একটি পরিপূর্ন ইমেল পাঠানোর সময় যে বিষয় গুলি সকলের খেয়াল রাখা উচিত।

ই-মেইল অথবা ইলেক্ট্রনিক চিঠি বর্তমান পৃথিবীর তথ্য প্রযুক্তির যুগান্তকারী সময়ে আমাদের জীবনে
হয়ে উঠেছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অনেকাংশের কাছেই অপরিহার্য এক যোগাযোগ মাধ্যম।
এর অহরহ ব্যবহার যখন করতেই হচ্ছে আমাদের, বিষয়টি সঠিক নিয়মে ও পরিশীলিত, ত্রুটিহীন
আঙ্গিকে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা দেখা বাঞ্ছনীয়। ই-মেইল লেখার নিয়ম কানুন এমন নয় যে তা না
মেনে চললে আপনার আমি বারোটা বাজাতে চলে আসব।
এগুলো কেবল আপনার লেখার মধ্যে ভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবোঝির মাত্রা কমিয়ে আনতে সহায়তা
করবে- যেন প্রেরক ও প্রাপক উভয়ই সন্তুষ্ট থাকে।
১. অবশ্যই মেইল নাম্বার টি সঠিক লিখুন-
যাকে মেইল পাঠাতে চাইছেন তার ইমেল টি সঠিক লিখুন এবং অবশ্যই সেগুলি রিচেক করে নেন।
২. মেইলে সাবজেক্ট লিখুন-
ইমেল পাঠানোর সময়ে অবশ্যই সাবজেক্ট লিখবেন, অনেকেই ইমেইল পাঠান সাবজেক্ট ব্যাতীত
তাই সেই মেইল গুলি গ্রহন যোগ্যতা হারায়।
ধরুন আপনি আপনার পারসোনাল ইমেল দিয়ে কাউকে বিজনেস মেইল পাঠাচ্ছেন কিন্তু আপনি
সাবজেক্ট ফাঁকা দিলেন তাহলে ঐ ব্যাক্তি বা কোম্পানির জন্য কিন্তু বুঝে ওঠা কষ্ট হয়ে যায় যে এটা কোন কোম্পানির কাজ।
কেননা একজন ব্যাক্তি বা কোম্পানির কাছে সারা দিনে অনেক ইমেল আসে।তার মাঝে হারিয়ে যাবে আপনার গুরুত্বপূর্ন কথা।
৩. বার্তা পাঠানোর আগে পুনরায় দেখে নিন:
পাঠাবেন একবার, কিন্তু চেক করুন দু’বার। তাই লেখার পর ই-মেইলটি কয়েক মিনিট এর জন্য
না পাঠিয়ে রেখে দিন।
“Gmail” ও এর মতো আরও কয়টি ই-মেইল সার্ভিস ও প্রোগ্রাম আপনাকে একটি “Unsend” নামক
ব্যবস্থা দেয় যা দিয়ে আপনি পাঠিয়ে দেয়া ই-মেইল পুনরায় ঠিক করার জন্য ফেরত আনতে পারবেন।
৪. সকলকে একনাগাড়ে একই উত্তর (“Reply All”) করবেন না:
“Reply” যদি ভালো হয়, “Reply All” নিশ্চয়ই আরও ভালো হবে, তাই না? হ্যাঁ তাই, কিন্তু শুধুই তখন
, যখন রিপ্লাইটির সব তথ্য সকলের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ভুলবশত অনেকেই “Reply All” দিয়ে একজনের রিপ্লাই অন্য সবাইকে পাঠিয়ে দেয়। তাই “Reply All”
বোতামটি ক্লিক করার আগে ভেবে নেয়া উচিত, কারণ সাবধানের মার নেই।
৫. ই-মেইলের আকার যথাসম্ভব ছোট রাখো:
আপনার প্রাপককে বিশাল আকারের ই-মেইল পাঠিয়ে ঘাবড়িয়ে দিয়েন না। বক্তব্য একইসাথে ছোট ও
স্পষ্ট থাকা চাই। তাই বলে গুরুত্বপূর্ণ কথা, বা কথা স্পষ্ট রাখার জন্য লেখা সম্প্রসারণ করতে দ্বিধাবোধ
করবেন না। যা শুধুমাত্র না বললেই নয়, তা বলে বক্তব্য শেষ করার চেষ্টা ক্রুন। লেখায় বুলেট পয়েন্ট
বা প্যারাগ্রাফ ব্যবহার করলেও লেখা বেশ সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রাখা সম্ভব।
৬. নজর দিন ই-মেইলের শিরোনামের প্রতি:
প্রতিটি লেখার পেছনেই একটিই ছোট্ট চালাকি রয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হল পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
আপনার লেখার শিরোনামের দায়িত্বটি ও তাই।
আপনার অর্থাৎ, প্রেরকের নামের পরপরই পাঠকের যা দৃষ্টিগোচর হয় তা হল শিরোনাম। সুন্দর একটি
শিরোনাম তোমার লেখাকে সাহায্য করবে প্রাপকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে ও তা ধরে রাখতে।
৭. ই-মেইলের মাধ্যমে কৌতুক, কৌশল, ফাঁদ (e-mail hoax) পাঠিয়েন না:
ইন্টারনেটের দুনিয়ায় রয়েছে অনেক অপ্রয়োজনীয় (ও কিছু ক্ষেত্রে বিপদজনক) অলিগলি, যার প্রসার
ই-মেইলের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এসব ধরণের কৌতুক, কৌশল, বা ফাঁদ পেলে নিজে তা খুলে দেখা বা
অন্যকে পাঠানো বা “forward” করা থেকে বিরত থাকুন, তা দেখতে বা পড়তে যতই চিত্তাকর্ষক হয়ে
থাকুক না কেন। কেননা কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়ানোর পাশাপাশি, প্রায়শই এগুলো বিরক্তিকর ও সময় গ্রাসকারী হয়ে থাকে।
৮. ই-মেইল “forward” করলে তার কারণ উল্লেখ করুন:
বলা বাহুল্য, প্রাপকের সাথে যত সুবিন্যস্ত যোগাযোগ স্থাপন করবে্ন, সম্পর্ক তত বেশি দৃঢ় হবে।
তাই কী পাঠাচ্ছেন, প্রাপকের কাছে এর গুরুত্ব কী, বা কেন কিছু “forward” করছেন, তার উল্লেখ ও বিবরণ আপনার ই-মেইলকে করবে আরও গ্রহণযোগ্য।
৯. ই-মেইল গ্রহণ করার পর জানিয়ে দিন প্রেরককে:
ইন্টারনেটে কোনভাবে হারিয়ে গেল না তো ই-মেইলটি? “Spam” ফিল্টার খেয়ে ফেললো না তো?
এসব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে প্রেরককে মুক্তি দিতে ই-মেইল পাওয়ার পরই পাঠিয়ে দিন একটি স্বীকৃতিস্বরূপ উত্তর।
১০. বড় আকারের অ্যাটাচমেন্ট পাঠানোর আগে অনুমতি চেয়ে নাও:
ই-মেইল বা ভেতরকার কোন ফাইলের সাইজ যদি বড় হয়, সেক্ষেত্রে প্রাপকের সুবিধার্থে তাকে আগে
থেকে জানিয়ে দেয়া, বা তার অনুমতি চেয়ে পাঠানো ভালো। নতুবা তার সিস্টেমে সমস্যা হতে পারে, যার দোষ আপনার ই-মেইলের ওপরেই এসে পড়বে!
১১. একটি ই-মেইলে একটি বিষয় নিয়ে কথা বলুন:
“জটিল করলে জটিল হবে, সহজ করলেই সহজ…” তাই চেষ্টা করুন সব কথা একসাথে না নিয়ে এসে,
কেবল একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করার। অন্য বিষয়ের অবতারণা করতে চাইলে,
লিখে ফেলুন না আরেকটা ই-মেইল, জিনিসটা তো ফ্রি! (না হয় মোবাইল ডেটা একটু বেশিই খরচ করতে হল!)
১২. যতিচিহ্ন যেন ঠিক থাকে ই-মেইলের:
দাড়ি, কমা, সেমিকোলন- এসব ব্যবহারের একটি যথাযথ কারণ রয়েছে। তা হল নিজের লেখা
পাঠকের কাছে বোধগম্য উপায়ে পরিবেশন করতে পারা। তাই খেয়াল রাখা দরকার যাতে সঠিক জায়গায় সঠিক যতিচিহ্নটি ব্যবহার করেছ কিনা তার প্রতি।
১৩. ছবির সাইজ ছোট করে পাঠানো গেলে সেটা ও ভালো:
ই-মেইলে ব্যবহারের পূর্বে, বড় সাইজের ছবি ছোট করে ফেলুন। এতে করে মেইলটি খুলতে
সুবিধা হয় ও ছবি দ্রুত ডাউনলোড হয়। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট আছে যা থেকে আপনি বিনামূল্যে ও কোন ঝামেলা ছাড়াই বড় ছবিকে ছোট করতে পারবেন।
১৪. বানানের ক্ষেত্রে সদা সাবধান:
ই-মেইল হোক কর্মক্ষেত্রের, ব্যক্তিগত জীবনের কিংবা কোন কারণে শখের বসে কিছু লেখার জন্য,
বানান ভুলের মাফ নেই কোন সময়েই। লেখার সামগ্রিক সৌন্দর্য বর্ধনে তাই “send” বোতামটি ক্লিক করার আগে পুনরায় লেখাটি পড়ে নেয়াই শ্রেয়।
১৫. যদি দ্বিধায় পড়েন, “ধন্যবাদ” টেনে দেন লেখায়:
লেখার শেষটুকু ঠিক কি দিয়ে টানবেন বুঝতে পারছেন না? কি বললে মনরক্ষা ও স্বার্থরক্ষা দু’ই হয় তা মাথায় াসছেনা? দ্বিধায় পড়লে “ধন্যবাদ” বা “Thank you”- এর জুড়ি নেই!
সকলেই বুঝবে এর অর্থ ও ক্ষেত্রবিশেষে মানিয়েও যাবে শব্দটি। লেখায় তাই ইতি টেনে দিতে পারেন একটি “ধন্যবাদ” দিয়েই।
আশা করি এখন ই-মেইল লেখা আপনার জন্য হয়ে উঠবে সহজতর ও উপরিউক্ত নিয়মের যথার্থ চর্চায় আপনি হয়ে উঠবেন ই-মেইলের জাদুকর (যে যার পছন্দ মত শব্দের অর্থ নিয়ে পড়তে পারেন)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *