আজকাল ব্যবসা করার জন্য শুরুতেই খুব বেশি পুঁজির দরকার হয় না।
ফলে এখন ব্যবসা শুরু করতে না পারার কারণ হিসেবে ‘পুঁজির অভাব’ কথাটি আর হালে পানি পাচ্ছে না।
বিনামূল্যের টুলস, স্মার্টফোন অ্যাপস ব্যবহার করেই এখন বিশাল বিশাল ব্যাবসা তৈরি করা যায়।
আর ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ সমস্যারও সমাধান সম্ভব। তাহলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও লোকের ব্যবসা শুরু করতে না পারার কারণ কী?
শুধু স্বপ্ন দেখাতেই আনন্দ পান, বাস্তবায়নে নয় এই ধরনের লোকরা নিজেদেরকে প্রায়ই ‘আইডিয়া পিপল’
বা ‘ধারণা লোক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এরা শুধু তাদের স্বপ্ন নিয়ে গালগল্প করেই আনন্দ
পান কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য যে কঠোর পরিশ্রম দরকার তা করতে আগ্রহী নন।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে অনিচ্ছুক মানে এই আজ করি কাল করি এমন চিন্তা আছে যাদের।
রিক্স নিতে না পারা বা ভিতু মানূষ, ব্যর্থ বা বিব্রত হওয়ার অযৌক্তিক ভয় প্রতিটি মানুষের মাঝেই অজানা
বিষয়ের ভয় কাজ করে। বেঁচে থাকার জন্য এই ভয় দরকারিও বটে।
কিন্তু ব্যবসায় সফল হতে গেলে এই অজানা ভয়কে অতিক্রম করতে হবে
এবং ঝুঁকি গ্রহণ ও ব্যর্থতার মধ্য
সাফল্য মোকাবিলার অযৌক্তিক ভয় আমার প্রায়ই দেখি যে কিছু লোক আছেন,
যারা সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও হাল ছেড়ে দেন। এটা সত্যি যে, কোনো ব্যবসায়
অনেক তাড়াতাড়ি সাফল্য আসলে সেই ব্যবসার মৃত্যুও ঘটতে পারে।
বাস্তববাদী না হয়ে বরং সবকিছুতেই নিখুঁত হতে চান এমন অনেকে আছেন যারা হয়তো গত ২০ বছর ধরেই কোনো একটি প্রযুক্তিপণ্য নিয়ে শুধু গবেষণাই করে যাচ্ছেন।
কিন্তু বাজারজাত করতে পারছেন না। কারণ সেটিকে নিখুঁত করে তোলার জন্য তারা
শুধু আরো গবেষণাই করে যেতে চান। বর্তমান দুনিয়ার দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজার ব্যবস্থায়
নিখুঁত হওয়ার এই চেষ্টা ভাসমান এবং বাস্তবতার বোধশূন্য। বাস্তববাদীরা কোনো পণ্য মোটামুটিভাবে
ভোগযোগ্য হলেই তা বাজারজাত করেন। এরপর তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে যান।
ফোকাস ঠিক না রাখা কোনো ব্যবসায় উদ্যোগে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ফোকাস ঠিক রাখা।
একই উদ্যোগের মাধ্যমে অসংখ্য বাজারে অসংখ্য জিনিস বিক্রির চেষ্টা করা করলে তাতে
কোনো কিছুতেই সাফল্য আসে না। এতে বরং কাস্টমাররা হতাশ হন। ফোকাস ঠিক রাখার মানে হলো,
অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে অনড় থাকা, জরুরি থেকে গুরুত্বপূর্ণকে আলাদা করা,
সংগঠিত করা ও প্রতিনিধিত্ব করা।
অজুহাত তৈরি করে দায়-দায়িত্ব এড়ানো ব্যর্থতাগুলোকে মেনে নেওয়ার যৌক্তিক ভিত্তি সৃষ্টির জন্যই সাধারণত অজুহাত তৈরি করা হয়। এর মধ্যদিয়ে আসলে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
সত্যিকার উদ্যোক্তারা কখনো অজুহাত খাড়া করে নিজেদের ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যান না।
তারা বরং বাস্তব কোনো বাধা-বিপত্তিকে মেনে নিয়ে বিকল্প পথে পুনরায় চেষ্টা করেন। বা সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমস্যার মোকাবিলার চেষ্টা করেন।
নিজে শুরু করা, নেতৃত্ব দেওয়া বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম এরা হলেন শিল্প বিপ্লবের ফল।
কী করতে হবে তা বলার জন্য এরা অন্যদের ওপর নির্ভর করেন। এরপর ভুল করে নিজেদেরকে
পরিস্থিতির শিকার বলে ভান করে আনন্দ পান। কিন্তু সত্যিকার উদ্যোক্তারা কী করতে হবে না
করতে হবে তা নিজেরাই নির্ধারণ করেন,
ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখেন, নিজেই অন্যদের জন্য অনুসরণীয়
আদর্শ হয়ে ওঠেন এবং অনুসরণীয় নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যান। অন্য কেউ আপনার জন্য সিদ্ধান্ত নেবে এবং ঝুঁকি ও
ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করবে এমন ভেবে যদি বসে থাকেন তাহলে কোনোদিনই আর
আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। সুতরাং সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সহজ উপায়টি হলো সঠিক মনোভাব এবং পূর্ণ দায়িত্ববোধ লালন করা।