আমাদের ডেডিকেশন আর সেরাদের ডেডিকেশনের মাঝে পার্থক্যটা দেখুন

 
প্রসঙ্গটা আমাদের গতকালের ক্রিকেট ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করা যাক- আমাদের দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম যিনি গতকাল একটা ৫০+ স্কোর করেছেন,যা তার টি-২০ এর ক্যারিয়ারে খুব সম্ভবত ৬ নাম্বার ফিফটি,অথচ তিনি ক্রিকেট খেলছেন ১৬ বছর ধরে।আবার টি-২০ তে ব্যাটিং এভারেজটাও গতকালের ম্যাচের পরেই উনি ২০ তে আনতে পেরেছেন।
এই ব্যাটসম্যান কিনা দর্শক সমালোচনার জবাবে জানালেন আয়নায় চেহারা দেখতে।
অথচ গতকাল ক্রিকেট ইন্ডিয়া তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়ের একটি গতকাল পার করার পরেও বিরাট কোহলি কিন্তু কোন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব ত্যাড়াভাবে দেননি অথবা মুখ ভার করেও দেননি।
বরং তিনি বলেছিলেন- we will comeback.
This is called “confidence”
এভাবে বলতে পারার পিছনের কারনটা কি জানেন? তারা পরিশ্রমী এবং এই সফলেরা জানেন কিভাবে ফিরে আসতে হয়।
২০১৫ থেকে ২০২১,এই সময়েই আমাদের সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের সাথে সাথে অভিষেক হয়েছে পাকিস্থানের বাবর আজম আর মোঃ রিজওয়ান দের। সেই বাবর এখন ওয়ানডেতে পৃথিবীর সেরা ব্যাটসম্যান, টি-টোয়েন্টিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান। আর সেরার তালিকায় রিজওয়ানের জায়গা ৬ষ্ঠ অবস্থানে।
সুযোগ-সুবিধা বা বেতন-ভাতার কথা যদি বলেন, বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের কোনো তুলনাই হবে না। কোচ, বিদেশ সফর, ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ, প্রত্যেকটা দিক থেকেই এগিয়ে ছিলো বাংলাদেশ। এবং বিশ্বের ৫ম সেরা ধনী ক্রিকেট বোর্ড ও আমাসের বিসিবি।
অথচ দিনশেষে পারফরম্যান্সের দিক থেকে দুই দলের ব্যবধান কতটা?
আমার মনে হয় আপনারাও বুঝে গেছেন।
যেখানে পাকিস্থানের বাবর আজম ও রিজওয়ানকে একদিকে মাথায় তুলে নাচানাচি করছে,অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা দাবি করছেন লিটনরে আর দেশে আনার দরকার নাই। বরং তাকে ৫০ বছর ব্যান করা হোক।কতটা কষ্ট থেকে এমন মন্তব্য কেউ করে, সেইটা আমাদের বুঝতে হবে।
সুযোগ সুবিধা বেশি পাওয়ার পরেও যখন আমাদের প্লেয়াররা পারফর্ম করতে পারেন না, তখন সমস্যাটা সম্ভবত ডেডিকেশনেই।অন্তত আমার তাই মনে হয়।
যাহোক,আমার স্বভাব আবার যেকোন জায়গা থেকেই জীবনের কিছু জ্ঞান অর্জন করা।
অনেকেই বলতে পারেন আমি হয়তো আমাদের দেশের তুলনায় ভারত কিংবা পাকিস্থান নিয়ে বেশি মাতামাতি করছি,আসলে আমি কতটা দেশের ক্রিকেট নিয়ে ভাবি সেটাকে আলাদা রেখেই বরং মানুষ বিরাট কোহলি কে নিয়ে একটু বলি।
এই বান্দাকে আমার কাছে একটা আলাদা ধাঁচের ডেডিকেটেড বলে মনে হয়।
যতদূর মনে পড়ে বিরাট আর আনুশকার বিয়ে হয়েছিলো ইতালিতে। বিয়ের অতিথিদের জন্য বিরাট আর আনুশকা গিফটের ব্যবস্থা রেখেছিলেন। সেই গিফটের মধ্যে একটা বইও ছিলো।
বইটার লেখকের নাম কী ছিলো জানেন?
লেখক ছিলেন জালাল-আদ-দীন রুমি। এই বইটাকেই পুরো পৃথিবীর মানুষ দ্য বুক অব লাভ বা ভালোবাসার বাইবেল বলে জানে।
তো, আমি পৃথিবীর সকল ভালোবাসা-বাসি মানুষকে যদি একটু ভাগ করি, তাহলে দুইটা ভাগে ভাগ করে ফেলি-
একভাগে পড়বে যারা রুমী পড়েছে
আর অন্যভাগে পড়বে যারা রুমী পড়ে নাই।
তো, তখন থেকেই আমি বিরাট কোহলিকে আমি মানুষ হিসাবে একটু অন্য একটা চোখে দেখি।
বিরাট কোহলি হানিমুন করতে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। না, দক্ষিণ আফ্রিকা হানিমুন স্পট হিসেবে খুব ভালো জায়গা না। ভারতের পরবর্তী সফর ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকায়। এইজন্যই কোহলি নিজের প্র্যাকটিস এর স্বার্থেই ঐ জায়গা বেছে নিয়েছিলেন হানিমুনের জন্য।
কোনো দরকার ছিলো না। সেই সময় কোহলির ধারেকাছেও কোনো ব্যাটসম্যান ছিলো না। দলের অধিনায়কও তিনিই ছিলেন। সেরা পারফর্মার ছিলেন। চাইলেই আমেরিকা-ইউরোপ যেতে পারতেন, যাননি।
🟥 এটাকেই বলে ডেডিকেশন 🟥
জর্জ কোম্যান একদিন বলছিলেন, মেসি একবার প্র্যাকটিস সেশনে সতীর্থের কাছে বল হারিয়েছিলেন। সেই বল হারানোর রেশ মেসির মধ্যে ছিলো পুরো সপ্তাহ। উনি নিজের উপরেই অসন্তুষ্ট থেকেছেন। বারবার প্র্যাকটিস করেছেন।
কোনো দরকার ছিলো না। মেসি চাইলেই বলতে পারতেন, আমরাও মানুষ, পেইনকিলার খেয়ে খেলতে নামি। পারলে আয়নায় নিজের মুখ দেখেন। ফুটবল কি আপনারা খেলেন না আমি খেলি?
বলেননি। বরং পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়িয়েছিলেন। এদিকে আমাদের দেশে বলা হলো আয়নায় মুখ দেখতে। মেকাপ একটু করেই দেখবো না হয়।
স্যার আলেক্স ফার্গুসন আর হোসে মরিনহো, দুইজনই বলেছিলেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো সবার আগে ট্রেনিং এ আসতেন। সবার পরে ফেরত যেতেন। ওনার চেয়ে পরিশ্রমী ফুটবলার তারা তাদের জীবনে দেখেননি।
তো, শেষ পর্যন্ত পরিশ্রমই আসলে পার্থক্যটা গড়ে দেয়। কেউ সাংবাদিকদের হুঙ্কায় দেয়, আয়নায় নিজের মুখ দেখো বলে। কেউ আবার বলে, পরের ম্যাচেই আমরা কামব্যাক করবো। করবোই।
পরিশ্রমীদের পার্থক্যটা সম্ভবত ওখানেই।ডেডিকেশন টাই দিনশেষে আলাদা হয়ে দাঁড়ায়।
“ট্যালেন্ট থাকার পরেও আপনি ফেইলিউরের দলে পড়তে পারেন কিন্তু পরিশ্রমী মানুষ কখনো সেই দলে পড়েনা।”

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *