নিচের গল্পটি পড়ুন এবং আপনার কি কি শেখার আছে এই গল্প থেকে সেই আলোকে লিখুন।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সাদিকা তাসনিম মৃদু। পাশাপাশি সরকারি চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছিলেন
। করোনার সময় অফিস বন্ধ, পরীক্ষারও কোনো খোঁজ নেই। তাই ঢাকা ছেড়ে নিজের বাড়ি পঞ্চগড়ে ফিরে যাওয়া। অখণ্ড অবসর।
কী করা যায়? শৈশব থেকে আঁকাআঁকির শখ। রং-পেনসিলের আঁকিবুঁকি। অনেকটা খেয়ালের বশেই কাপড়ের বুননে ফুল-পাখির
নকশা আঁকা। তাতেই এসেছে বাণিজ্যিক সফলতা। করোনাকালে গত ছয় মাসে তাঁর নিজস্ব ডিজাইন করা শাড়ি আর পাঞ্জাবিই বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকার।
সাদিকা তাসনিম বলেন, ‘ছোট থেকেই আঁকাআঁকি করতাম। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের এই শখকে নিয়েই কাজ করার ইচ্ছা ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে পাস করার পর পরিবারের কথায় চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করি। কিন্তু বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে না পেরে ভেঙে পড়ি। সিদ্ধান্ত নিই, আমাকে এমন কিছু করতে হবে, যাতে থাকবে সৃজনশীলতার ছাপ, সঙ্গে আসবে আর্থিক সচ্ছলতা। নিজের উদ্যোগেই কিছু একটা করব। আমার ভালোবাসার কাজ হ্যান্ড পেইন্টিং নিয়েই কাজ শুরু। পঞ্চরং নামের একটি অনলাইন বুটিক শপ খোলার কথা মাথায় আসে। প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে শুরু। ওই টাকার যে কাপড় কিনি, তা থেকে পোশাক তৈরির প্রথম দিনেই সব বিক্রি হয়ে যায়। আমার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এখন আমি শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, শাল, বাচ্চাদের পোশাক নিয়ে কাজ করছি। দেশীয় পণ্য নিয়েই কাজ করছি। বিশেষ করে খাদি কাপড়। আমার হ্যান্ড পেইন্ট ও অ্যামবুশের কাজ সবাই অনেক পছন্দ করেছে। আমি অ্যামবুশের কাজটাকে একটু ভিন্নভাবে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। বর্তমানে অ্যামবুশের কাজে বৈচিত্র্য কম। তাই একটু ভিন্ন আঙ্গিকের পোশাকে অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
সাদিকা তাসনিম বলেন, ‘শিউলি ফুলের মোটিফে নকশা করা শাড়ি প্রথম ক্রেতাদের সামনে নিয়ে আসার পর অনেকে সেটি পছন্দ করেন। শাড়িটিতে আমি হ্যান্ড পেইন্ট ও অ্যামবুশের কাজ করেছি। জুনের ২০ তারিখ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শাড়ি ২৫১টি বিক্রি হয়েছে। শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করা পাঞ্জাবিও ৫০০টা বিক্রি হয়েছে। সব মিলে এখান থেকেই ১০ লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছে। আর এই শাড়ি ও পাঞ্জাবি হাতে পাওয়ার পর অনেকেই বলেছেন শাড়ি আর পাঞ্জাবিটি ছবির থেকেও সুন্দর। দেশের বাইরে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন তাঁর পণ্য কিনেছেন। তার মধ্যে একজন ৩০ হাজার টাকার পোশাক কিনেছেন।’
বিক্রি যেমন বাড়ছে, পঞ্চরংয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ছে। প্রথম দিকে সাদিকা তাসনিম সবকিছু একা করলেও এখন তাঁর প্রতিষ্ঠানে ১৮ জন উদ্যমী নারী কাজ করছেন।
সাদিকা তাসনিম বলেন, ‘প্রথম দিকে অনলাইনে বিক্রির পরিমাণ ছিল খুব কম। কিন্তু এখন অনলাইনেই ব্যাপক সাড়া পাই। বর্তমানে সারা দেশের তিন-চারটি জেলা বাদ দিয়ে সব জেলায় আমার পণ্য পৌঁছে গেছে। যাঁরা একবার কেনেন, তাঁরাই আবার কেনার আগ্রহ দেখান, পাশাপাশি নতুন ক্রেতাদের কেনার বিষয়ে উৎসাহিত করেন। একটি পণ্য পাওয়ার পর যখন ক্রেতা ফেসবুক পেজে শেয়ার দিয়ে বলেন আমাদের শাড়ি-পাঞ্জাবি সবার নজর কেড়েছে, তখন সত্যি অনেক ভালো লাগে। এ আনন্দ অনির্বচনীয়।’
তবে শুরুতেই পরিবারের সমর্থন পাননি সাদিকা তাসনিম। মেয়ে হয়ে পোশাকের ব্যবসা করাটা অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। তবে এখন অনেক সমর্থন পান। ফেসবুকের উই ও ডিএসবি এই দুটি গ্রুপ তাঁর উদ্যোক্তা হওয়ার পথকে অনেকটা মসৃণ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এখানে খুব সহজেই অনেক কিছু জানা যায়।’
সাদিকা তাসনিম বলছিলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়ার পথে আমরা প্রথম যে সমস্যার সম্মুখীন হই তা হলো ভালো পণ্যের কাঁচামাল ও আর্থিক সমস্যা। এ ছাড়া আমি মনে করি, একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রথমে দরকার অদম্য ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তি থাকলে অনেক বাধা সহজে অতিক্রম করা যায়। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য যেটা বলব তা হলো দ্রুত মুনাফা লাভের চিন্তা না করা। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যে বিষয়ে উদ্যোক্তা হতে চান, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর থাকতে হবে ব্যবসায়িক সততা। তাহলে সহজেই মুঠোবন্দী হবে সফলতা।’
আপনারা কিভাবে কাজ করবেন সেটির জন্য অনুপ্রেরনা তো বটেই এগুলি।
ছবিতে সাদিকা তাসনিম আপু এবং ওনার করা কাজ।