সকালের শুরুটা কেমন হওয়া উচিত
কথায় আছে, “Morning shows the day” দিনের শুরুটার উপরই কিন্তু নির্ভর করে পুরো দিনটা কেমন যাবে। আপনি ও নিশ্চয় আমার সাথে একমত হবেন।
দ্বিমত হলেও সমস্যা নেই। কখনও কি খেয়াল করেছেন,সকালটা খারাপ ভাবে শুরু হলে পুরো দিনটায় কিন্তু খারাপ হয়ে যায়। মানসিক ও শারীরিক কোনরকম প্রশান্তিই পাওয়া যায় না। সকালের কয়েকটা মিনিটের কাজের উপরই নির্ভর করে আপনার পুরো দিনটি কতটুকু সুন্দর ও প্রোডাক্টিভ হবে।
তবে দিনের শুরুটা সঠিকভাবে করা খুব সহজ মনে হলেও অতটা সহজ নয় যতটা আমরা ভেবে থাকি। এমন হলে আমাদের সবার প্রত্যেকটা দিনই হতো পারফেক্ট। কিন্তু কিছু সহজ অভ্যাস আপনার দিনটিকে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই কাজ গুলো করতে আপনার বড়জোর ১৫ মিনিট সময় লাগবে। আসুন সকালের শুরুটা আমরা কীভাবে করতে পারি তার কিছু সহজ টিপস জেনে নিই।
সময়ের আগেই উঠুন ঘুম থেকে
অনেকেই তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠে কোনভাবে তৈরি হয়েই কাজে বেরিয়ে যান। সকালের নাস্তা করার ও সময় পান না। সেখানে নিজের বিছানাটি তো গোছানো সম্ভবই হয় না। সকালটা যদি এমন হয় পুরো দিনটায় মেজাজ খিটখিটে থাকে। সারাদিন কাজ শেষে যখন বাসায় ফিরে এই অগোছালো ঘরটি দেখেন তখন নিশ্চয় আর কিছুই ভালো লাগে না। এইভাবে সকাল শুরু করে আমার জানা মতে দিন কখনই ভালো যায় না। তাই ঘুম থেকে এমন সময় উঠুন যাতে নিজের জন্য হাতে কিছুটা সময় রাখতে পারেন।
সব ধরনের ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন
ঘুম ভাঙার পর পরই আমরা প্রথম যে কাজটি করি তাহলো স্মার্টফোনটি হাতে নিই আর ইমেইল চেক করি, না হয় সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং করি। এতে নানারকম নেতিবাচক খবর বা চিন্তাভাবনা দিয়ে দিনটা শুরু হয়। তাই ঘুম থেকে ওঠার পর অন্তত ১৫ মিনিট সবরকম টেকনোলজি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
হাসুন ও ইতিবাচক চিন্তা করুন
আপনি বিছানা ছেড়ে ওঠার আগেই কিছুক্ষণ হাসার চেষ্টা করুন। কি অবাক হচ্ছেন? আপনি যখন হাসেন তখন আপনার শরীরে ডোপামিন, সেরোটনিন, এন্ড্রোফিন নামক কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়। এসব হরমোন আমাদের মুড ভালো রাখে, শরীরকে রাখে তাজা এবং হার্ট রেট কমায়। তাই দিনটি শুরু করুন একটি সুন্দর হাসি দিয়ে। সাথে কিছু পজেটিভ চিন্তা করুন। মনে মনে আজকের দিনটির জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। গবেষনায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস স্ট্রেস হরমোন কমায়, মুড ভালো রাখে। তাই সকালে ঘুম ভাঙার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস করুন।
পানি পান করুন
বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস পানি পান করুন। সারারাত ঘুমের পর এক গ্লাস পানি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড করবে। যদি হালকা উষ্ণ পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করেন তা আপনার শরীরের টক্সিন দূর করে পরিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করবে। তাই ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের পর এক গ্লাস পানি পান করা আপনার শরীরের জন্য খুব জরুরি।
ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন
হতে পারে এটি ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম, ইয়োগা বা জগিং। সকালে হাতে কিছু সময় রাখুন শুধুমাত্র ব্যায়াম করার জন্য। শরীরকে সারাদিনের জন্য প্রস্তুত করতে এর চেয়ে অতুলনীয় পন্থা আর নেই। সারারাত ঘুমের পর শরীরের পেশীকে সচল করতে ব্যায়াম খুব জরুরি। ইয়োগা আপনার শরীরের সাথে মনের সংযোগ স্থাপন করে এবং মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
মেডিটেশন
মেডিটেশন শুনেই আমরা ভাবি অনেক সময়ের ব্যাপার এবং বোরিং একটা ব্যাপার। এই ভেবেই আমরা এই ধাপটি বাদ দেই। কিন্তু মাত্র এক থেকে দুই মিনিটেও আপনি আপনার মেডিটেশন শেষ করতে পারেন। এই দুই মিনিটের মেডিটেশন আপনাকে মানসিক প্রশান্তি তো দিবেই সাথে যেকোন কাজে মনযোগ বৃদ্ধি করবে।
একটি আরামদায়ক গোসল নিন
রাতের যত্ন তো নিয়েছেন, তাই বলে সকালের গোসলটিকে কম গুরুত্ব দেয়া যাবে না। দিনের শুরুটা একটি আরামদায়ক গোসল দিয়ে শুরু করলে দেখবেন সারাদিন একটি ফ্রেশ অনুভুতি কাজ করছে। সকালে গোসল করা যাদের পক্ষে সম্ভব নয় তারা অন্তত দাঁত ব্রাশ করে ভালো কোন ক্লিঞ্জার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। সাথে হাত ও পা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজের লাগাতে ভুলবেন না।
স্বাস্থ্যকর ও ভারী নাস্তা
অন্য বেলার খাবারের চেয়ে সকালের নাস্তাটি হওয়া চায় ভারি ও স্বাস্থ্যকর। সারারাত না খেয়ে থাকার পর আমাদের শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যায়। মস্তিষ্কের সচলতার জন্য গ্লুকোজ খুব জরুরি। সকালের নাস্তা মস্তিষ্ককে সারাদিনের জন্য তৈরি করে। তাই কোনভাবেই সকালের নাস্তা বাদ দেয়া যাবে না।
এবার আগের রাতে তৈরি করে রাখা কাজের লিস্ট অনুযায়ী কাজ শুরু করুন। অ্যাপেলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের একটি সাক্ষাৎকারে দেখেছিলাম তিনি বলেছেন, প্রতিদিন সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেকে একটি প্রশ্ন করেন। তা হলো, “যদি আজ আমার জীবনের শেষদিন হতো তাহলে কি আমি তাই করতাম যা আমি আজ করার প্ল্যান করেছি?” এই প্রশ্নটি নিজের জীবনে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। আপনার প্রতিদিনের কাজের লিস্ট তৈরিতে এটি সাহায্য করবে।