আপনার নতুন উদ্যোগ কি স্টার্টআপ, না এসএমই
বাংলাদেশে ‘স্টার্টআপ’ শব্দটা প্রায়ই ‘নতুন উদ্যোগ’-এর একটা প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার হয়। যদিও অনুবাদ করলে স্টার্টআপ-এর অর্থ দাঁড়ায় নতুন ব্যবসা। ধরে নেওয়া যেতে পারে, সব স্টার্টআপই নতুন উদ্যোগ, তবে সব নতুন উদ্যোগ যে স্টার্টআপ, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়।
যেকোনো নতুন উদ্যোগ হয় স্টার্টআপ, নয়তো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বা এসএমই। তবে উদ্যোগটা স্টার্টআপ নাকি একটি এসএমই—এই চিন্তাধারাই প্রভাবিত করবে কোম্পানির ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত, ব্যবসায়িক বিকাশ এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদনের যোগ্যতা।
এসএমই এবং স্টার্টআপের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো একটা এসএমই যা ১০ বছরে করে, একটা স্টার্টআপ সেটা ১ বছরে, অথবা তারও কমে করার স্বপ্ন দেখে। যেকোনো স্টার্টআপ থেকে বিনিয়োগকারীরা সবার আগে যা আশা করে, তা হলো ব্যবসা স্কেল করতে পারার সম্ভাবনা। সে জন্য সবার আগেই প্রয়োজন একটা বড় বাজার বা মার্কেট নিয়ে কাজ করা। বড় অর্থাৎ শুধু কতজন গ্রাহক আছেন তা নয়, বরং মোট কত টাকার ব্যবসা করা সম্ভব, সেটা।
আপনি যে মার্কেটে কাজ করছেন, সেটা বড় নাকি, তা বোঝার একটি উপায় হলো বিনিয়োগ এর বিপরীতে প্রবৃদ্ধি মেপে দেখা। যেমন, আপনি যদি প্রথমবার ১০০ টাকা বিনিয়োগ করে পাঁচজন গ্রাহক পেয়ে থাকেন, দ্বিতীয়বার ১০০ টাকা বিনিয়োগে আপনাকে অবশ্যই সাতজন গ্রাহক পেতে হবে এবং তৃতীয়বার অবশ্যই নয়জন। এ রকম যদি হয়ে থাকে, আপনার প্রতিষ্ঠানটি এমন একটা সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখছে যার বাজার অংশ বেশ বড়।
আরেকটু ভেঙে বলা যায়। ধরুন একটি ব্যাংক, যেটা গতানুগতিক পদ্ধতিতে টাকা জমা নিচ্ছে ও হস্তান্তর করছে। প্রতিটি লেনদেনের জন্য তাদের আলাদা করে কাজ করতে হবে। যত বেশি লেনদেন করতে চাইবে, তাদের তত বেশি মানুষ নিয়োগ করতে হবে। এতে ব্যবসার পরিধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের লোকবল ও খরচ বাড়বে। এবার ধরুন বিকাশ অথবা নগদের মতো প্রতিষ্ঠান। বিকাশ বা নগদের যে প্রযুক্তি রয়েছে, এতে বর্ধিত লেনদেনের জন্য আরও লোকবল নিয়োগের প্রয়োজন নেই। অতএব ব্যবসার পরিধি দ্বিগুণ হলেও খরচ দ্বিগুণ হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তার ব্যবসার পরিধি যত বাড়বে, প্রতি লেনদেনে লভ্যাংশ আরও বেশি বাড়বে।
প্রতিটি উদাহরণেই দেখা যাচ্ছে, একটি স্টার্টআপের স্কেল করার ক্ষমতা অনেক গুণ বেড়ে যায় যদি সেটি প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকে বা একটি ‘টেকনোলজিক্যাল’ সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। তবে শুধু যেকোনো সাধারণ ‘টেক’ ব্যবহার করলেই যে স্টার্টআপটি সফল হবে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই।
তবে বিকাশ অথবা নগদের মতো সংস্থার অপর পিঠ হলো, শুরুর অবকাঠামো দাঁড় করতে যথেষ্ট বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় এবং লাভ করতে হলে ন্যূনতম একটি আয়তনে পৌঁছাতে হয়। এ কারণেই, একটা স্টার্টআপের জন্য প্রথম কয়েক বছর সবচেয়ে জরুরি হলো বিনিয়োগ করে করে বাজার দখল করা, মুনাফা করা নয়। সে কারণেই স্টার্টআপের ক্ষেত্রে প্রথম কয়েক বছর বিনিয়োগের প্রয়োজন অনেক বেশি।
একটি স্টার্টআপ সাধারণত শুরুতেই লভ্যাংশ দেয় না। যদি কোনো বিনিয়োগকারী শুরুতেই আশানুরূপ লভ্যাংশ পাওয়ার আশা করে থাকেন, তাহলে তাঁর অন্য কোথাও বিনিয়োগ করাই ভালো।
এসএমইর ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই লাভ করা সম্ভব, যাতে করে অল্প কিছু বছরের মধ্যেই কোম্পানি লাভজনক হয়ে যেতে পারে, আর বিনিয়োগেরও তেমন প্রয়োজন হয় না।
একটি স্টার্টআপ এবং একটি এসএমই—দুটোই নতুন উদ্যোগ হলেও দুটি ব্যবসার ধাঁচ এবং ঝুঁকি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি স্টার্টআপে ঝুঁকি যেমন বেশি, বিনিয়োগের ওপর রিটার্নও অনেক অনেক বেশি। অতএব বিনিয়োগ করার আগে উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীর ভালোমতো বুঝে নিতে হবে উদ্যোগটি কোন ধাঁচের, এতে ঝুঁকি কেমন, এবং রিটার্নের সম্ভাবনা কেমন। নইলে পরে ব্যবসার পরিচালনা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, যা কারোর জন্যই কাম্য নয়।
আগে বুঝে নিন পরে সিধান্ত, তাই পড়ালেখার বিকল্প নেই।
বিঃদ্রঃ আর্টিকেল টি বানাতে সাহায্য পেয়েছি প্রথম আলো থেকে।