কিছু মানুষ আছে যারা হাজারটা কাজের মাঝেও চাপহীনথাকতে পারে। অন্যদের চেয়েতারা অনেক বেশি কাজ করলেও তাঁদের কখনও ক্লান্ত বা বিরক্ত অবস্থায় দেখা যায় না। এবং তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে তাঁরা সেরা পজিশনে থাকেন। কিন্তু কিভাবে তাঁরা এই ব্যাপারটিকে সম্ভব করেন?
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্যেই দিনে ২৪ ঘন্টা বরাদ্দ থাকে। এর বেশি একটি সেকেন্ডও কোনও কিছুর বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব নয়।
কিন্তু আমাদের আশেপাশেই কিছু মানুষকে দেখা যায় যারা অন্যদের চেয়ে এই ২৪ ঘন্টা সময়কে অনেক বেশি কাজে লাগাতে পারেন। এমনভাবে তাঁরা কাজ করে যান, ও সফলতা পান – যা নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না।
এই মানুষগুলো সব ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকেন। অর্থ, খ্যাতি, প্রভাব – সবকিছুতেই তাঁরা টপ পজিশন দখল করে রাখেন। কিন্তু এই মানুষগুলো কিভাবে এই অসম্ভব কে সম্ভব করেন?
এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরি আমরা অনেকেই,আমার নিজের জন্যও এটার দরকার বলেই মুলত Smart Faster Better নামক ৪০০ পাতার বইটি পড়া
একজন মানুষের পক্ষে একা একসাথে তিন-চারটি কাজ করা সম্ভব নয়। তিনি যতই প্রতিভাবান ও দক্ষ হোন না কেন, একজন মানুষ যদি একই সময়ে একাধিক কাজ করতে যান – তবে সেই কাজটির ফলাফল কখনওই খুব বেশি ভালো হবে না।
অনেক মানুষেরই এমন ব্যস্ততা থাকে যাতে করে তাঁদের একই সময়ে একের বেশি কাজ করতেই হয়।
মনে করুন আপনি একটি কোম্পানীর সিইও। আপনাকে প্রোডাকশনও দেখতে হচ্ছে, মার্কেটিং এর ওপরও নজর রাখতে হচ্ছে, সেইসাথে বাইরের ক্লায়েন্ট এর সাথেও যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে।
আপনি এই কাজের দায়িত্বগুলো অনেকের মাঝে ভাগ করে দিলেও প্রতিটি কাজের ওপর আপনাকে সব সময়েই চোখ রাখতে হচ্ছে যাতে প্রতিটি কাজই ঠিকমত হয়।
এখন ধরুন আপনার হাতে একটি জটিল প্লানিং এর কাজ আছে – যা ভালভাবে করতে আপনার পুরো মনযোগ সেই কাজে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আপনি তা পারছেন না অন্য কাজগুলো নিয়ে টেনশনের কারনে।
কিন্তু এই অবস্থা থেকে মুক্তির প্রথম উপায় হলো- মোটিভেশন।
মোটিভেশন
গেম খেলার সময়ে গবেষকরা প্রত্যেক গেমারের মস্তিষ্কের গতিবিধি স্ক্যানারের সাহায্যে মনিটর করলেন।
দেখা গেল যখন গেমাররা কোন সংখ্যা ধরবেন সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন তখন তাঁদের মস্তিষ্কের “striatum” অংশ দারুন এ্যাকটিভ হয়ে উঠেছিল। এই অংশটি আমাদের মাঝে মোটিভেশন সৃষ্টি করে।
এই অংশ যত এ্যাকটিভ থাকে আমরা একটি কাজের প্রতি ততটাই মোটিভেটেড থাকি। এরপর গেমাররা মনে মনে সংখ্যা নির্ধারণ করার পর যখন কম্পিউটারের পালা এল সংখ্যা নির্ধারণ করার, তখন দেখা গেল গেমারদের মস্থিষ্কের মটিভেশনাল অংশটি প্রায় পুরোপুরি থেমে গেছে।
– এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, একজন মানুষের যখন বেছে নেয়ার বা সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা থাকে তখন তার মোটিভেশন লেভেলও অনেক উপরে থাকে।
একজন মানুষ যখন কোনও কাজ করতে গিয়ে দেখে যে সেই কাজে তার নিজের মত করে তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই, বা কোনও কিছু বেছে নেয়ার মত স্বাধীনতা তার নেই – তখন সেই কাজের প্রতি তার মটিভেশন বা উৎসাহও নিচের পর্যায়ে নেমে আসে।
কিন্তু যখনই সেই মানুষটি জানে কোনও একটি কাজে বা বিষয়ে তার নিজের মত করে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা আছে – তখন তার উৎসাহ বা মটিভেশন দারুন ভাবে বেড়ে যেতে থাকে।
১৯৮০ সালে কয়েকজন ফ্রেঞ্চ নিউরোলজিস্টও একটি পরীক্ষায় একই ধরনের ফলাফল পান।
আসুন একটা উদাহরণ দেখে নিই-
ধরুন এক দম্পতির মধ্যে স্বামীটির এই অবস্থা হয়েছিল। তিনি সব ব্যাপারে মোটিভেশন হারিয়ে ফেলেছিলেন। স্বামীর মধ্যে উৎসাহের বোধ ফিরিয়ে আনার জন্য স্ত্রী করলেন কি প্রতিদিন এমন কিছু বিষয় স্বামীর সামনে নিয়ে আসতে লাগলেন যাতে করে তাঁকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
বাজারে যাওয়ার আগে তিন-চারটি সব্জীর নাম করে একটি বেছে নিতে বললেন, আবার আজ নীল না হলুদ জামা পরে বের হবেন – সেই সিদ্ধান্তও স্বামীর ওপর ছেড়ে দিলেন। এমন করে ছোট খাট বিষয় থেকে শুরু করে কিছু বড় বড় বিষয়েও একাধিক অপশনের কথা বলে স্বামীকে একটি বেছে নিতে বললেন। এমন করে চলতে চলতে একটা সময়ে দেখা গেল লোকটির ভেতরে মোটিভেশন বা উৎসাহ একটু একটু করে বেড়ে চলেছে।