শারীরিক অঙ্গভঙ্গি
আপনি কথা বলা শুরু করার আগেই মনের অজান্তে যে অংশটির মাধ্যমে আপনার ভাব প্রকাশ করেন তা হলো আপনার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি। কথা বলার সময় বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে, অন্যদিকে তাকিয়ে, মাথা চুলকাতে চুলকাতে কথা বললে – সামনের মানুষটি আপনার সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা করবে না এটাই স্বাভাবিক।
আমাদের সবারই ছোটখাটো কোন না কোন মুদ্রা দোষ থাকতে পারে। অনেক সময় আমরা সেগুলো সম্পর্কে নিজেরা অবগত থাকি না। অন্য কেউ ধরিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত তা আমাদের মনের অগোচরেই থেকে যায়।
এক্ষেত্রে কেউ নিজে থেকে এ বিষয়ে মতামত দিলে আগেই প্রতিরক্ষামূলক আচরণ না করে বরং তার দৃষ্টিকোন থেকে তা বোঝার চেষ্টা করুন।
তাই নিজের সহজাত ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করতে, নিজে নিজের আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন এবং সাথে সাথে আশেপাশের মানুষদের থেকে মতামত নিয়ে সেগুলো পরিহার করার চেষ্টা করুন।
আমি কিন্তু আমার এমন ভুল কেউ ধরিয়ে দিলে খুশি হই।
পোশাক পরিচ্ছদ
অনেকের কাছে পোষাক বা পরিচ্ছদকে কথা বলার উপায়ের অন্তর্ভুক্ত মনে না হলেও এই বিষয়টি অনেকটা শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মতোই কাজ করে। অর্থাৎ আপনি কথা বলা শুরু করার আগেই আপনার পোষাক-পরিচ্ছদ শ্রোতাদের আপনার সম্পর্কে কিছু ধারণা দিবে, যা তারা আপনার বক্তব্যকে কিভাবে গ্রহণ করবে তার অনেকটাই প্রভাবিত করে।
অঙ্গভঙ্গি আর পোষাকের মধ্য পার্থক্য হলো, অঙ্গভঙ্গি বা অভ্যাস পরিবর্তন অনেক সময় সাপেক্ষ একটি বিষয়। তবে পোশাক পরিচ্ছদ পরিবর্তন অনেক কম প্রচেষ্টায় আপনাকে অনেক ভালো ফলাফল দিতে পারে।
সাধারণত, বক্তব্য প্রদানের সময় জাঁকজমকপূর্ণ পোষাক এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। চেষ্টা করতে হবে যাতে কোনভাবেই শ্রোতার মনোযোগ আপনার বক্তব্য থেকে আপনার পোষাকের দিকে বেশী না যায়। এতে আপনার আপনার বক্তব্য যতোই গুনমান সম্পন্ন হোক না কেন তা শ্রোতার মনে দাগ কাটতে ব্যর্থ হবে।
মেয়েদের জন্য এই কথা আরো বেশি প্রযোজ্য
জড়তা কাটিয়ে ওঠা
কথা বলার আগে আপনি যে জায়গায় কথা বলছেন বা যার সাথে কথা বলছেন, তার সাথে জড়তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। বক্তৃতার জন্য নির্দিষ্ট স্থান বা মঞ্চ নির্ধারিত থাকলে, বক্তৃতার আগে সেখানে হাঁটা-চলা করে দেখতে পারেন।
এতে জড়তা অনেকটা কমে যায়।
সরাসরি কথোপকথনের ক্ষেত্রে প্রথমেই দুশ্চিন্তা গুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন,ঠিকমতো শ্বাস–প্রশ্বাস নিন, একটু হাঁটাচলা করুন, নিজের বসার বা দাঁড়ানোর স্থান পরিবর্তন করতে পারেন। এগুলো খুবই কার্যকরী পদ্ধতি।
সবার ক্ষেত্রেই যে এই পদ্ধতিগুলো সবসময় একইভাবে কাজে দিবে তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে নিজেই নিজের জন্য কিছু পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারেন, যা অনেক সময় মঞ্চ অভিনেতা বা বড় বড় পাবলিক স্পিকাররা করে থাকেন। তারা নিজেরা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কাজকর্ম তৈরি করে নেন যা তাদের মঞ্চে যাবার আগে জড়তা ও স্নায়ুর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
তাড়াহুড়া না করা
কথা বলার সময় আমরা অনেকেই খুব দ্রুত বা তাড়াতাড়ি কথা বলি।যার ফলে, পর্যায় ক্রমে একটার পর একটা বিষয় নিয়ে ঠিকমতো বলা হয় না।মনে রাখতে হবে,আপনার বক্তৃতা উপস্থাপন করা উচিত যারা আপনাকে শুনছেন, তাদের কথা মাথায় রেখে।তাড়াহুড়ো করে বলতে গিয়ে, যা বলতে চাই যদি তাই বল না হয়, তাহলে দ্রুত বলে লাভ কী?
সুন্দর করে কথা বলার জন্য কিংবা বক্তৃতা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।শুধুমাত্র সুন্দর পরিকল্পনা না করায় অনেক ভালো ভালো বক্তার কথোপকথন, অনেক সময়অসংলগ্ন হয়ে যায়।
নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য সঠিক ও সুন্দর করে কথা বলতে পারা অন্যতমগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
প্রথম দিকে- এই উপায়গুলো অনুসরণ করতে সংকোচ বোধ হলেও, একবার সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে পরবর্তীতে এর সুফল উপভোগ করা সম্ভব। সবগুলো উপায় একবারে প্রয়োগ করতে না চাইলে, দুই-একটি দিয়ে শুরু করতে পারেন।
সবকিছুর মূলে রয়েছে আপনার আগ্রহ ও সদিচ্ছা।শুধুমাত্র ক্রমাগত প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে–ই আপনি সুন্দর করে কথা বলতে পারার গুণটি অর্জন করতে পারেন।
আমার লেখা অনেক সিরিজের মত আলহামদুলিল্লাহ আরো একটি সিরিজ শেশ করলাম। আপনাদের উপকারে এলেই আমার লেখার স্বার্থকতা আসে।