গত ১৮ নভেম্বর চাকরি হারিয়েছিলেন চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবক OpenAi এর সিইও স্যাম আল্টম্যান। আমরা সবাই ট্রল করা শুরু করলাম, মিম বানানো শুরু করলাম। চাকরী হারনোর মাত্র দুই দিনের মাথায় তার আগের থেকেও ভাল জায়গায় চাকরী হয়ে গেল, তিনি মাইক্রোসফটে যোগ দিলেন। সেখানেও তিনি একই ধরনের কাজ করবেন। মাইক্রোসফটে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)–সংক্রান্ত একটি আধুনিক গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেবেন। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, দক্ষ লোকের কাজের অভাব হয় না।
আমরা যারা কাজ পাওয়া নিয়ে হা হুতাশ করি, তারা নিজেদের দিকে একটু তাকাই, আমরা কি আসলেই নিজের কাজে দক্ষ? যদি দক্ষ হয়ে থাকেন, অথচ কাজ পাচ্ছেন না, তবে ধরে নিতে হবে সেই কাজের চাহিদা এখন আর নেই। টাইপ রাইটারে টাইপিংএ প্রচন্ড দক্ষ লোকের এখন আর দরকার নেই। কারন টাইপরাইটারের যুগ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে, সেই যায়গা এখন দখল করেছে কম্পিউটার। যারা চালাক তারা টাইপরাইটীং বাদ দিয়ে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কম্পিউটার শিখে নিয়েছে। তারা এখনো টিকে আছে। যারা নিজ কাজে দক্ষ, সুযোগ তাদের কাছে এমনিতেই ধরা দেয়। বাগানে যদি গোলাপ ফোটে, তবে তার সুরভিতে সেই গোলাপ খুঁজে বের করতে খুব একটা সময় লাগে না। দক্ষ লোকের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম খাটে।
একটা ছোট গল্প শেয়ার করে ব্যাপারটা বুঝাতে পারি। আমাদের ফ্রিল্যান্সিং কমিউনিটির পরিচিত একজন ভাই, তার অফিসের এক দক্ষ এমপ্লিয়িকে কিভাবে খুঁজে পেয়েছিলেন সেই গল্প বলছিলেন। করোনাকালে ভাল একটা চাকরী হারিয়ে বেচারা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছিল। সংসার কিভাবে চালাবে বুঝতে পারছিল না। বাধ্য হয়ে সে ড্রেন পরিস্কারের কাজ নিয়েছিল, আর অন্য সময় রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ করত। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সে ছিল একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার। আমাদের সেই ভাই তার সাথে কথা বলে যখন তার করুন কাহিনী জানতে পারলেন, তখন এক মুহূর্ত দেরি করেননি। তাকে তার অফিসে নিয়ে নেন। ছেলেটা কাজের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক ছিল, সে এখন অনেক ভাল পজিশনে আছে।
৮ বছর আগে একটা লেখা লিখেছিলাম কিভাবে ফাইভারে নিজের ভিডিও দেয়া যায় তার উপর। সেই লেখায় আরো বলেছিলাম ফাইভারের এলগোরিদম অনুযায়ী, কেউ যদি নিজে সরাসরি তার ভিডিও প্রফাইলে বা গিগে দেয়, তবে বায়ারের বিশ্বাস অর্জন করতে সুবিধা হয় এবং কাজ পাবার হারও বাড়ে (এটা এখনো প্রযোজ্য)। আমার সেই লেখা পড়ে একজন ছাড়া কেউ ভিডিও বানিয়েছিল কিনা জানিনা। সেই একজনের গল্পটাই বলি। সে লেখাটা এতটাই সিরিয়াসলি নিয়েছিল যে, সে বিশাল একটা ব্যানার প্রিন্ট করেছিল, সেখানে প্রগ্রামিং এর বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজের নাম ছিল। ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে সে ভিডিও করে সেটা গিগে পাবলিশ করেছিল। এবং কিছু দিনের মধ্যে ফাইভারে কাজও পাওয়া শুরু করেছিল। কিন্তু ফাইভারে তার কপাল ছিল মন্দ, এক খারাপ বায়ার তাকে ব্লাকমেইল করে দিনে পর দিন তাকে ফ্রিতে কাজ করিয়ে নিচ্ছিল। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর, সে বায়ারকে না করে দেয়। বায়ার তাকে হুমকি দেয় দেখে নেয়ার এবং কয়েক দিন পরেই রিপোর্ট করে তারা ফাইভার একাউন্ট ডিজেবল করে দেয়। সে আমাকে তার এই করুন কাহিনী শেয়ার করে। আমি তাকে সাহস দেই, সে আপওয়ার্কে কাজ শুরু করে। সেই খারাপ বায়ার তাকে খুঁজে বের করে আপওয়ার্কেও রিপোর্ট করে। আপওয়ার্ক তার একাউন্ট স্থগিত করে। আমি তাকে সাহস দেই। সে সাপোর্টে সব প্রমাণ সহ বিস্তারিত খুলে বলে। আপওয়ার্ক তার একাউন্ট ওপেন করে দেয়।
সে ভাল কাজ পাচ্ছিল। এক USA বায়ারের কাজ বেশি করছিল। একদিন তারা পিসি হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে যায়। বায়ার তাকে আরো কাজ দেয়ার জন্য মেসেজ করেছিল। সে বলেছিল আপাতত সে আর কাজ করতে পারবে না। বায়ার অবাক হয়ে কারন জিজ্ঞেস করেছিল। তখন সে তার পিসি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। এটা শোনার সাথে সাথেই বায়ার তার একাউন্টে ১ হাজার ডলার পাঠিয়ে, দ্রুত একটা পিসি নিতে বলেছিল। শুধু তাই না, তার কাজে খুশি হয়ে, বায়ার তার নিজের ম্যাকবুক উপহার দিয়েছিল। লোক মারফত সেই ম্যাকবুক সে বাংলাদেশে রিসিভ করেছিল। ছেলেটা বায়ার এই আস্থা অর্জন করেছিল কারন সে স্কিল ডেভেলপ করে বায়ারের কাছে নিজেকে দক্ষ হিসাবে তুলে ধরতে পেরেছিল।
কথায় আছে পাকা জহুরির রত্ন চিনতে দেরি হয় না। ঠিক তেমনি ভাবে অভিজ্ঞ বায়ার একজন দক্ষ লোককে ঠিকই চিনতে পারে। যদি দেখেন আপনার বায়ার আপনাকে দিয়ে একবার কাজ করিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, বা আপনার রেগুলার বায়ারের সংখ্যা খুবই কম। তবে ধরে নিতে হবে, আপনার কাজের মান ভাল না, কাজের মান বাড়াতে হবে, নিজেকে আরো দক্ষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই দেখবেন বায়ার একবার আপনাকে দিয়ে কাজ করানোর পরে, শুধু আপনাকে দিয়েই কাজ করাবে। বায়ারেরা সাধারণত দক্ষ কাউকে হাতছাড়া করতে চায় না। দেখবেন বায়ার আপনার জন্য বসে থাকবে। আপনার টাইমলাইন অনুযায়ী মিটীং সেট করবে। আপনার রাত জাগা লাগবে না, বায়ার আপনার জন্য রাত জাগবে। কারন আপনি আপনার কাজে দক্ষ, আর আগেই বলেছি দক্ষ লোকের কাজের অভাব হয় না।