আগের দুইটি পর্ব ছিলো আমার এই বিষয়ে,তাই আজ লিখছি শেষ পর্ব।
বোঝাপড়া তৈরী করুন
মানুষকে আপনার কথা শোনানোর জন্য একটি সম্পর্ক খুব জরুরী। সম্পর্ক মানেই যে বন্ধু, আত্মীয় বা এই ধরনের কিছু হতে হবে – তা নয়। একটি ভালো বোঝাপড়া তৈরী করতে হবে।দুইজন মানুষের মাঝে ভালো বোঝাপড়া থাকলে একজন আরেকজনের কথা শুনতে আগ্রহী হয়।
এই বোঝাপড়াটা কিভাবে তৈরী করবেন?
মানুষ তার কথা শুনতেই বেশি আগ্রহী হয়, যে তার ব্যাপারে আগ্রহী। হয়তো আপনার একজন সহকর্মী, কর্মী, কাষ্টমার বা আত্মীয়কে আপনি কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু কোনওভাবেই তাকে মনোযোগী করতে পারছেন না।
এর কারণ হতে পারে আপনার সাথে তার তেমন কোনও বোঝাপড়ার সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্ক তৈরী করার জন্য কাজের কথার বাইরেও তার সাথে দু’একটি কথা বলুন। ব্যক্তিগত খোঁজ খবর নিন। চেষ্টা করুন, আপনার ও তার মাঝে কোনও বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয়ার। মিল খুঁজে না পেলে মিল তৈরী করে নিন। হয়তো সে রবীন্দ্রনাথের অনেক বড় ভক্ত। আপনি রবীন্দ্রনাথের লেখাগুলো একটু পড়ে দেখুন, তাঁর সম্পর্কে একটু জ্ঞান নেয়ার চেষ্টা করুন। তারপর তার সাথে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন। তাকে দেখান এই বিষয়ে আপনারও বেশ আগ্রহ আছে। দেখবেন সে আপনার সব কথাকেই আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
পছন্দগত মিল মানুষের মাঝে খুব দ্রুত বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরী করে। আরেকজন কি পছন্দ করছে, সেটা খুঁজে বের করে যদি সেটার ওপর ভিত্তি করে তার সাথে একটি বোঝাপড়া সৃষ্টি করতে পারেন – তবে আপনার যে কোনও কথাই সে মনোযোগ দিয়ে।
শ্রোতা বুঝে কথা বলুন
সব মানুষ সব ধরনের কথা বোঝে না। আপনার কথা একজন শুনছেনা মানে এই নয়, যে সে কথা শুনতে আগ্রহী নয়। হয়তো আপনি তাকে ঠিকমত বোঝাতে পারছেন না। সাহিত্যে পড়াশুনা করা একজন মানুষকে যদি বিজ্ঞান বোঝাতে হয় তবে তাকে বিজ্ঞানের জটিল জটিল সমীকরণ ব্যাখ্যা করার বদলে সহজ ভাষায় বোঝাতে হবে। এমনি সাহিত্যের উদাহরণ দিয়ে বিজ্ঞান বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। এতে করে সে সহজে আপনার বক্তব্য বুঝতে পারবে, আর তার বিষয়ের সাথে মিলিয়ে তাকে বোঝানোর কারণে সে আপনার কথা শুনতেও আগ্রহী হবে।
মনে রাখবেন, প্রয়োজনটা আপনার। প্রয়োজনে সে কিভাবে বললে বুঝবে – তা নিয়ে একটু গবেষণাও করতে হবে। একজন মানুষ যখন দেখবে আপনি তার ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয়ে আগ্রহী তাহলে সে আপনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানোটা দায়িত্ব মনে করবে।
বিভিন্ন ধরনের শেখার প্যাটার্ণ সম্পর্কে জানুন
আপনি কি জানেন, কেন অনেক মেধাবী মানুষ পড়াশুনায় ভালো হন না? আবার পড়াশুনায় ভালো অনেক মানুষ অনেক সহজ ব্যাপার কেন সহজে বুঝতে পারেন না?
এর কারণ, সবার শেখার প্যাটার্ণ এক রকম নয়। কেউ পড়ে ভালো বোঝে, কেউ দেখে বোঝে, কেউ শুনে বোঝে, আর কেউবা হাতে কলমে করার আগ পর্যন্ত কোনও ব্যাপার ভালোভাবে বুঝতে পারে না।
মানুষ মূলত পড়া, শোনা, দেখা এবং হাতেকলমে করা – এই চারটির কোনও একটি প্যাটার্ণে শেখে। এক একজন মানুষ এক এক ধরনের প্যাটার্ণে বুঝতে পছন্দ করে। ইংরেজীতে একে “Learning Pattern” বলে।
এখন, যে মানুষটি পড়ে শিখতে পছন্দ করে, কিন্তু শুনে শিখতে বা জানতে পছন্দ করে না – সে আপনার কেন, কারও কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনবে না।
আপনি যাকে আপনার বক্তব্য বোঝাতে চাচ্ছেন, আগে বোঝার চেষ্টা করুন – সে কোন প্যাটার্ণে পড়ে। সে যদি পড়ে জানতে পছন্দ করে – তবে তাকে বলার বদলে লিখিত আকারে আপনার বক্তব্যটি দিন। যদি দেখে বুঝতে পছন্দ করে তবে সম্ভব হলে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরী করুন। যেখানে ছবি বা ভিডিও আকারে আপনার বক্তব্যটি থাকবে।