একটা গ্রামে কর্মনন্দ আর ভাবানন্দ নামে দুই যুবক বাস করত । তারা দুজনেই বেকার । দিনমজুরের কাজ ছাড়া গ্রামে আর কোনো কাজই তারা দেখছে না । এইদিকে নব বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে দুজনের একই রকম পারিবারিক অবস্থা । ভিন্ন মানসিকতার হলেও দুজনের একটাই সাধারণ সমস্যা , আর সেটা হলো কী করে টাকা রোজগার করা যায় ।
এই সব ভাবতে ভাবতে ভাবানন্দ এর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল । সে কর্মনন্দকে বলল দুজনে মিলে যদি একটা করে গাভী কেনা যায় , তাহলে কেমন হবে । গাভীর দুধ বিক্রি ক’রে কিছু টাকা পাওয়া যাবে । আর গাভীর বাচ্চাও হবে , ফলে গাভীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে । দুধও বেশি বেশি হবে । আর এভাবে দুজনই একদিন অনেক টাকার মালিক হয়ে যাব । গাভীর সংখ্যা যখন বাড়বে , তখন অনেক লোক রাখবে দেখাশুনার জন্য ফলে কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হবে —-এভাবে দুজনই একদিন ধনী হয়ে উঠবে ।
এভাবে ভাবানন্দ তার ভাবনার কথা কর্মনন্দকে জানায় । এই প্রস্তাবটি কর্মনন্দেরও খুব ভালো লাগে । সেও প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায় । তারা দুজনে কথা পাক্কা করে ফেলে । খুব আনন্দ আর উদ্দীপনা নিয়ে দুজনেই বাড়ি যায় । দুজনেই তাদের এই উদ্যোগের কথা তাদের নিজেদের স্ত্রীকে জানায় ।
কর্মনন্দের স্ত্রী সব শুনে খুব আনন্দের সঙ্গে তার গয়না খুলে স্বামীর হাতে দিয়ে বলল ” খুব ভালো পরিকল্পনা , আমার গয়না বিক্রি করে গাভী কেনো । যখন বেশি বেশি রোজগার হবে , গয়না কিনতে আর কতক্ষন । ” স্ত্রীর কথায় গর্বিত হয় কর্মনন্দ ।
ঐদিকে ভাবানন্তাদের পরিকল্পনার কথা স্ত্রীকে জানালে তার স্ত্রী বলে , ” দেখো একে তো আমাদের কিছুই নেই । খালি কয়েকটা মাত্র গয়না সম্বল । আর তা বিক্রি করে গাভী কিনবে । কিন্তু যদি গাভীটি মরে যায তখন কি হবে ”
ভাবানন্দের মনেও খটকা লাগে । মনে হয় তার স্ত্রী ঠিকই বলছে । কারণ গাভী যদি মরে যায় , একমাত্র সম্বল গয়নাগাটিও যাবে — গাভী ও যাবে । এত ঝুঁকি নেওয়াটা উচিৎ হবে না ।
পরের দিন দুই বন্ধুর দেখা হলে ভাবানন্দ বলে ” ভাই কর্মনন্দ , গাভী যদি মরে তাহলে…. ? “
কর্মনন্দ তখন বলল , ” এত নেগেটিভ চিন্তা করছিস কেন ? কেনার আগেই গাভীর মরার কথা ভাবছিস ? আর গাভী কোন কারণেই বা মরতে যাবে ? ”
ভাবানন্দ একই সুরে হতাশ জবাব দেয় , ” তা তো বুঝলাম যে গাভী মরবে না । কিন্তু ধর , যদি মরে ? তাহলে কী হবে ? “
কর্মনন্দ অত্যন্ত স্নেহ ভ’রে জবাব দেয় , “তোর ‘তাহলে’র জবাব আমার কাছে নেই । ”
ভাবানন্দ বলে ” এই তাহলে’র জবাব আমার কাছে আছে । আমরা বরবাদ হয়ে যাবো । সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো । “
কর্মনন্দ বলে- দেখ আমাদের ভাবা উচিত অবশ্যই কিন্তু এখানে আমাদের জেতার ও সুযোগ আছে,আর সেটা নিতে না পারলে তো জেতার কোন সুযোগ সৃষ্টিই হবেনা।
অত্যন্ত বেদনাহত হয়ে কর্মনন্দ , ” কিন্তু তুই কেন বার বার ভাবছিস যে গাভীটা মরে যাবে …..একটু অন্যভাবে ভেবে দেখ , গাভীটা দুধ দেবে । আমরা বিক্রি করবো । প্রথমে পয়সাগুলো জমাবো । তারপর আরও গাভী কিনবো । অনেক পয়সা হবে যখন , তখন অনেক গয়না কেনা যাবে , বাড়িও বানানো যাবে । এভাবে দুধের বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠব দুজন । ”
কিন্তু ভাবানন্দের ওই এক বুলি এক জিকির ” ব্যবসা টাকা বাড়ি গয়না সব হবে তখনই , যখন গাভীটা বেঁচে থাকবে । ”
এরপর অনেক বোঝানোর পরেও ভাবানন্দ তোতাপাখির মতো বলতে থাকে গাভী মরার কথা ।
কর্মনন্দ বোঝাতে পারে না শুধু বলে , ” দেখ ভাবানন্দ , ঐরকম ভাবলে তুই কোনোদিনও কোনো কাজ করতে পারবি না । এই ধরণের ভাবনা ঠিক নয় । কারণ তুই আগে অন্ধকার দিকটাই দেখছিস । ” এইভাবে দুই বন্ধুর তর্কের পর কয়েকদিন গেল ।
অনেক কষ্টের পরে-
কর্মনন্দ একাই একটা দুগ্ধবতী গাভী কিনে ফেলে । সে এখন আর দিন মজুরের কাজে যায় না । সকাল থেকে সন্ধ্যা গাভীর দেখাশুনা করে , দুধ দোয় । প্রথম কিছুদিন দুধের গ্রাহক খুঁজতে , গাভীর পরিচর্যা করতে কষ্ট হয়েছিল । ধীরে ধীরে কর্মনন্দ এই কাজগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে লাগলো।
আর দিনমজুরের কাজের শেষে ভাবানন্দ রোজ তার কাছে আসতো , আর কর্মনন্দের সংঘর্ষ করার , পরিশ্রমের বিষয়টি দেখতো । আর ভাবতো তাদের দিনমজুরের জীবন কত ভালো ছিল । রোজ সকালে কাজে যেত আর বিকেলে ফিরে এসে সন্ধ্যায় কাজ কর্মহীন আড্ডা দিতে পারত । এখন পিন্টুর জীবনে আড্ডা দেবার অবসর নেই । তার উপর এত ঝুঁকি নিয়ে কেন যে গাভী কিনলো । যদি মরেই যায় । সবই যাবে তার ।
আর ঐ দিকে কালো গাভীর মধ্যেই জীবনের আলো দেখতে পায় কর্মনন্। সে দ্বিগুন উৎসাহে কাজ করতে লাগলো । এটা ঠিক যে তার কাছে এখন অবসর নেই । কিন্তু সুন্দর ভবিষ্যতের কল্পনায় সময় নষ্ট করতে সে রাজি নয় ।
এইভাবে দিন যায় । আস্তে আস্তে তার গ্রাহক বাড়তে থাকে । গাভী বাড়তে থাকে । কাজের লোকও বাড়তে থাকে । গাভী ও তার মরে নি ।অন্যদিকে ভাবানন্দ গাভী মরার কথা ভাবে আর একইভাবে দিনমজুরের কাজ করে যায় । এদিকে কর্মনন্দ ধীরে ধনী হতে থাকে ক্রমশঃ।
এই গল্পের ভেতরের বিষয়টিকে যদি আমরা বুঝতে পারি , তাহলে আমাদের জীবনে পদক্ষেপ নেবার শিক্ষাটি অর্জন করতে পারবো ।
ভাবানন্দ কারা আর কর্মনন্দ কারা সেটা জানান কমেন্টে।
যা শিখলাম এই গল্প থেকে-
১. কিন্তু , যদি , তবে ইত্যাদির জালে আটকে পড়তে নেই ।
২. নেতিবাচক ভাবনা কখনোই মাথায় আনতে নেই ।
৩. নো রিস্ক নো গেইন । ঝুঁকি নিতে পারলেই জীবনে সাফল্য আসবে ।