৎসাহিত হয় আপনার পন্য বা সেবার প্রতি।
নিন্মে কিছু কার্যকরী বিষয় তুলে ধরা হল যার মাধ্যমে ক্রেতা তৈরি ও ধরে রাখা সম্ভব হবে-
১. সমস্যার পাশাপাশি সমাধানের কথাও বলুন- যখন মার্কেটিং করবেন তখন একজন বিশেষজ্ঞ বা অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে নির্বাচন করুন যারা সমস্যার পাশাপাশি কিভাবে সমাধান পাবে সে সম্পর্কে বলে দেয়। আপনার ত্রুটিগুলি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে কথা বলার মাধ্যমে ক্রেতারা আপনার মধ্যে নিজেকে দেখবে এবং প্রতিষ্ঠান ও ক্রেতা উভয়ের মধ্যে একটি ভাল সম্পর্ক সৃষ্টি হবে এতে করে। আসলে কোন কোম্পানির প্রতি ক্রেতার আকর্ষণ আসে যখন আপনি কীভাবে সমস্যার সমাধান করেছেন সে বিষয়ে বিস্তর আলোচনা করেন ।
২। ব্যক্তিগত ইমেইল প্রেরন- একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে ক্রেতার কাছে ইমেইল প্রেরনের মাধ্যমে একটি ভাল সম্পর্ক সৃষ্টি হতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে সবাই আমরা কম বেশি ইমেইল আদান প্রদান করি। ব্যক্তিগত কাজকর্ম এখন বেশিরভাগ ইমেইলে প্রেরন করা হয়। যখন মানুষ তাদের ব্যক্তিগত মেইল এ যাবে তখন আপনার প্রতিষ্ঠানের মেইলটিও তার চোখে পড়বে। এই ছোট্ট কাজটি করার ফলে ক্রেতা মনে করবে আপনি ক্রেতাকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন যার ফলে ক্রেতাও আপনার সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চাইবে।
৩। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার- এখন মানুষ ফেইসবুক, টুইটার, ইনস্টোগ্রামসহ নানা রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। এই সকল সাইট গুলো হল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম মানুষের দ্বারপ্রান্তে সহজে পোঁছানোর জন্য। স্বচ্ছ ও পরিষ্কারভাবে ভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানের পন্য বা সেবা সম্পর্কে ক্রেতার নিকট উপস্থাপন করতে হবে যাতে করে ক্রেতারা আপনার প্রতিষ্ঠানের ভিশন ও লক্ষ্য সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারনা পায়। আপনি এর সাথে সাথে বিভিন্ন পন্যের ছবি বা ফিচার যোগ করতে পারেন ভালভাবে আপনার ক্রেতাকে পন্যের ব্যপারে স্পষ্ট ধারনা দেবার জন্য।
৪। কমিউনিটির সাথে সম্পর্ক স্থাপন- যদি ক্রেতার সাথে ভাল সম্পর্ক না থাকে তাহলে আপনি বুঝবেন না যে তারা কি ধরনের পন্য বা সেবা চায়। তাই আপনাকে দেখতে হবে তারা কোথায় বেশী সময় ব্যয় করে. সেক্ষত্রে সার্ভে বা জরীপ, গবেষণা, বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করলে সবচেয়ে বেশি ভাল হয়। এই সকল জায়গায় ক্রেতারা এখানে তাদের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করবে এবং তখন আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন তারা কেমন ধরনের পন্য বা সেবা চায় এবং সেইসাথে ভাল নেটওয়ার্কিং সৃষ্টি হবে উভয় পক্ষের মধ্যে।
৫। ক্রেতার জন্য রিসোর্স হন– মানুষের চাহিদার শেষ নেই এবং ক্রেতা সন্তুষ্টি একটি জটিল কাজ। তাই আপনাকে খুজে বের করতে হবে কি তাদের চাহিদা , চ্যালেঞ্জ বা কি ধরনের সমস্যা তারা মোকাবেলা করে। যদি আপনি তাদের চাহিদা অনুযায়ী পন্য বা সেবা তৈরি করতে পারেন এবং তাদের সম্যসার সমাধান দিতে পারেন তাহলে সফলতা নিশ্চিত। সেই সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরির তারা আপনার লয়্যাল বা স্থায়ী কাস্টমার হয়ে যাবে।
৬। সম্ভাব্য ক্রেতাদের আপনার ভিডিও আর পডকাস্টে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানান- আপনার টার্গেট কাস্টমার কারা এবং তারা কি ধরনের পন্য চায় সে ধরনের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পডকাস্ট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক লাইভ করতে হবে এবং কাস্টমারকে আমন্ত্রন জানাতে হবে এইধরনের শো গুলো দেখার জন্য। এই শো গুলো আপনার প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে কাস্টমারদের তাৎক্ষনিক ভাল সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করবে এবং তাদের ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যাবে এবং একই সাথে ভবিষ্যতে তাদের চাহিদা গুলো সম্পর্কে আর বেশি জানতে পারবেন ।
৭। ক্রেতার সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি করুন- যদি আপনি নিজের প্রতিষ্ঠানকে ভাল অবস্থানে দেখতে চান তাহলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রেতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। এত হল চিরন্তন সত্য কথা একটি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে। যত বেশি আপনার প্রতিষ্ঠান ক্রেতার বিশ্বাস অর্জন করতে পারবে তত বেশি আপনার আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়ের শক্ত ভিত্ত গড়ে উঠবে। আসলে বেশিরভাগ ক্রেতাই ক্ষনস্থায়ী সুবিধা পেতে চায় না। তারা চায় এমন প্রতিষ্ঠানকে যাকে তারা বিশ্বাস করতে পারবে এবং আজীবন তার কাছ থেকে সেবা গ্রহন করতে পারবে।
৮। সন্তুষ্ট ক্রেতাকে অনুরোধ করুন আপনার প্রতিষ্ঠানের কথা তুলে ধরতে- যারা আপনার প্রতিষ্ঠানের লয়্যাল কাস্টমার হয়ে যাবে তাদের কে আপনি পন্য বা সেবার মান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পারেন। এতে করে তারা মনে করবে আপনি তাদের কে আপনার প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন, এবং তারা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে এবং আপনি সেই অনুযায়ী পন্য তৈরি করতে পারবেন। লয়্যাল বা স্থায়ী কাস্টমাররা আপনার কোম্পানি সম্পর্কে অন্যদেরকে বলে যাকে বলা হয় “ওয়ার্ড অফ মাউথ” প্রোমোশন যার মাধ্যমে আর ও বেশি ক্রেতা আপনার কাছে আসবে এবং আপনার লাভের পরিমানও দ্বিগুন বেড়ে যাবে।