মনে করুন,কেউ আপনাকে বলছে- আপনার ১০,০০০ টাকার মাসিক আয় একটু চেষ্টা করলেই খুব দ্রুত ৪০,০০০ টাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব? – কি, রূপকথা মনে হচ্ছে? এটা কিন্তু আসলেই সম্ভব! সম্ভব বলছি এই কারণে যে অনেকেই এটা করে দেখাতে পেরেছেন।
অনেকে নিজের চেষ্টাতেই পেরেছেন, আবার অনেকে দারুন এক উপায় বা মেথড এর সন্ধান পাওয়ার পরে পেরেছেন। দ্রুত কাজ করার এই উপায় এর আবিষ্কারক দুইজন অসাধারন প্রতিভাধর মানুষ, যাঁরা বিশ্বের বড় বড় কোম্পানীতে প্রোডাক্টিভিটির প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
ব্রায়ান মোরান এবং মাইকেল লেনিংটনের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর গবেষণার ফল এই পদ্ধতি, যেটিকে তাঁরা মলাটবন্দী করেছেন “The 12 week year: get more done in 12 weeks than others do in 12 months” বইয়ে।
যদিও বইটির টাইটেল পড়ে অনেকেরই মনে হতে পারে উপায়টি খুবই জটিল, কিন্তু আসলে এটি খুবই সহজ একটি উপায়। আপনার মাঝে যে গুনগুলো আছে, সেই গুনগুলিকেই একটু ভালভাবে ও পরিকল্পিত উপায়ে কাজে লাগালেই বর্তমানে যা অর্জন করছেন, তারচেয়ে অন্তত ৪ গুন বেশি আউটপুট পাওয়া সম্ভব।
এই বইয়ে লেখকেরা টমাস আলভা এডিসনের একটি উক্তি দিয়েছেন:
“আমাদের সত্যিকার কাজ করার ক্ষমতা যদি পুরোটা কাজে লাগাতে পারি – তবে আমরা নিজেদেরই অবাক করে দেব।“
আপনি কি জানেন-“বেশিরভাগ মানুষের দুটি জীবন আছে, এক- যে জীবন সে এই মূহুর্তে যাপন করছে, দুই- যে জীবন যাপন করার ক্ষমতা সে রাখে।“
অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষই জীবনে যা পায়, তারচেয়ে অনেক বেশি পাওয়ার ক্ষমতা তার আছে। কিন্তু নিজের এই ক্ষমতা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই আসলে উদাসীন। আবার নিজের এই ক্ষমতা সম্পর্কে জানলেও অনেকেই সঠিক উপায় খুঁজে পায় না। ব্রায়ান ও মাইকেল এই দুই ধরনের মানুষের উপকারের জন্যই বইটি লিখেছেন।
এই বইটিতে জোর দেয়া হয়েছে লক্ষ্য নির্ধারণ এবং স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ গুণ দ্রুত সেই লক্ষ্যে কিভাবে পৌঁছানো যায় – তার ওপর। চিন্তা করে দেখুন আপনি যদি জীবনের গতি চার গুন দ্রুত করে নিতে পারেন, তবে আপনার অর্জনের খাতা কোথায় গিয়ে ঠেকবে!
এখান থেকে মুলতে শেখায় যায়- স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা বা Short Term Planning এর ওপর।
আমি যা বুঝেছি তা হলো-: “আপনি যত লম্বা সময়ের জন্য পরিকল্পনা করবেন, তা ততই বেশি অনিশ্চিত হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটি ধারনার ওপর আরেকটি ধারনা চড়ে বসে, এবং তার ওপর আরও আগের কোনও ধারনা চড়ে বসে।এজন্য আমরা যা করবো তা হলো একটি বড় পরিকল্পনাকে ভাগ করে নিয়ে সেই মোতাবেক কাজ করবো একতী সময় বেঁধে দিয়ে। কেননা- আগামী ১২ মাস বা ২৪ মাস আপনার প্রতিদিনের কাজ কি হবে তা নির্ধারণ করা অসম্ভব না হলেও, খুব সহজও নয়।“
আমার এই লেখার সিরিজে আমি মুলত ৭টি সেসন নিয়ে কথা বলব। যেগুলো ব্যবহার করে আপনি এমন পরিকল্পনা করতে পারবেন, যেগুলো অনেক বেশি দ্রুত ফলাফল এনে দেবে। চলুন তাহলে জেনে নিই দ্রুত কাজ করার উপায় গুলো:
০১. দ্রুত ও সেরা কাজ করার জন্য জরুরী আটটি উপাদান রপ্ত করা
০২. ভবিষ্যতের এমন একটি ছবি মনের মাঝে রাখুন, যা আপনাকে প্রতি মূহুর্তে অনুপ্রাণিত করবে
০৩. ১২ সপ্তাহের লক্ষ্য ঠিক করুন
০৪. লক্ষ্যগুলোকে কর্ম পরিকল্পনায় (Action Plans) ভাগ করুন
০৫. নিয়মিত ভাবে কাজ রিভিউ করুন
০৬. সফল ভাবে প্রতিজ্ঞা পূরণের ৪ সূত্র
০৭. কাজের সময়ে শুধুই কাজ করবো কিভাবে
মজার একটা গল্প বলি- আমার ছেলের সাথে সময় কাটাতে চেষ্টা করি সব সময়,কাল কাজের এনার্জী ছিলো না আসরের নামাজের পরে,এজন্য আমি নামাজ শেষে ছেলেকে বললাম ক্যারামবোর্ড খেলবো তার সাথে। এদিকে আমার মাথায় হঠাত এলো যে ওকে বেসিক কিছু জিনিস তো আমি শিখিয়েছি তাই আজ ২ এর ঘরের নামতা শেখাবো। তাই ক্যারামবোর্ডের সব গুটি গুলিকে দিয়ে ২ এর ঘরের নামতা শিখিয়েছি।রাতে বাসায় গেলে ওর আম্মা বলছে- স্কুলে আজ ৭ দিন এই পড়াটা দিয়েছে কিন্তু ওকে তো শেখানো যাচ্ছে না।আজ কিভাবে তুমি ১০ মিনিটেই শিখিয়ে দিলে?
আমার উত্তর- সিম্পল ব্যাপার,নামতা মানেই তো যোগের ব্যাপার সেটাই ওকে বোঝানো হয়েছে,ও যোগ পারে কিন্তু এখনো গুন তো বোঝে না।তোমরা গুন দিয়ে শিখিয়ে দিতে চেয়েছো আর আমি যোগ দিয়েই।
এই কাজটা কিন্তু এই বই পড়ার ফল।