বিশ্ব বিখ্যাত পারফর্মেন্স কোচ এবং লেখক ব্রায়ান ট্রেসি তাঁর “No Excuses!: The Power of Self-Discipline” বইতে লিখেছেন: “যদি আপনি সফল হতে চান, তবে রাতের মূল ডিনার খাওয়ার আগে মিষ্টি খাওয়া বাদ দিন”।
কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ এই ভুলটাই করে। লেখকের লেখা পড়ে যা বুঝেছি তা হলো – আগে কাজ পরে বিনোদন।
আপনি হয়তো ৯টা-৫টা চাকরি করেন, কিন্তু আপনার লক্ষ্য হচ্ছে একদিন বিশাল একটি কোম্পানীর মালিক হবেন।
আপনি যদি কাজ থেকে ফিরেই টিভি খুলে বসেন, বা ফেসবুক নিয়ে বসেন, বা গেম খেলতে বা মুভি-সিরিজ দেখতে বসে যান,
তবে আপনার স্বপ্ন কখনওই পূরণ হবে না।
আপনাকে বিনোদনের আগে কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ হিসেবে কাজ থেকে ফিরে যেটা করতে ইচ্ছা করে,
সেই কাজটাই করা যাবে না। আপনাকে আবার কাজে নামতে হবে। এতক্ষণ বসের জন্য কাজ করেছেন,
এখন নিজের জন্য কাজ করা শুরু করু।
বিনোদনে ক্ষতিটা কি?
অনেকেই বলেন, সারাদিন খাটাখাটনি করে এসে কিছুক্ষণ যদি বিনোদন না করি, তবে মাথাটা ফ্রেশ হয় না।
এই কথা ভুল নয়। কিন্তু বিনোদন করলে মাথা ফ্রেশ হয়না, সে আরও ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
আপনি কাজ শেষে বাসায় ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে হয়তো একটা সিনেমা দেখলেন বা ফেসবুক ঘাঁটলেন,
গেম খেললে্ন,এতে আপনার মাথাকে যথেষ্ঠ পরিশ্রম করতে হয়। আপনি যখন একটি গেম খেলেন,
তখন আপনাকে প্রতি সেকেন্ডে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মুভি বা সিরিজ দেখার সময়ে পুরো গল্পটা মাথায় রাখতে হয়।
প্রতিটি ডায়লগ, প্রতিটি সিন চলার সময়ে ব্যাক গ্রাউন্ডে আপনার ব্রেনকে প্রচুর তথ্যের সাথে সেই বিষয়গুলো মিলিয়ে দেখতে হয়।
আপনি কি মনে করেন, একটি ক্যারেক্টারকে আপনার এমনিই মনে থাকে?
একটি ক্যারেক্টর যখন পর্দায় আসে, আপনার ব্রেনের অবচেতন অংশ তখন
সেই ক্যারেক্টর সম্পর্কে যত তথ্য মেমোরিতে জমা আছে, সেই তথ্যের সাথে
পর্দায় থাকা চেহারা ও কন্ঠকে মিলিয়ে দেখে, তারপর সে আপনার চেতন মনে
মেসেজ পাঠায় যে এটাই মোশাররফ করিম বা চঞ্চল চৌধুরি।
এই পুরো প্রসেসটা অবচেতন মন বা ব্রেনের ব্যাক গ্রাউন্ডে হয় বলে আমরা বুঝতে পারি না।
কিন্তু এই সময়ে ব্রেনকে প্রচুর খাটতে হয়। আর তাই মুভি দেখার পর আমাদের ঘুম ঘুম লাগে,
অনেক সময়ে চোখে ঠিকমত দেখতে পাই না।
আর গেম খেলার সময়ে তো ব্রেনকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফেসবুকে চ্যাট করা বা
ইউটিউবে ভিডিও দেখলেও আপনার ব্রেনকে অনেক খাটতে হয়। ইউটিউবে যদি নতুন কোনও
ভিডিও দেখেন, তখন সেই তথ্য ব্রেনকে নতুন করে প্রসেস করতে হয়।
কাজেই, বুঝতেই পারছেন, কাজ থেকে ফিরে বিনোদন করলে মাথা ফ্রেশ হওয়ার বদলে আরও
জ্যাম আর ক্লান্ত হয়ে যায়।
তাহলে সমাধান কি
বেস্ট সেলিং লেখক ও মটিভেশনাল স্পিকার ব্রেন্ডন বারচার্ড তাঁর “High Performance Habits:
How Extraordinary People Become That Way” বইতে অসাধারন সফল মানুষদের ৬টি
অভ্যাসের কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটি অভ্যাস হলো, দুই কাজের মাঝে ৪০ মিনিটের রেস্ট নেয়া।
আপনি সারাদিন অফিসে খাটাখাটনি করে এসে যদি আবারও ৩-৪ ঘন্টা নিজের কাজ বা পড়াশুনা
করতে চান, আপনাকে বিনোদন বাদ দিয়ে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে হবে।
চাইলে মেডিটেশন করতে পারেন। অন্তত ৪০ মিনিট থেকে ১ঘন্টা আপনার শরীর ও মস্তিষ্ককে সবধরনের চাপ থেকে মুক্ত রাখুন।
এটি খুবই জরুরী একটি বিষয়, তাই আপনার দৈনিক কাজের রুটিনে এই বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে রাখুন।
যদি এটি ফলো করতে পারেন, তবে আপনি অনেক বেশি কাজ করতে পারবেন।
যত খাটনির কাজই করেন না কেন, একটা সময়ে গিয়ে আপনি নিজেই অনেক বড় কিছু করে ফেলতে পারবেন।
পৃথিবীর বহু সফল মানুষ শুধু এই ট্রিকটি কাজে লাগিয়ে একদম সাধারণ অবস্থা থেকে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।