আপনার কি মনে হয় যে মৃত্যুর আগে আপনি যা যা করতে চান – তার সব করে যেতে পারবেন? আপনার কি মাঝে মাঝে দু:শ্চিন্তা হয়, যে আপনি জীবনের লক্ষ্য আপনি পূরণ করে যেতে পারবেন না? আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য কি আপনার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে?
বেশিরভাগ মানুষই তাদের সময়কে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, তা বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়ে। বর্তমান সময়ে সারাদিনই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এর নোটিফিকেশন আসতে থাকে। সেইসাথে নানান ধরনের মানুষের সাথে দেখা করা, বন্ধুদের সময় দেয়া লাগে। আর প্রায়ই কোনও না কোনও উৎসব-উপলক্ষ তো লেগেই আছে। একটু পরপরই নানান কারনে আপনার ফোনে কল আসছে। আর আমরা যা অনলাইন বেইজ কাজ করি তাদের জন্য তো ব্যাপার টা আরো কঠিন।
অফিসে কাজের সময়েও এসবের থেকে মুক্তি নেই। অনেক কাজের ক্ষেত্রেই একের পর এক ই-মেইল আসতে থাকে। ক্লায়েন্ট, সহকর্মী, বস – সবাই আপনার কাছে কিছু না কিছু চায়। আলাদা আলাদা কাজের জন্য আপনাকে আলাদা আলাদা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। অন্যের কাজ করতে করতে আপনি হাঁপিয়ে ওঠেন। নিজের জন্য যে একটু সময় বের করে নিজের কাজটি করবেন – সেই সময় আর আপনার হাতে থাকে না।
কিন্তু সত্যি কথা বলতে, আপনি যা ভাবেন, আপনার হাতে তারচেয়েও বেশি সময় থাকে। তবে আমরা অনেকেই এটা বুঝতে পারি না। এত ব্যস্ততার মাঝেও নিজের কাজ করার জন্য আপনার সময় থাকে। শুধু প্রয়োজন এই সময়কে কিভাবে কাজে লাগাবেন, তা বুঝে নেয়া। আপনার হাতে যতটা সময় আছে, লক্ষ্যপূরণের জন্য সেই সময়টুকুই যথেষ্ঠ। আপনাকে শুধু সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। তবে সাধারন ভাবে দেখলে আপনি ব্যাপারটা বুঝবেন না। আপনাকে একটু “অন্যভাবে” আপনার দৈনন্দিন জীবনের দিকে তাকাতে হবে। আর এই কাজটি সহজ করার জন্যই আমরা আজ সময়ের সেরা ব্যবহার নিশ্চিত করার কিছু “অন্যরকম” উপায় আপনার সামনে তুলে ধরব। চলুন, শুরু করা যাক-
শুধুমাত্র নিজের জন্য থাকুক একটি দিন
এই ব্যাপারটি দিনে দিনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যারা সত্যিই নিজের জন্য কিছু করতে চান, তারা এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে দারুন উপকার পাবেন। আমরা অনেক সময়েই মাঝেমধ্যে সবকিছু থেকে দূরে গিয়ে শুধুই নিজের সাথে একটি দিন কাটাতে চাই। অনেকে সত্যি সত্যি করেও থাকি। কিন্তু খুব কম মানুষই ব্যাপারটির গুরুত্ব বুঝে নিয়মিত ভাবে এই কাজটি করেন। আপনি যদি প্রতি মাসে মাত্র একদিন (হতে পারে প্রতি মাসের ৩য় শুক্রবার) সম্পূর্ণ নিজের জন্য একটি দিন রাখেন, তাহলে এই দিনে আপনি অনেক কিছু করে ফেলতে পারবেন।
এই দিনটিতে আপনি কারও সাথে যোগাযোগ করবেন না। অবশ্য যদি পার্টনারশিপে কিছু করেন, তবে ভিন্ন কথা। নিজের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পনা করবেন, এবং কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন – তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবেন। কোনও প্রকার বিনোদন ও আড্ডার চিন্তা এই দিনটিতে মাথায় আনবেন না। শুধুমাত্র আপনার একান্ত লক্ষ্য অর্জনের পেছনে এই দিনের পুরোটা ব্যায় করবেন।
আপনার হয়তো মনে হচ্ছে মাসে মাত্র একদিন বা দুই দিনে কি এমন হবে? কিন্তু এই পদ্ধতিতে অনেকেই অভাবনীয় ফলাফল পেয়েছেন, আপনি চেষ্টা করলেই বুঝবেন যে একটি দিনে কত কি করা সম্ভব। এই একটি দিন যদি আপনি ঠিকমত কাজে লাগাতে পারেন, তবে পুরো এক সপ্তাহের কাজও গুছিয়ে ফেলা সম্ভব। শুধু মনে রাখবেন, কোনও অবস্থাতেই যেন এই দিনটির একটি মিনিটও আপনি ছাড়া অন্য কারও পেছনে খরচ না হয়।
প্রতিদিন একান্ত কাজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন
নিজের পরিকল্পনা করা এবং এর অগ্রগতির ওপর নজর রাখার জন্য প্রতি মাসে/সপ্তাহে একটি দিন রাখাটা খুবই লাভজনক। কিন্তু সেইসাথে প্রতিদিনই আপনার একান্ত লক্ষ্য পূরণের জন্য কিছুটা সময় বের করে কাজ করাটাও জরুরী। প্রতিদিন দুই-এক ঘন্টা আলাদা করে শুধুই নিজের জন্য কাজ করলে সেটা একটু একটু করে আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নেবে। “The 12 week year” বইয়ের লেখক ব্রায়ান মোরান এবং মাইকেল লেনিংটন এর পরামর্শ অনুযায়ী, জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে চান, এমন প্রতিটি মানুষের উচিৎ সকাল সাড়ে সাতটা বাজার আগে অন্তত ৩০ মিনিট নিবিড় ভাবে একান্ত কিছু কাজ করা।
প্রযুক্তিকে দূরে রাখুন
এই কথাটি আমার অনেক লেখায় এসেছে দেখে অনেকেই বলেন-অনলাইন বিজনেসে আবার এসব থেকে দূরে থাকবো কিভাবে?তাদের জন্য আবার বলছি- প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে, একথা যেমন সত্যি; অতিরিক্ত প্রযুক্তি-নির্ভরশীলতা আমাদের সহজাত পরিশ্রম করার ক্ষমতা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতাও কমিয়ে দিচ্ছে। হয়তোবা আপনার কাজটাই প্রযুক্তি নিয়ে, তারপরও নিশ্চিত করুন যেন আপনি ‘সঠিক’ প্রযুক্তির পেছনে সময় দিচ্ছেন।
হ্যাঁ, আপনার সামনে যে কম্পিউটার বা ফোনটি আছে, সেটা দিয়ে আপনি চাইলেই যে কোনও তথ্য পেতে পারেন, যে কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, নিজের সম্পর্কে পুরো পৃথিবীকে জানাতে পারেন। কিন্তু এত সুবিধার সাথে কিছু ক্ষতিও কিন্তু নীরবে হয়ে যাচ্ছে। আমরা অনেক বেশি ঘরকুনো হয়ে যাচ্ছি। আমাদের মেধা কমে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা নিয়মিত সবকিছু গুগল সার্চ করে জানার চেষ্টা করেন, তারা একটা সময়ে গিয়ে ছোট ছোট জিনিসও মনে রাখতে পারেন না। কারন, মস্তিষ্কে এই মেসেজ পৌঁছে যায় যে তার কষ্ট করে কিছু মনে না রাখলেও চলবে।
এমন মানুষদের সাথে সময় কাটান, যারা আপনার মত নন
বিশ্বখ্যাত সেল্ফ ডেভলপমেন্ট কোচ জিম রন বলেছেন- আমরা যে পাঁচজন মানুষের সাথে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাই, নিজেরাই তাদের মিলিত ভার্সন হয়ে যাই। বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তা করুন। কারন আপনি যেসব মানুষের সাথে সময় কাটাবেন, আপনার জীবনে তারা আপনার ধারনার চেয়েও বেশি প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখেন। এই কারনেই বলা হয়, বড় হতে হলে বড় মানুষদের সাথে চলা জরুরী।
আপনি যদি বড় কিছু করতে চান, তবে এমন মানুষদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন, যাঁরা আপনার চেয়ে বড় পর্যায়ে রয়েছেন। মানুষের একটি সহজাত স্বভাব হল, তারা নিজের মত মানুষের সাথে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু এটা হয়তো আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবে, আপনার উন্নতি ঘটাবে না। নিজের থেকে আলাদা ধরনের মানুষের সাথে চলতে পারাটা একটা দারুন যোগ্যতা, আর বিষয়টা চ্যালেঞ্জিংও। প্রথমটায় হয়তো আপনার অস্বস্তি হবে, খারাপ লাগবে – কিন্তু একবার এই বলয় ভাঙতে পারলে আপনি সাফল্যের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন।
চাপমুক্ত থাকুন
বর্তমানে কে কত কাজের চাপ নিচ্ছে, এবং কাজের চাপে কে কতটা বিধ্বস্ত হয়ে আছে, এটা প্রকাশ করা একটা ফ্যাশনের মত হয়ে গেছে। সপ্তাহে যে কয়দিন অফিস – সেই কয়দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেটে নিজেকে বিধ্বস্ত করে ছুটির দিন নিজেকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়ে হয় হৈহুল্লোড় করে নিজের আরও বারোটা বাজাচ্ছে। অথবা, পুরো দিন ধরে মুভি আর সিরিজ নিয়ে পড়ে থাকছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে করে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ও কাজের গতি নষ্ট হচ্ছে।
চাপহীন থাকার অনেক পন্থার মধ্যে একটি হল- ২৫ মিনিট কাজ করে ৫ মিনিটের ব্রেক নিন,এটি অনেক কাজে দেয়।
বেশিরভাগ সময় চাপ নিয়ে কাজ করার ফলে যেটুকু সময় মানুষ অবসর পাচ্ছে, ‘মজা করার’ নামে নিজের দারুন ক্ষতি করে ফেলছে। সেই সাথে একান্ত নিজস্ব কাজের জন্য কোনও সময় রাখতে পারছে না। এই ফাঁদ থেকে বের হতে হলে সব সময়ে সব কাজে চাপ নেয়া বন্ধ করতে হবে। ‘অফিসের চাপ’ কথাটি ভুলে যেতে হবে