চলুন একটি উদ্যোগকে নিয়ে প্ল্যান করি- সিক্স হ্যাট থিংকিং এর উদাহরণ দিয়ে বুঝি 

ICT CARE কোম্পানীর কথা ধরুন। তারা নতুন একটি অফিস বিল্ডিং তৈরী করার চিন্তা করছে (রিয়েল এস্টেট টাইপ)। মার্কেটের অবস্থা ভালো, অর্থনীতি চাঙ্গা, নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে – এই অবস্থায় নতুন অফিস টাওয়ার বানালে লাভজনক হওয়ার কথা। তাদের সিধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া হিসেবে তারা সিক্স হ্যাট থিংকিং কে বেছে নিল।
✅ প্রথমেই তারা হোয়াইট হ্যাট ধাপে চিন্তা করতে শুরু করল। তাদের হাতে যে ডাটা বা তথ্য আছে, সেগুলো এ্যানালাইসিস বা বিশ্লেষণ করা শুরু করল। তারা দেখতে পেল শহরের ফাঁকা অফিস স্পেস দিনে দিনে কমছে। তারা হিসাব করে বের করল, তাদের নতুন অফিস টাওয়ার এর কাজ শেষ হতে হতে শহরের অফিস স্পেসের অভাব আরও বেড়ে যাবে।
এরসাথে তারা মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির ডাটাও সংগ্রহ করল, এবং দেখল দিনে দিনে মানুষের নতুন অফিস নেয়ার আর্থিক ক্ষমতা ও প্রয়োজন বেড়ে যাবে। তাই তারা এই মেথড অনুযায়ী প্রজেক্ট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
✅ হোয়াইট হ্যাট এর পর তারা রেড হ্যাট পদ্ধতিতে চিন্তা করতে শুরু করল। নতুন বিল্ডিং এর ডিজাইন দেখে বেশিরভাগের মনে হল বিল্ডিংটা দেখতে ভালো হবে না, এবং এর ভেতরে ঢুকলে মানুষের মন খারাপ হবে।
✅ এরপর তারা ইয়োলো হ্যাট, অর্থাৎ ভালো দিকগুলোতে মনোযোগ দিল। এখানে কয়েকটি পয়েন্ট আসলো:
✔️ অর্থনীতি যদি এই অবস্থায় থাকে, বা আরও ভালো হয় – তবে তারা বিপুল লাভ করতে পারবে।
✔️ অর্থনীতি ভালো থাকতে থাকতেই যদি বিল্ডিং এর কাজ শেষ হয় – তবে ভাড়া এবং ফ্ল্যাট বিক্রীর মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে অনেক টাকা আয় করতে পারবে।
✔️ পর্যাপ্ত সংখ্যক ভাড়াটিয়া পেয়ে গেলে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলেও তারা টাকা আয় করতে পারবে। এবং এক সময়ে না এক সময়ে অবস্থা আবার ভালো হবে, তখন তারা বিক্রীর মাধ্যমেও লাভ করতে পারবে।
✅ এরপর তারা ব্ল্যাক হ্যাট পদ্ধতিতে চিন্তা করল। এবং প্রজেক্ট এর যাবতীয় খারাপ দিক গুলো নিয়ে মাথা ঘামাল। তারা কয়েকটি পয়েন্ট খুঁজে বের করল:
❌ বর্তমানে যে অর্থনৈতিক ভালো অবস্থা চলছে, তা হয়তো সামনে না-ও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এটা লস প্রজেক্ট হয়ে যেতে পারে।
❌ তারা যত ভাড়াটিয়া আশা করছে, তত ভাড়াটিয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে না-ও আসতে পারে। তাহলে তাদের বিনিয়োগ উঠে আসতে এবং লাভ করতে সমস্যা হবে।
❌ যে ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে, সেই ডিজাইন কি আসলেই এতটা ভালো? না হলে ক্রেতাদের কাছে এটা আকর্ষণীয় হবে না।
✅ এরপরে গ্রিণ হ্যাট, অর্থাৎ সৃষ্টিশীল দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটি বিচার করতে গিয়ে তারা নতুন কয়েকটি আইডিয়া পেলেন। যেমন, যদি ঝুঁকি বেশি হয়, তবে তাঁরা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন, এবং সেই সময়ে নতুন বিল্ডিং কিনতে পারেন, যা পরে বেশি দামে বিক্রী করতে পারবেন। এছাড়া বিল্ডিং এর ডিজাইন পরিবর্তন, এখন যে ধরনের প্রতিষ্ঠান বেশি গড়ে উঠছে – সেই ধরনের প্রতিষ্ঠানের উপযোগী অফিস বানানো – এমন বেশ কয়েকটি বিকল্প তারা খুঁজে পেলেন।
✅ সব শেষে ব্লু হ্যাট পদ্ধতিতে তাঁরা বাকি সব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে বসলেন। আগের চিন্তা গুলো থেকে যেসব প্রশ্ন বের হয়ে এসেছে, আরও ভালো করে সেগুলোর উত্তর খুঁজলেন। যেমন, বের করার চেষ্টা করলেন – ঠিক কবে পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা আসতে পারে। এবং দেখা গেল, বিল্ডিং বানানো শেষ করে আরও বেশকিছুদিন পর এটা হওয়ার সম্ভাবনা। ততদিনে তাঁদের পুঁজি উঠে যাবে। এরপর বাকি সবটাই লাভ।
তাই তাঁরা বিল্ডিং বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে বুঝলেন, আগের ডিজাইনে আসলেই কিছু সমস্যা আছে – তাই তাঁরা ডিজাইন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তও নিলেন। এইভাবে, সব দিক বিবেচনা করে তাঁরা একটি কার্যকর ও সম্ভাবনাময় সিদ্ধান্তে আসতে পারলেন।
আশা করছি এবারে সবাই বুঝবেন যে-সিক্স হ্যাট পলিসি আমাদের উদ্যোক্তা জীবনে কিভাবে কাজে লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *