আজকের লেখাতে যা পাবো আমরা-
আপনার কি মনে হয় – এ্যাপলের সাথে যদি স্টিভ জবস্ নামটি না থাকতো, অথবা টেসলা বা স্পেস এক্স এর সাথে ইলন মাস্ক নামটি অনুপস্থিত হতো, বা মাইক্রোসফট এর সাথে বিল গেটস্ ও এত বিখ্যাত না হতেন, তবে কি ব্র্যান্ডগুলো এতটা বিখ্যাত হতে পারতো? বিখ্যাত বিজনেসম্যানদের ও তাদের ব্র্যান্ডের অবস্থা বিচার করে এই প্রশ্নটা চলেই আসে, যে সফল ব্র্যান্ড এর নামের সাথে এর সেলিব্রেডি উদ্যোক্তাদের নামও কি ব্যবসার প্রসারে অবদান রাখে? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রাখে। আর আপনি নিজেও কিভাবে নিজের ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিংকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসাকে আরও এগিয়ে যেতে পারবেন – তা নিয়েই এই লেখায় আলোচনা করব।
বর্তমানে উদ্যোক্তাদের মাঝে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বা আত্মপ্রচার নিয়ে বেশ একটা ‘হাইপ’ চলছে। বর্তমান অবস্থা দেখে একটা জিনিস মাথায় আসে যে, আজকাল আর শুধুমাত্র একটি সফল ব্যবসা দাঁড় করানোই যথেষ্ঠ নয়। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনাকেও আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের মতই খ্যাতি অর্জন করতে হবে, এতেকরে ব্যবসার প্রসারও অনেকটা বেড়ে যায়।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে একটি দারুন বিজনেস আইডিয়াকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো গেলে সেই ব্যবসা সফল হবেই; তবুও বর্তমানের ও অতীতের বেশকিছু বিশ্বসেরা কোম্পানীর ইতিহাস বিবেচনা করলে দেখা যায় একটি নতুন কোম্পানীর নামের সাথে যদি তার পেছনের এক বা একাধিক ব্যক্তি নিজে বিখ্যাত হয়ে উঠলে ব্যবসার সাফল্য অনেকটাই গতিশীল হয়। কিন্তু কি কারনে এই ব্যাপারটি কাজে দেয়?
আসুন জেনে নিই পারসোনাল ব্রান্ডিং আমাদের উদ্যোগের জন্য ভালো হবার কিছু কারন-
মানুষ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় রক্তমাংসের মানুষকে বেশি বিশ্বাস করে
বহুকাল ধরেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে মানুষের বিশ্বাস দিনে দিনে কমে আসছে। এর অন্যতম কারন প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগ সময়েই প্রচারের অতিরিক্ত প্রতিশ্রুতি দেয় যা তারা বাস্তবে ক্রেতাদের দিতে পারে না। এটা শুধু যে লোকাল ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তা নয়। নামীদামী অনেক ব্র্যান্ডকেও মানুষ আজকাল বিশ্বাস করে না। আর এই পরিস্থিতিতে একটি নতুন কোম্পানীকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলাটা উদ্যোক্তাদের জন্য প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে মানুষের একটি সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট হলো, মানুষ মানুষকে বিশ্বাস না করে বাঁচতে পারে না।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে মানুষ বিজ্ঞাপনের থেকে সত্যিকার মানুষের মুখে কোনও পন্য বা সেবার ব্যাপারে মতামতের ওপর বেশি নির্ভর করে। নতুন কিছু কিনতে গেলে তারা শুধুমাত্র চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রচারণার ওপর নির্ভর না করে পরিচিতজনদের মতামত নেয়, ইউটিউব বা অন্য ওয়েবসাইটগুলোতে ইউজার রিভিউ দেখে কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।
Bright Local এর করা একটি জরিপে দেখা যায় আমেরিকা বা ইউকের মত দেশগুলোর ৮৮% ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে দেয়া বিজ্ঞাপনের থেকে ইন্টারনেটে অপরিচিত মানুষের দেয়া রিভিউ বেশি বিশ্বাস করে। এর মাঝে ৮৫% ক্রেতা একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের পেছনে টাকা খরচ করার আগে অন্তত ১০টি রিভিউ পড়ে থাকেন।
একারনে আপনার পন্য ও সেবার ক্ষেত্রে নিজেকে একজন এক্সপার্ট হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরাটা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন একটি আইফোন কিনি, তখন অবচেতনেই স্টিভ জবসের ব্যাপারটা আমাদের মাথায় চলে আসে। আমরা জানি স্টিভ জবস কত বড় একজন টেক বিশেষজ্ঞ। সেকারনেই চোখ বন্ধ করে আমরা তাঁর পন্যটি কিনতে পারি। আবার দেখুন, বাজারে কিন্তু পে-পাল ছাড়াও অনেক মানি এক্সচেঞ্জ রয়েছে, কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই পে-পাল এ স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এর প্রধান একটি কারন, পে-পাল এসেছে ইলন মাস্ক এর হাত ধরে। আবার বেশকিছু অপারেটিং সিস্টেম থাকার পরও মানুষ প্রথমে উইন্ডোজের কথা ভাবে, এর একটি কারন এর সহজ ব্যবহার ও বহুল প্রচলন – তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বিল গেটস এর ব্যক্তিগত খ্যাতিও এর পেছনে একটি কারন।
তাদের নিজেদের পন্য ও সেবা ছাড়াও অন্যান্য ব্যাপারেও মানুষ তাঁদের মতামতকে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেয়। কাজেই ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য যেমন ভাল পন্য জরুরী তেমনি প্রতিষ্ঠানের পেছনের মানুষগুলোর নিজের খ্যাতিও মানুষের কাছে দারুন গ্রহনযোগ্য।
অন্যদিকে আপনার যদি এমন একটি ফার্ম থাকে, যেটি কনটাক্টে বিভিন্ন কাজ করে, সেক্ষেত্রেও আপনার ব্যক্তিগত খ্যাতি আপনাকে কাজ পেতে অনেক সাহায্য করবে।
মনে করুন, একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর মালিক নিজেও যথেষ্ঠ বিখ্যাত। এখন তিনি যদি সেই কোম্পানী থেকে বের হয়ে গিয়ে নিজে আরেকটি কোম্পানী খোলেন, সেটিকে একটি ভাল অবস্থানে নিতে তাঁর খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। অন্যদিকে তিনি নিজে যতি খুব বেশি পরিচিত কেউ না হতেন, তবে এত সহজে তিনি নতুন ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে পারতেন না।
এই পর্বটি চলবে…