অনলাইন উদ্যোক্তার ১০০ দিন (উদ্যোক্তা হবো কেন)

 

আধিরার বাবার প্রশ্নে আধিরা ভাবলো আজ সবার সামনেই একটু খুলে বলা উচিত।আধিরা বললো বাবা আজ আমি তোমায় বলতে চাই, ইনফ্যাক্ট সবার ই জানা দরকার।
আধিরার বাবা বেশ গম্ভীর মানুষ তবে মেয়েকে স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেই জানতে চাইলেন-
আধিরা বই থেকে শুরু করলো-
দেখো বাবা আমাদের দেশটি অনেক ছোট একটি দেশ কিন্তু জনসংখ্যা বেশ বেশি।বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।আমাদের দেশে একটা চাকুরীর বিজ্ঞাপনে যে পরিমাণ এপ্লিকেশন পড়ে অনেক উন্নত দেশের জনসংখ্যা এর চেয়ে অনেক কম।
আধিরার বাবা- মাথা নেড়ে জানালেন যে হ্যাঁ মা সেটা ঠিক আছে কিন্তু শুধু কি এটাই কারন তোমার?
আধিরা- না, মোটেও না আমি আরো জানাচ্ছি।
আমাদের দেশে অনেকের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে নেতিবাচক দিক কাজ করে। নিজে নিজে কিছু করলে হয়তো অন্যের কাছে ছোট হয়ে যেতে হয়, মূল্যায়ন পাওয়া যায় না কিংবা তথাকথিত সামাজিক স্ট্যাটাস পাওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে এই ধরনের ভাবনা ভাবার মানুষও নেহায়েত কম না। অনেকেই মনে করেন, এতদূর লেখাপড়া করে ব্যবসা করবো? মানুষ কী মনে করবে এই চিন্তায় উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তাও দূরে সরিয়ে রাখে।
আমরা উদাহরণ হিসেবে সবসময় মাইক্রোসফট, ফেসবুক, অ্যাপলে ইত্যাদির কথা বলি। দেশের মধ্যে আকিজ, প্রাণ,স্কয়ারের, বেক্সিমকোর কথাও কম হয় না। দেশের উন্নয়নে তাদের গুরুত্বের কথা বলি। অথচ শেখ আকিজ উদ্দীন মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ১৯৪২ সালে নিজ গ্রাম খুলনার ফুলতলার মধ্যডাঙ্গা ছেড়ে জীবিকার অন্বেষণে বেরিয়ে পড়েন। মাত্র ১৬ টাকা হাতে নিয়ে ট্রেনে চেপে বসেন দুরন্ত এ কিশোর। কলকাতায় পাইকারি বাজার থেকে কমলা লেবু কিনে হাওড়া ব্রিজে ফেরি করা শুরু করেন। সেই থেকে শুরু।
কিন্তু আমাদের দেশে বিএ,এমএ পাস করে কেউ উদ্যোক্তা হওয়ার পথে যেতে চাইছে না। তবে হ্যাঁ, শুরুতেই যদি আকিজ কোম্পানির মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়,তবে সবাই সেটা করতে রাজি হয়ে যাবে।সকল মেয়ের বাবা ও এমন কাউকেই চাইবে যে সব কিছু অর্জন করেছে, কিন্তু বাবা আমি চাই তুমি সহ সবাই আমার এই সিধান্তে সাপোর্ট করবে।
আধিরার বাবা- কিন্তু মা, সবাই এটা হতে পারে না, তুমি মেয়ে হয়ে এভাবে ভাবলে চলবে?
আধিরা- বাবা, মেয়ে বা ছেলে আসলে ব্যাপার না। তুমি আর তোমরা সাপোর্ট করলেই আমার মত সকলের দ্বারা ই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
ফ্যামিলির সাপোর্ট টা আমাদের খুব ই দরকার। নইলে আমরা মেয়ে হই বা ছেলে এতে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না বাবা। আমাদের মনে রাখা উচিত, কেউ কিন্তু এক লাফ দিয়ে ২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার করা কোম্পানির মালিক হননি। আস্তে আস্তে করে সবাই সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন।
উদ্যোক্তাদের কিংবা ব্যবসা করার কয়েকটি ইতিবাচক দিক আমাদের জানা প্রয়োজন, যদিও বিষয়টি আমাদের সকলের জানা তারপর ও আমি সবাই কে জানাতে চাই-
✅ আপনি স্বাধীনভাবে আপনার ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। এখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে না।
✅ চাকরি করার ক্ষেত্রে আপনি যতই পরিশ্রম করুন কিংবা আপনার পরিশ্রমের ফলে প্রতিষ্ঠান যতই লাভবান হোক না কেন, আপনি নির্দিষ্ট অংকের বেতনের বাইরে কোনও সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। অথচ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যত লাভ হবে, সেই সুযোগ সুবিধা দিনশেষে উদ্যোক্তাদের পকেটেই চলে যাবে। এখানে সবসময় উদ্যোক্তাদের পরিশ্রম না করলেও চলে।
✅ একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতে পারলে, সেটা শুধু উদ্যোক্তার নিজের জন্য নয়, পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও নিশ্চিত আয়ের ব্যবস্থা করবে। আর ব্যবসা যতই পুরাতন হয় এবং উদ্যোক্তা হিসেবে সেটি বর্ধিত করার সুযোগ ততই বেড়ে যায়।
✅ সকল ধরনের চাকরি (খুব ছোট মানের) কিন্তু আপনাকে আর্থিক সচ্ছলতা দেবে না। কিন্তু একজন উদ্যোক্তা যদি নিজের বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে ব্যবসা চালাতে পারেন, তবে ব্যবসা তাকে আর্থিক সচ্ছলতা প্রদান করবে। যে কোনও ভুলের কারণে, সকালে অফিসে গিয়ে জানা গেলো চাকরি নেই, এমনা ঘটনা উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ঘটার সুযোগ নেই।
✅ উদ্যোক্তারা নিজেদের বহুবিধ দক্ষতার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন। এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়ে থাকা সুযোগ সুবিধার যেমন সর্বোচ্চ ব্যবহার যেমন সম্ভব, তেমনি কর্মসংস্থানেরও বিশাল সুযোগ সৃষ্টি সম্ভব।
✅ অফিসিয়াল বাধ্যবাধকতা উদ্যোক্তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলতে হয় না। বসদের নিকট জবাবদিহি থাকে না। কিংবা সকাল বেলা অফিসে এসে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার খবরও শুনতে হয় না।
আধিরার বাবা- কিন্তু মা, এতে অনেক ঝুঁকি আছে তুমি এগুলি কি জানো?
একথা সত্য, উদ্যোক্তাদের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। লাভের পরিমাণ যেমন অপরিসীম, ঝুঁকির পরিমাণও তেমন বেশি থাকে। তবে হ্যাঁ, সঠিক সময়ে যারা কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তারা ব্যবসায়ে সাধারণত ক্ষতির সম্মুখীন হন না।
উদ্যোক্তা হতে হলে সবাইকে মিল কলকারখানা স্থাপন করতে হবে, বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। এতটা কঠিন করে ভাবার আদৌ কোনও সুযোগ নেই। আপনি কিছু না পারেন একটা মুদি দোকান দেন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দেন, চালের দোকান করেন, খাবারের ব্যবসা করেন। তথ্য প্রযুক্তিখাতেও এখন অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেসব বিষয়েও ভাবতে পারেন। হাজার ধরনের অপশন আমাদের সামনে পড়ে আছে। প্রয়োজন শুধু যে কাজটা আপনি ভালোভাবে করতে পারবেন, সেটা ঠিকমত খুঁজে বের করে কাজটা শুরু করা।
আধিরার বাবা- ঠিক আছে মা, তুমি আর ভাবী দুইজন মিলেই লেগে পড়ো কাজে, আমি সাহায্য করবো।
ডালিয়া- না বাবা আমরা শুধু দোয়া চাই আর সাপোর্ট টা, আর্থিক সাহায্য আমরা নিজেরাই আগে ট্রাই করবো কারন এতে আমাদের নিজেদের তাগিদ টা বেশি থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *