কমফোর্ট জোন কি – এই প্রশ্নটির উত্তরে যে কথাটি প্রথমে মাথায় আসে – ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। বাস্তবের কমফোর্ট জোন বা ‘আরামের অঞ্চল’ বলতে আমরা বুঝি এমন একটি জায়গা যেখানে সব রকমের সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা রয়েছে। খাবার ও আরামের সব ব্যবস্থা সেখানে আছে। – খুব ভালো ব্যাপার, তাই না? – কিন্তু সত্যি কথা বলতে, বুদ্ধিমান ও কিছু করতে চাওয়া মানুষের জন্য এটা জেলখানার মত।
আপনাকে যদি কেউ সব রকমের আরাম আয়েশ ও নিরাপত্তা দিয়ে একটি ঘরে বছরের পর বছর আটকে রাখতে চায় – আপনি কি রাজি হবেন? – নিশ্চই না! কিন্তু অল্প কিছু মানুষ ছাড়া প্রায় সবাই মানসিক ভাবে এরকম একটি নিরাপত্তা বলয়ে নিজেদের আটকে রাখে।
এই মানসিক কমফোর্ট জোন থেকে না বের হওয়ার জন্য মানুষ তার সম্ভাবনার অনেকটাই কাজে লাগাতে পারে না। আমরা প্রায়ই বিভিন্ন গুণীজনের বিখ্যাত থেকে জানতে পারি যে, কমফোর্ট জোন থেকে বের হলে একজন মানুষের জীবন অনেক বেশি সাফল্যময় হতে পারে। অনেক সময়ে আমরা এটা থেকে বের হতেও চাই – কিন্তু এটা খুব কঠিন কাজ বলে মনে হয়। শেষ পর্যন্ত জীবনের একঘেয়ে রুটিনের মাঝেই আমরা বন্দী হয়ে থাকি।
মাত্র কয়েকটি বছর দিনে ৮ ঘন্টার বদলে ১২ ঘন্টা কাজ করলে ক্যারিয়ার অনেক ওপরে চলে যাবে – এটা জানার পরও মানুষ তা করে না – কারণ ৮ ঘন্টা কাজ করতে করতে তার একটা কমফোর্ট জোন তৈরী হয়ে গেছে। বাড়তি ৪ ঘন্টা নিজের জন্য কাজ করলে কতটা কষ্ট হবে বা কতটা বিনোদন মিস হবে – এই চিন্তা করে অনেকেই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগকে কাজে লাগায় না।
কমফোর্ট জোন এর ধারণাটি প্রথম আসে ১৯০৮ সালে হওয়া একটি সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট থেকে। সেই গবেষণা পত্রে বক্তব্য অনুযায়ী, কমফোর্ট জোন হল সেই পরিবেশগত ও আচরণগত অবস্থান যেখানে মানুষের কাজ কর্ম একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ এবং চাপহীন রুটিন ও ছকের মাঝে আটকে যায়। এটি মানুষকে একটি মানসিক নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। এর মাঝে আটকে পড়া মানুষ নিয়মিত ভাবে সুখী থাকে, তাদের উদ্বেগ কম থাকে, এবং চাপ অনেক কম অনুভব করে।
শেষের অংশটি শুনতে ভালো লাগলেও এর অনেক খারাপ প্রভাব আছে। কমফোর্ট জোনে আটকে যাওয়া একজন মানুষ একদম ছোট কোনও ঝুঁকিও নিতে চায় না। এই কারণে তাদের উন্নতি একটি জায়গায় আটকে যায়।