বিজনেসে সব সময় একই আউটপুট আশা করাটা বোকামি

ফেসবুকে বলেই শুধু নয়,যেকোন বিজনেস করার ক্ষেত্রে বা মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে সবসময় একই ধরনের আউটপুট আশাকরা যায় না।
সেখানে ফেসবুক নিয়ে কিছু জিনিস আপনার মাথাতে গেঁথে নেয়া ভালো।
ফেসবুক আমার-আপনার নিজস্ব কোন প্লাটফর্ম নয়, তাই নিজের মনের মত করে বিজনেস বা ফেসবুক ব্যবহার করতে পারব না আমরা। কারণ আমরা একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ যা ফেসবুকের দ্বারাই তৈরি করা।
ঠিক তেমনি গুগল বা ইউটিউবও একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানে বিজনেস করতে গেলে,আপনাকে তাদের নিয়ম মানতে হবে এবং এলগরিদম বুঝতে হবে, না হয় ফেইসবুকে বিজনেস ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও বিজনেস করতে হবে। মনে রাখা জরুরী যে, আপনি যেখানেই যাবেন না কেন, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে থাকতে হবেই।
এদিকে আমাদের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে, দুঃখের বিষয় হলো- আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই এই বিষয়গুলো বুঝতে চাইনা কিংবা বোঝার ব্যাপারে আগ্রহীও নয়।
“ফেসবুকে বিজনেস করতে চাই, সেল বাড়াতে চাই। চলেন বুস্ট করি।” এইটুকু হচ্ছে আমাদের দেশের বেশির ভাগই উদ্যোক্তার ডিজিটাল মার্কেটিং বা ফেইসবুক মার্কেটিং এর কনসেপ্ট। কিন্তু দিন যায় বছর যায় তারপরেও এই ধারণা মধ্যে আঁটকে থাকলে কীভাবে আপনার বিজনেসকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন?
ফেসবুকে প্রফেশনালি বিজনেস করতে হলে আপনাকে একটা ইকোসিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। দেখুন, আপনি যখন অফলাইনে শো-রুম চালু করেন এক্ষেত্রে সবার আগে আপনি কী কী কাজ করেন? নাম বা প্রোডাক্ট সিলেকশন করেন, ব্যানার ও লোগো ডিজাইন করেন, দোকানে এডভান্স পেমেন্ট করেন, দোকান ডেকোরেশন করেন, এরপর প্রোডাক্ট শোকেস করেন ইত্যাদি। এরপর শুভদিন দেখে শো-রুম উদ্বোধন করেন।
এদিকে অনলাইন বিজনেস এর ক্ষেত্রে এগুলো কিছুই করতে রাজি নই বরং ১০ ডলারে লক্ষ্য টাকার সেল আশা করেন!
আপনি যখন সুপারশপে যাবেন, তখন একই প্রোডাক্টের অনেকগুলি ব্রান্ড থাকলেও,আপনি তার মধ্যে একটি ব্রান্ডকে কিনে নেন। কারন, আপনি ঐ ব্রান্ডকে চিনেন বিধায়, ঐ ব্রান্ডের প্রোডাক্টটা চোখ বন্ধ করে নিয়ে ফেলেছেন। বাকি দুই ব্রান্ডের প্রোডাক্টও অনেক ভালো ছিল কিন্তু আপনি তাদেরকে চিনেন না বিধায় ঐ প্রোডাক্ট কিনেন নাই। তাহলে অনলাইন বিজনেস এর ক্ষেত্রে আপনার অডিয়েন্স যখন আপনাকে চিনেনা তখন কীভাবে আপনি লাখ লাখ টাকার সেল আশা করেন?
আপনি সুপারশপে গিয়ে আপনার জানা ব্রান্ডের প্রোডাক্ট টি ক্রয় করেছেন। এটাই হচ্ছে Brand awareness. তারা আমার-আপনার মধ্যে তাদের প্রোডাক্ট নিয়ে ভালোভাবে সচেতনতা তৈরি করেছেন, আমাদের কাছে ভালোভাবে Rach করেছে এবং দিনশেষে আমাদেরকে তাদের প্রোডাক্ট কেনার জন্য ইন্টারেস্টেড বা Engaged করেছে।
আপনি কি ফেসবুক মার্কেটিং করার সময় কখনও আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে Brand awareness করেছেন?
করেছেন হয়তো কিছু মানুষ, তবে সেটা ৫-৬%। বাকিরা পেজ খুলে সাথে সাথে get more Message দিয়ে ধুমায়ে বুস্ট করে। মার্কেটাদের ফোর্স করে, মার্কেটাররা বুঝালেও বুঝে না।
আমরা জানি, ফেসবুক মার্কেটিং এর প্রফেশনালি তিনটি ধাপ-
  • Brand awareness
  • Consideration &
  • Conversion
ফেসবুকে প্রফেশনালি মার্কেটিং করতে হলে কিংবা সাসটেইনেবল বিজনেস তৈরি করতে হলে আপনাকে ঐ তিনটি স্টেপ পার করতে হবে। তবে দুঃখের বিষয় এই ধাপ গুলো সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনেকের
– সময় থাকে না, ধৈর্য্য কম
– বাজেট থাকে না
– ১/২ সপ্তাহে বা ১ মাসে সব সম্পন্ন করতে চাই
যারা সবসময় সেলস নিয়ে চিন্তা করেন, আপনারা কি কখনও এই তিনটি স্টেপ পার করেছেন? করেছেন হয়তো ৫-৬%। এজন্য বড় বড় কোম্পানি গুলো এসব স্টেপ পার করে ভালো মানের সেলস জেনারেট করে ফেলেন। আর আপনারা বলেন, আমাদের কেন হলোনা?
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে, যখন সম্মানিত কাস্টমার বা উদ্যোক্তাদের এসব বিষয়ে আগে বুঝিয়ে তারপর কাজ করতে বলি তখন ১০০ জনের মধ্যে ৫ জন হয়তো রাজি হয় কিংবা আগ্রহী হয়। বাকিরা উপরের উদাহরণের মতো। এজন্য আমি নিজেই আমার এজেন্সি থেকে প্রতিদিন অসংখ্য কাজ বাদ দিয়ে থাকি।
একটা পোষ্টে বলেছিলাম- আমি ৩০ জনকে নিয়ে কাজ করতে চাই।এসেছিলেন ২০০ মত,নিলাম ৫০ জনকে কিন্তু একটিভ থেকেছেন কিংবা সব শুনেছেন এমন লোকের সংখ্যা ৫ জন ও নয়।সত্যিকারের বিজনেস করে বড় হতে চাওয়ার মানুষ অনেক হলেও, সেটার লক্ষ্যে ছুটে চলতে চাওয়ার মানুষের অভাব বড্ড।

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *