আমার জন্মের পরেই আমি কেঁদে উঠেছিলাম যা থেমেছিলো একটা হাতের স্পর্শে,পরে জেনেছিলাম কিংবা বুঝেছিলাম এই মানুষটার সাথে আমার একটা সম্পর্ক আছে।আমার জন্মের পরে আমার জন্য কে কি করেছিলো আর ঠিক কতটা করেছিলো তার উপরে ডিপেন্ড করেই আমি বুঝেছিলাম কার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক।
আমি আপনি সকলেই জন্মগত ভাবে কিছু সম্পর্ক পেয়ে যায়,যেমন- বাবা-মা,ভাই-বোন,চাচা-চাচী,দাদা-দাদী,মামা-মামী,নানা-নানী,ফুফু-ফুফা,খালা-খালু ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু এগুলি শুধুই নামের সম্পর্ক কারন কে আপনার কতটা আপন সেটা নির্ভর করে ঐ দ্বায়িত্ব পালনের উপরেই।
জন্মগত ভাবেই আমার নানাভাইকে আমি দেখিনি তাই এই নামে যে কেউ থাকে সেটা বুঝতে আমার বেশ সময় লেগেছে। এদিকে আমার দাদাকে পেলেও উনি জীবনে কোন দ্বায়ত্বই পালন করেননাই আমার জন্য তাই আমার চোখের সামনেই দাদাকে পেলেও বুঝিনি দাদার আদর আর ভালোবাসা কি জিনিস।
আমার ছেলের জন্মের পরেও তার মামা ও নানাকে দেখিনি,তাসরীফ তো জানবেও না যে নিজের একটা মামা থাকার কি আনন্দ,কতটা ভরসা তৈরি হওয়া ঐ নানুবাড়িতে।ছেলের মামা নেই তাই মামীও নেই,কিন্তু মামাতো ভাই আছে।
কি বুঝলেন?
সম্পর্ক আছে কিন্তু দ্বায়িত্ব নেই তাই সম্পর্কেও মরিচা পড়ে গেছে।
পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজার হাজার কিংবা লক্ষ লক্ষ মানুষ বাবা-মা হচ্ছেন,আনব্দে মেতে উঠছেন আবার এর মাঝেই কিছু বাবা-মা তাদের সন্তান রেখে যাচ্ছেন ডাষ্টবিনের মধ্যে।কিভাবে বলবেন সম্পর্ক আগে?
এমন অনেক বাচ্চার বাবাই আছেন যারা সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্ব পালন না করেই নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত আছেন,আমার চোখের সামনেই এমন সংখ্যা কম নেই এবং আমি জানি যারা দ্বায়িত্বের আগে সম্পর্ক বলে গলা ফাটাচ্ছেন তাদের চোখের সামনেও আছে এমন উদাহরন।
প্রতিদিন,প্রতিটি মুহুর্ত্বেই শুধুমাত্র সঠিকভাবে দ্বায়িত্ব পালনের অভাবে ডুকরে কান্না করছে কতশত মানুষ ঐ চার দেয়ালের মধ্যে।যার ১০% প্রকাশিত হলেও ৯০% রয়ে যায় আড়াঁলেই।
রাঁতের আধারে এই শীতেই যদি কখনো রাস্তায় চলে থাকেন তাহলেই বুঝবেন দ্বায়িত্ব পালনের অভাবে তৈরি হচ্ছে কত টোকাই।সঠিক দ্বায়িত্ব পালনের অভাবে নষ্ট হচ্ছে কত জীবন।এই শীতে যিনি লেপে কিংবা কোম্বলের মধ্যে শুয়ে স্বপ্ন দেখেন আকাশ ছোঁয়ার তিনি নিশ্চয় বুঝবেন না দ্বায়িত্ব কি জিনিস।
তিনি বুঝবেন- আজ আমার ম্যারেজডে, আজ কেন আমি সময় পাবোনা? আজ আমার জন্মদিন,আজ কেন আমি সময় পাবোনা? আজ আমার প্রোপোজ ডে,আজ কেন আমি সময় পাবোনা?
কিন্তু ভাই/বোন- এই জন্মদিন,ম্যারেজডে প্রপোজ ডে এসব মনে না থাকাটা অন্যায় না,একটা মানুষ এটা ভুলে যেতেও পারে তাই বলে সে সম্পর্ককে অস্বীকার করেনা বরং আমরাই আবার এই বেলাতে বলি তিনি দ্বায়িত্ববান নন!
আসল ব্যাপারটা কি জানেন?
স্বপ্নে কিংবা কল্পনায় আপনি গাছ তলায় সংসার করতে পারেন কিন্তু বাস্তবে আপনি সমাজ রক্ষা না করে একটা ড্রেস ও পরেন না।হ্যাঁ খারাপ শোনালেও এটাই বাস্তব।
আর এই নিদারুন বাস্তবতায় কোন নারীকেই ফেলতে পারেনা বলেই দ্বায়িত্ববান পুরুষগুলি দিনের পর দিন রাতের পর রাত নিজের জিবনকে কোরবানি করে টেনে চলেছে সংসার।আর দিন শেষে তারাই নাকি সম্পর্কের মুল্য বোঝেনা।
মুল কথা হলো- যারা দ্বায়িত্ববান তাদের নিয়েই চলে কম্পলেইন হোক সেটা পুরুষ কিংবা নারী।
পৃথিবীতে একটাও নারী কিংবা পুরুষ আপনি খুঁজে পাবেন কিনা সন্দেহ যিনি কিনা একজন কেয়ারিং ও দ্বায়িত্ববান পার্টনার চান না।
অথচ যে কেয়ারিং আর যত্ন দেখে আপনার মাঝের ভালোলাগা কাজ করে আর ভালোবাসার সৃষ্টি হয়,দিনেত শেষে ঐ মানূষটাই সম্পর্কের মুল্যায়ন করেনা বলে খেতাব পাই।
আসলে দ্বায়িত্ব আর সম্পর্ক নিয়ে যদি আপনি লেখেন কিংবা বলেন তাহলে কোনদিন এই যুক্তি তর্ক শেষ হবেনা।আমিও কারো সাথেই কোন যুক্তি তর্কে যেতে চাইনা। বেশ কিছুদিন মাথার মধ্যে এটা ঘুরছে তাই আজ একটু সময় নিয়ে লিখলাম।
দিনের শেষে কথা একটাই, সেটা হলো- পৃথিবীতে আপনি জন্মগতভাবে যত সম্পর্ক পেয়েছেন সেগুলিসহ আপনার জীবনের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্টি হওয়া সকল সম্পর্কই তৈরি হয় দ্বায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই।
দ্বায়িত্ব পালন ব্যাতিরেকে কোন সম্পর্কই আসলে পূর্নতা পায়না।
নিজেই ভেবে দেখুন – কাদের গুরুত্ব আপনার জীবনে কতটা একই সম্পর্কের তো অনেক মানুষ থাকে।