১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট – ৬৮

বিভূতিভূষণের অপরাজিত উপন্যাসের ২৩ তম পরিচ্ছদ এর প্রথম দিকের কিছুটা অংশ, ১৩০০ শব্দের এই
পোস্ট পড়তে আমার ৫ মিনিট সময় লেগেছে আবার রিয়েলাইজ করছি ৫ মিনিট।
কিছু অংশ নিয়ে আগেও লিখেছিলাম। অপু একজন স্বাধীন লেখক।অবস্থা তেমন ভালো নয় তবুও মনে শান্তি
আছে আর অপুর আছে তার নিজের আদরের ধন ছেলে কাজল।( ভীষণ সুন্দর এবং লক্ষ্মী ছেলে)।
লেখায় সে কিছুটা জনপ্রিয় হওয়ায় বেশ অভিজাত একটা পার্টিতে অপুকে আমন্ত্রণ করা হয়।সেখানে যেয়ে
লেখক হিসেবে সে কিছুটা গর্ব অনুভব করে কারন সচরাচর যে কেও অমন অভিজাত পরিবেশে যেতে পারে না।
সেখানে আনন্দ ছিল, ব্রীজ খেলছিল কেও কেও,ছিল সুরের মূর্ছনা আর নানা রকম খাবারের আয়োজন।
অপুর সেখানে একটা মেয়ের গান খুব ভালো লাগছিল।এমন প্রোগ্রামে ছেলের অভাব বোধ করছিল অপু।
ঘুমিয়ে যাবে বলে সাথে নিতে পারেনি তা হলেও সেখানে থেকে কাগজে মুড়িয়ে ছেলের জন্য দুপিস কেকে সে সাথে নিয়ে যায়।আত্মতুষ্টির জন্য।
সে, রাতেই ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। ছেলে বাবার আদর বুঝতে পারে আরও কিছু আহ্লাদী হয়ে
পরে বাবার আদর নেয়।অপু কাজলের জন্য ধনীদের মজার কেক দিয়ে বলে খাওয়ার জন্য। ছেলের প্রতি তার ভীষণ মায়া।
কাজল অপুকে বলে তার একটি চিঠি আছে, জায়গা দেখিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যায় কাজল।অপু বুঝতে পারে
তার আর্টিস্ট বন্ধু র চিঠি। সে অপুকে তার মিশনারী স্কুলে শিক্ষক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়।সে মনে
করে যাদের দেখবার চোখ আছে তাদের এখানের চমৎকার পরিবেশে খুব দরকার। অপু এক জায়গায় আটকে থাকার মতো নয় তাই কিছুদিনের জন্য হলেও যেন সে যায়।
অপুর ইচ্ছে করে যেতে। এক ঘেয়ে নীরস বৈচিত্র্যহীন আজও যা কালও তা,অর্থহীন কোলাহল ও সার্থকতাহীন
ব্রিজের আড্ডার আবহাওয়ায় টাকা রোজগারের মৃগ তৃষ্ণিকায় সুব্ধ জীবন নদীর স্তব্ধ, সহজ,সাবলীল ধারা দিনে
দিনে শুকায়ে আসিতেছে সে বুঝতে পারে।
ছেলে সে বলে তাকে ছাড়া একা কিছুদিন থাকতে পারবে কিনা।কাজল কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে সে কোথাও গেলে
সহজে ফিরতে চায়না তার কষ্ট হয়।অপু ছেলের মায়ায় বাধা পরে যায়।যেতে পারে না ছেলেকে ছেড়ে।ঘুমিয়ে গেলে
তার সুন্দর ছেলেটা আরও আদরনীয় হয়ে যায়।বাবার মায়া অপু বুঝতে পারে।ছেলের মাঝে তার বাবাকে দেখতে পায় অপু।
অপুর লেখার বেশ কদর বাড়ছিল যারা একসময় ওকে বুঝতে পারতো না তারাও ছাপার জন্য ওর লেখা চায়।
বিভাবরী ও বঙ্গসুহৃত দুটি নামকরা পত্রিকা ওর লেখা চায় নগদ টাকা ও দেয়।বঙ্গসুহৃত এর নিজস্ব ছাপাখানা
থাকায় তারা অপুর লেখা কিনে নিজেরা ছাপতে চায় অপুকে কন্ট্রাক্ট করে। অপু জানে তার লেখা তার নিজের
তার লাভ সম্পূর্ণ তার কিন্তু নগদের মোহ এবং ঝামেলা কিছু কম হবে বলে সে রাজি হয়।
হাত ভর্তি টাকা পেয়ে অপু কি করবে ভেবে পায়না।আগে হলে ট্যাক্সি করে ঘুড়তে, ছবি দেখে, আনন্দ করতো
কিন্তু এখন তার ছেলের কথা আগে মনে পরে ওকে কিভাবে খুশি করতে পারে।
গরমের কারনে অপু শরবত খেতে দোকানে যায় সে অর্ডার করে। সে সময় অল্পবয়সী দুটো বাচ্চাও যায় তাদের
চোখে আনন্দ তারা খাবে কিন্তু চারআানা লাগে বলে খেতে পারেনা। অপু তাদের খাওয়ার অনুরোধ করে এবং ওদের
বুঝিয়ে খেতে বলে। প্রথমে রাজি না হলেও অপু বুঝানোর পর রাজি হয় এবং মুগ্ধ হয়ে খাওয়া শেষ করে এক চুমুকে।
অপুর ভালো লাগে তার টাকায় ভালো একটা কাজ হলো বলে তার মনে হয়।
অপু মনে করে বড়ো সাহিত্যের প্ররণার মুলে রয়েছে মানব বেদনা।
১৮৩৩ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রজাস্বত্ব আইন সার্যণীতি,জার শাসিত রাশিয়ার সাইবেরিয়া, শীত অত্যাচার কুসংস্কার,
দারিদ্র্য তৈরি করেছে গোগল,ডস্টয়ভস্কি,গোর্কি, টলস্টয় ও শেকভের মতো লেখক।তাদের সাহিত্য সম্ভব হয়েছে সে সব কারনে।
অপুর ছোট বেলার কথা মনে পড়ে। একটি ছেলে বহুদূরের বিদেশে দাসের হাটে কৃতদাস রুপে বিক্রি হওয়ার কথা।
সে সব যদি সে লিখতে পারতো আফ্রিকার নীরব নৈশ আকাশ তাকে প্রেরণা দিত। কিন্তু বিশ্ব সাহিত্যের দূর্ভাগ্য তাহারা নীরব অত্যাচার সহ্য করে বিশ্ব হতে বিদায় হলো।

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *