কামারের কাজ দেখেছেন কখনও? – কামার চিনলেন না? – লোহা পিটিয়ে দা-কাঁচি, বা পাত্র বানায় যারা, তাদের কামার বলে। এবার নিশ্চই কামার চিনতে পারছেন! কামার বা blacksmith দের কাজ আমরা সবাই দেখেছি। হয়তো ভাবছেন, এতকিছু রেখে কামারের কথা কেন বলছি?
কামারের কথা বলছি এই কারণে, আজকে আপনাকে যে বিষয়টি বলব – তা বুঝতে গেলে কামারের কাজের একটা দিক আপনাকে বুঝতে হবে। আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন কামার যখন একটা লোহার খন্ড থেকে কিছু একটা বানাতে যায়, তখন সে লোহাটিকে একবারে আকার দেয়ার চেষ্টা করে না। বহু সময় ধরে বার বার তাপ দিয়ে গরম করে, একটু একটু করে পিটিয়ে লোহার খন্ডটিকে কাঙ্খিত অস্ত্র বা যন্ত্রের আকার দেয়।
কামার যদি লোহার খন্ডটিকে একবারে জোর করে বাঁকাতে বা চ্যাপ্টা করতে চেষ্টা করে, তাহলে লোহাটি একটু আকার পরিবর্তন করেই ভেঙে যেতে পারে।
সাফল্যের জানা রহস্য:
আমরা জীবনে সবাই সফল হতে চাই। কিন্তু সফল হতে গেলে অনেক কষ্ট করতে হয়। এক্সট্রা অর্ডিনারি সাফল্যের জন্য এক্সট্রা খাটতে হয়।
ক্লাসের যে ছেলেটা ফার্স্ট হয়, সে আসলে ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছেলে হবে, এমন কোনও কথা নেই। কিন্তু সে অবশ্যই পড়াশুনার ক্ষেত্রে ক্লাসের আর সবার চেয়ে রেগুলার, মনোযোগী আর পরিশ্রমী ছেলে।যে ব্যবসায়ী শূণ্য থেকে বিলিওনেয়ার হয়েছেন, এমন নয় যে তিনি অন্য ব্যবসায়ীদের চেয়ে বুদ্ধিমান বা প্রতিভাবান। অথবা যে শিল্পীটি আজ সবচেয়ে সুপারহিট – তারচেয়ে বহু প্রতিভাবান শিল্পী রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এই সফল মানুষগুলোর সাফল্যের রহস্য কি, সেটাও আমরা অনেকেই জানি। লক্ষ্য অর্জনের প্রতি গভীর অধ্যাবসায়, মনোযোগ আর পরিশ্রম। এই মানুষেরা যখন কাজ করেন বা পড়াশুনা করেন – তখন পৃথিবী উল্টে গেলেও তাঁরা কাজ থেকে সরেন না। সাধারণ মানুষ ঘুমাতে যায় ক্লান্ত হলে, কিন্তু এইসব অসাধারণ মানুষ ঘুমাতে যান হাতের কাজ শেষ হলে। ক্লান্তি, বিনোদন, ব্যর্থতা তাঁদের কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। এই অভ্যাসই তাদের সফল করে।
সবাই কেন পারে না?
লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকে পৃথিবীর বাকি সব কিছু ভুলে, নির্দিষ্ট সময় নিয়মিত কাজ করে যাওয়ার নাম “ডিপ ওয়ার্ক”। এই ডিপ ওয়ার্ক বা গভীর কাজ যে সকল সাফল্যের চাবি – এটা কমবেশি সবাই জানি, কিন্তু কেনজানি করতে গেলে করা হয় না।
কিভাবে কাজ করলে সফল হতে হয় – এই বিষয়ে সবার ধারণা থাকলেও সবাই এটা করতে পারে না। এবং করতে না পারার উত্তরটা খুব সহজ: সাধারণ মানুষের পক্ষে এটা করা আসলেই কঠিন। এই কারণেই বেশিরভাগ মানুষ সারা জীবন সাধারণ থেকে যায়। কারণ অধ্যাবসায়ের এই গুণ সবাই অর্জন করতে পারে না। সবাই হয়তো চায়, কিন্তু সবাই পারে না। ছোটবেলা থেকে করে আসা ফাঁকিবাজি, অথবা কয়েক বছর ধরে করা কাজের সময়ে ফেসবুক ব্রাউজ বা চ্যাটিং এর অভ্যাস বাদ দিয়ে চূড়ান্ত সফল হওয়ার অভ্যাস করা এত সহজ নয়।
আপনি কিভাবে পারবেন?
অনেকেই চিন্তা করেন, এবার থেকে নিয়মিত পড়াশুনা করব, মন দিয়ে কাজ করব, কাজের/পড়ার সময়ে ফেসবুক ও ফোন থেকে দূরে থাকবো, অথবা এবার থেকে ফাস্টফুড/সিগারেট খাওয়া বাদ দেব। এবং অনেকে শুরুও করেন। কিন্তু অল্প সময় করার পরই আবার পুরনো অভ্যাস ফিরে আসে। তারপর এক সময়ে মনে হয়, “আমাকে দিয়ে হবে না”। কামার যদি একবারেই একটি লোহার খন্ডকে কাঁচি বানাতে চায় – সেই লোহার খন্ড যেমন ভেঙে যায়, তেমনি আপনার উৎসাহ আর আত্মবিশ্বাসও ভেঙে যাবে।
আপনি যদি একজন “ডিপ ওয়ার্কার” হতে চান, এবং জীবনে এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু করতে চান – তবে অবশ্যই আপনাকে শুরু করতে হবে অল্প করে। এটাই ডিপ ওয়ার্ক মেথড রপ্ত করার সিক্রেট। আগে কাজটা/অভ্যাসটা রপ্ত করুন, সময় পরে বাড়ানো যাবে।
উদাহরণ দিতে গেলে বলা যায়: আপনি যদি ফেসবুক/ফোন ভুলে দিনে ৫ ঘন্টা পড়তে চান, তবে আগে আধাঘন্টা চেষ্টা করুন। ফোন বন্ধ রেখে, ফেসবুক বন্ধ রেখে আধা ঘন্টা চেষ্টা করুন। এভাবে কয়েকদিন করার পর ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।