একজন ডাক্তার ও তার কাষ্টমার খাতির

একজন ডাক্তার ও তার কাষ্টমার খাতির

আমার জীবনে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৯৯% শুক্রবার হারিয়ে ফেলেছি হসপিটালের বারান্দা আর ভার্সিটির শিক্ষকদের চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে,তাই আমার কাছে এখন প্রতিটি শুক্রবারের তাৎপর্য অন্যরকম।
বলতে পারেন এই যন্ত্রনার লেভেল আমার কাছে এতটাই যে আমি আমার ঘোরতর শত্রুর জন্যও কখনো এমন কিছু চাইনা (যদিও আমি ভাবি আমার কোন শত্রু নেই,আমি অনেকের বেলাতেই হতে পারি)। জীবনের এত সময় এই জায়গাগুলিতে অপেক্ষা করতে গিয়ে ব্যয় করেছি যার জন্য আক্ষেপ আমার আজীবন রয়ে যাবে।
এবার মুল গল্পে আসা যাক- গতকাল আমার খালা শ্বাশুড়ির পিত্তথলিতে পাথর জনিত কারনে ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হয় তাই সারাদিন কেটেছে সেখানেই,কিন্তু এখন কেন এইখানে এইটা নিয়ে কন্টেন্ট লিখলাম,সেটার ব্যাখ্যায় আসি, ছবিতে যে মানুষটিকে দেখছেন তার নাম Azam Iqbal Khan, আমার বন্ধু এবং পারিবারিক ডাক্তারও বলা চলে,কেননা আমাদের সকল প্রাথমিক চিকিৎসা ও নিজেই দিয়ে থাকে এবং সেটা এখন আমার পরিবার ছাড়িয়ে আমার ক্লায়েন্টদের পরিবারেও চলে গিয়েছে।
বন্ধু যেহেতু ইবনেসিনা ও কুইন্স (যশোরে চিকিৎসার জগতে অন্যতম সেরা) হসপিটালে চেম্বার করে তাই তার রোগীর সংখ্যা অনেক,কিন্তু আমি ওকে সর্বদাই দেখি হাসিমুখে সেবা দিতে।একই জিনিস হয়তো একজন ব্যাক্তিকে বারবার বলছে,আবার ফোন করে অন্য ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট ঠিক করে দিচ্ছে,কখনো আবার কাউকে টেষ্টের বিল লেস করে দিচ্ছে।
কাল ওর একটা জিনিস দেখলাম এবং নিজে শেখার চেষ্টা করলাম- “রোগীর ৭০% রোগ ভালো হয়ে যায় যদি তার কথা কোন ডাক্তার মন দিয়ে শোনে” এই বাক্যটি ওর মুখের।আমি ভাবতে থাকলাম এবং ওর পাশে বসেই আছি। পরখ করে দেখার চেষ্টা করছি যে আসলেই ও কি করে।
দেখলাম কোন রোগীকে দেখতে ওর ৫ মিনিটের বেশি লাগছেনা (ক্ষেত্র বিশেষ বেশি,আমি অবাক হয়ে দেখলাম রোগীরা খুব খুশি মনেই বিদায় নিচ্ছে।একসময় আমি আবিষ্কার করলাম যে- সকল রোগী আসা মাত্রই তাকে বসতে দিয়ে ও বলে দিচ্ছে, আপনার কি সমস্যা হয় সেটা আপনি বলেন।রোগীরা তাদের সমস্যাকে তাদের মত করেই বলছে এবং সেটা কোনভাবেই ২ মিনিটের বেশি নয়।রোগীদের সমস্যা শোনার পরে ও তাদেরকে বুঝিয়ে প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছে।এছাড়া ও বুঝিয়েও দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে।
এবার আমার প্রশ্ন- বন্ধু ৫ মিনিটের বেশি সময় কাউকে দিতে হচ্ছেনা,কিন্তু কেন এত সময় অপেক্ষা করতে হয়?
আজমের সরল উত্তর- বন্ধু,সকল ডাক্তার একই পড়া পড়ে এসেই ডাক্তার হয় কিন্তু আমরাই তাদেররকে বড় করি,একজন ডাক্তার যখন অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলেন তখন তার রোগীর সংখ্যা বেশি হয়।কারন আমরা ভেবেই নিই যে উনিই সবচেয়ে ভালো ডাক্তার,তাই সুযোগ দিলে সবাই ওনাকেই দেখাতে চাইবে,কিন্তু আমি আর তুই যদি নতুনদের পরামর্শ নিতে না চাই,তাদের কাছে না যায় তাহলে তো ভীড় সেখানেই বাড়বে।আর অপেক্ষা করতেই হবে।
সকাল ৮টা থেকে ওর কাজ শুরু হয় এবং সেটা চলে রাত ৮ টা অবধি,কখনো কখনো ২৪ ঘন্টাও ডিউটিতে চলে যায়,কিন্তু সেবাটা দিয়ে যাচ্ছে হাসিমুখেই,অথচ কিছু মানুষের আচরনের জন্য এই সেক্টর ধরেই আমরা খারাপ বানিয়ে ফেলি।সব সেক্টরেই ভালো আর মন্দ থাকবে।সব জায়গাতেই এইগুলি মানিয়ে নিয়ে চলার নামই জীবন।
আমার যারা কাষ্টমার হয়েছেন তারাও জানেন নিশ্চয়ই যে, আমিও আগেই বলি- আপু/ভাইয়া আপনার সমস্যা বলুন কিংবা কি জানতে চান বলুন।শিখে নিলাম আবারো কাষ্টমার কেয়ার বা কাষ্টমার খাতির।

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *