একজীবনে ব্যাডা মানুষের চরিত্রের যত দোষ

 

একদিন আমি আপনি কেউই আর বেঁচে থাকবোনা কিন্তু আমার-আপনার সৃষ্টিগুলি থেকে যাবে, তাই এই উন্মুক্ত চিঠিখানা লিখে রাখলাম,এটা কেউ পড়লেও চলবে,আবার না পড়লেও চলবে।কেউ না পড়লেও আমি শুধুমাত্র নিজের উপলব্ধির জায়গা থেকে লিখছি-

ঘটনা ঘটার সুত্রপাত-
রাতের বেলাতেই মোটামুটি একটা ভুল বোঝাবুঝি হলো- এক দম্পত্তির, যে যার মত ঘুমিয়ে গেলো অন্তত সংসার নামক বন্ধন আর সন্তান নামক সম্পদের দিকে চেয়ে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে, সংসারের ব্যাডা মানুষ দেখলেন- নাস্তা নেই, অবশ্য পাবার আশাটাও আর তার নেই।কারন, রাতের বেলাতে যে লেভেলের গন্ডোগোল হয়েছে তাতে আজ সকালে কেন,কোন সকালেই আর নাস্তা জুটবে বলে মনে হচ্ছেনা।

✅ ঘটনা-০১
নাস্তা বিহীন বাইরে বের হয়ে,বাচ্চাকে স্কুলে পৌছে দিয়েই ব্যাডা মানুষটা কর্মস্থলের পথ ধরবেন,এমন সময়- আরেহ ভাই, খুব তাড়া নাকি?

ব্যাডা মানুষ- হাসিমুখে, কামাল ভাই,কেমন আছেন?
কামাল ভাই- আমিতো ভালো।আপনার খবর কি? সংসার কেমন চলছে?
ব্যাডা মানুষ- হ্যাঁ, ভাই আলহামদুলিল্লাহ। আপনার কি অবস্থা?
কামাল ভাই- তা চলছে। বাড়িতে খাবারের সমস্যা নাকি? স্বাস্থ্য এমন কমে যাচ্ছে কেন?
ব্যাডা মানুষ- আরেহ নাহ ভাই, আপনার ভাবি যত্ন করে আমাকে ফিট রাখছে।ফিট রাখা তো তারই কাজ।আপনি ভাই বাসায় এসেন, আমার অফিস যেতে হবে।পরে কথা হবে।

সেলফিবাজ কামাল ভাই একখানা সেলফি তুললেন, দাঁতগুলো খুব বের করে একগাল হেসে ছবি উঠে বিদায় নিলেন।

✅ ঘটনা-০২
অফিসে ঢোকার আগে, অফিসের পাশেই একটা হোটেলে বসে সকালের নাস্তা সারছেন- ব্যাডা মানুষ।এমন সময় সেখানে একজন কলিগ এলেন।

আশফাক সাহেব- আরেহ ভাই, ভাবি থাকতেও বাইরর খাচ্ছেন সকালে। ভাবি কি খেতে দিচ্ছেনা? নাকি সংসারটা চলছেনা?

ব্যাডা মানুষ- নাহ ভাই, এমন কোন ঘটনা নাই।আসলে আপনার ভাবি একটু ওর বাবার বাড়িতে গেছে।একটু কাজে, আজকেই আবার ব্যাক করবে।সব রান্না করে রেখে গেছে,আসলে আমিই গরম করে নেবার সময় পাইনি ভাই।

আশফাক সাহেব- আসেন ভাই একটু ছবি উঠি, সকালের নাস্তায় দেখা হলো।

অতঃপর ব্যাডা মানুষটি আবার দাঁত বের করে হেসে ছবি উঠলেন।

✅ ঘটনা-০৩
সঠিক সময়ে অফিসে পৌছে, সবার সাথে একগাল হেসে মতবিনিময় সভা সেরে অফিস ডেস্কে বসতেই, শুরু হলো কাজের চাপ।এই কাজের চাপে, ব্যাডা মানুষের একটা গ্লাস পানি খাবার সময়টাও নেই।

এসব সামলাতে সামলাতে কখন যেন লাঞ্চ টাইমটাই পেরিয়ে গেলো,ব্যাডা মানুষ টের পেলোনা।অবশেষে, যখন ৪ টা নাগাদ লাঞ্চ শুরু করবে সেই ব্যাডা মানুষ, তখনই ফারিয়ার আগমন।

ফারিয়া- স্যার, আপনি এখন লাঞ্চ করছেন কেন? স্যার কোন সমস্যা?

ব্যাডা মানুষ- আরেহ নাহ, কাজের চাপ ছিলো।আপনি কেন এখন এলেন?

ফারিয়া- স্যার, আমি একটু লেটেই খাচ্ছি এখন।ভালোই হলো, আজকে একসাথে খাওয়া যাবে।

ব্যাডা মানুষ খাচ্ছেন আর এমন সময়ে, ফারিয়া বললো- স্যার একটু তাকান তো এদিকে।
অতঃপর খাবার টেবিলে আরো একটা সেলফিতে দাঁত বের করে রইলেন ব্যাডা মানুষ।

লাঞ্চ সেরে কাজে মনোনিবেশ করে কাজ করে চলেছে ব্যাডা মানুষ।এমন সময় বন্ধুর টেক্সট- দোস্ত সন্ধ্যার পরে রেডি থাকিস।

ব্যাডা মানুষ- কোথায় যাবো রে?

বন্ধু- তুই রেডি থাকিস, গুলশানে The Westin Dhaka তে আমরা আজকে ডিনার করবো।বুফেতে খাবো, তাই টাইম মত রেডি হইস।

ব্যাডা মানুষ- আচ্ছা।

এভাবেই সন্ধ্যার পরে চলে গেলেন বন্ধুদের পার্টিতে।এত বড় রেস্টুরেন্টে এসে একটু সেলফি না তুললে, একটু খাবারের ছবি না তুললে কি হয় নাকি?

ব্যাডা মানুষ এইবার ছবি তোলা আর ভিডিও করাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলেন।কারন, এখানে আবার সন্তান ও বউ নিয়ে আসা লাগলে একটু চিনে রাখা যাবে অন্তত।ওদেরকে ছাড়া ভালো লাগেনা আসলে।

সবকিছু শেষ করে- রাতে বাসায় ফেরার পথেই ব্যাডা মানুষ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলেন তিনটা ট্যাগ আছে।

একটা ট্যাগে কামাল ভাই লিখেছেন- সদা হাস্যজ্বল একজন মানুষ।

দ্বিতীয় ট্যাগে, আশফাক সাহেব লিখেছেন- সকালের নাস্তাটা দারুন ছিলো।

তৃতীয় ট্যাগে ফারিয়া লিখেছে- Lucnh with office Boos.

রাতের বেলার পার্টির জন্য বন্ধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটা পোস্ট দিলেন, সারাদিনের এই ব্যাডা মানুষটাই।

বাসায় ফিরে আবার গম্ভীর পরিবেশ।ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলো- বাবা, কি কি করলে সারাদিন?

ছেলের উত্তর- বাবা, সারাদিনে তো আজকে একবারও ফোন করলেনা।
ব্যাডা মানুষ- বাবা, আমি খুবই সরি,আমি আজকে খুব ব্যাস্ত ছিলাম,তোমার আম্মুর কি হয়েছে কথা নাই কেন?

উত্তর এসে গেলো- অপ্রকাশিত ভালোবাসায় সুন্দর, যেটা গোপনীয়। আম্মু চুপ থাকলেই কি, আর কথা বললেই কি?
আমি বা আমরা ছাড়া কিছুই কি থেমে আছে? সবই চলছে।
এই পৃথিবীতে, আমি একাই সংসার করি তাই সংসারের চিন্তায় আমার ঘুম হয়না, মায়ের সাথে কথা বলিনাই আজকে মন খারাপ তাই,কিন্তু ব্যাডা লোকের সেসব থাকেনা।

বাড়িতে হাজার গন্ডোগোল হলেও তারা বাইরে গেলেই ঠিক,তখন যেন সবই সুন্দর তাদের চোখে।আসলে বাড়ির মানুষকে যে আর ভালো লাগেনা।

এই হলো আমাদের ইউরোপ আর আমেরিকার সভ্যতার সাথে পরিচিত হবার প্রাপ্তি।মনে মনে ব্যাডা মানুষ বোঝে আর প্রকাপ বকে- ” এটাই আমার লাইফ, বাড়িতে যেটাই হোক না কেন, বাইরে বের হলেই আমাকে হাসতে হয়, আমায় হাসাতে হয়, আমাকে ডিল করতে হয়, আমাকে ডিল করাতে হয়, আমাকে কাজ করতে হয়, আমাকে কাজ করাতে হয়।আর বাড়িতে এলে, সেগুলির এভাবেই মুল্যায়ন হয়।”

এটা একটা কাল্পনিক গল্প হলেও আদতে সব ঘরের ব্যাডা মানুষের এইটাই হলো – “জীবন”।

ব্যাডা মানুষকে বিশ্বাস করতে নেই, ওরা সব পারে, ওদের কিছুই থেমে থাকেনা, ওরা কিছুই অনুভব করেনা, সংসার বলে ব্যাডা মানুষের আলাদা আবেগ ও কাজ করেনা,ব্যাডা মানুষ এক নারীতে আসক্তও হয়না।

ব্যাডা মানুষ তো আসলে মানুষই না, ওদের মনও থাকেনা।ওরা কেবলমাত্র ডোমিনেট করতে চাই, ওরা কেবলই সুখি থাকে।

হায়রে ব্যাডা মানুষ, তোমার সৃষ্টির রহস্য কি এখানেই?

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *