১৯০৮ সালের একটি সাইকোলজিক্যাল এক্সপেরিমেন্টের প্রধান দুই গবেষক, মনোবিজ্ঞানী ড. রবার্ট এম. ইয়ের্কস এবং জন ডি. ডসন( গবেষণাটি মূলত মানুষের পারফর্মেন্স নিয়ে হয়েছিল) মানুষের পারফর্মেন্স বাড়ানোর জন্য তাকে কিভাবে মানসিক ভাবে প্রভাবিত করা যায়, এবং কি কি প্রভাবের ফলে মানুষের কাজের পারফর্মেন্স বাড়ে বা কমে – সেটাই ছিল গবেষণার মূল বিষয়।
এই গবেষণার ফলে বেশ কিছু নতুন জিনিস জানা যায়, যেগুলো পরর্বতীতে “Yerkes–Dodson law” নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।
ইয়ের্কস ও ডসন বলেছেন, “মানুষের কমফোর্ট জোন তাকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পারফর্ম করায়। স্বাভাবিক অবস্থায় সেই মাত্রা বাড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।পারফর্মেন্স বাড়ানোর জন্য মানুষের অল্প মাত্রার উদ্বেগ প্রয়োজন হয়। খুব বেশি হলে তা আবার পারফর্মেন্সকে খারাপ করবে। স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য একটু বেশি উদ্বেগ সৃষ্টি করা গেলেই মানুষ সাধারণের চেয়ে বেশি কাজ করবে”
ইংরেজী পরীক্ষার দুই দিন আগে দিপু আপু দেখল তার ২ চ্যাপ্টার পড়া হয়নি। এর আগে প্রায় মাসখানেক সময় পেলেও সে সেই চ্যাপ্টার নিয়ে বসেনি।
মাঝে মাঝে মনে পড়লেও পরীক্ষার দুই দিন বাকি থাকতে তার যখন এটা মনে পড়ল – সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে বসল, এবং এক দিনের মধ্যেই চ্যাপ্টার দুটো শেষ করে ফেলল।
অন্যদিকে শামীমা আপু পরীক্ষার দুই দিন বাকি থাকতে টের পেল, তার কিছুই পড়া হয়নি। বলতে গেলে পুরো সেমিস্টার সে বই খুলেও দেখেনি। সে-ও দারুন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তে বসল। কিন্তু এত বড় সিলেবাস দুই দিনে কিভাবে শেষ করবে – এই চিন্তাতেই তার মাথা খারাপ হয়ে যেতে লাগলো। কোনও পড়াই সে ঠিকমত বুঝতে পারছিল না। এবং শেষ পর্যন্ত দুই দিনে এই সিলেবাস কাভার হবেনা – ধরে নিয়ে সে পড়াই বন্ধ করে দিল।
এখানে Yerkes–Dodson law এর প্রভাব কাজ করেছে।
দিপুর দুই চ্যাপ্টার বাকি থাকায় তার মাঝে কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল – এবং সেই কারণে সে দ্রুত পড়া শেষ করতে পেরেছিল। অন্যদিকে শামীমের পুরো বই বাকি থাকায় তার উদ্বেগের পরিমান ছিল অনেক বেশি। এই কারণে সে এতই ভয় পেয়ে গেল যে, পড়তেই পারলো না।
যাই হোক – বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে, কমফোর্ট জোন থেকে বের হওয়ার কথা ভাবতে গেলেই তারা অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এই অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতাই তাদের নতুন কিছু চেষ্টা করতে বাধা দেয়।
নতুন কিছু চেষ্টা করতে গেলে বর্তমান অবস্থার কি হবে, অর্থাৎ “একূল ওকূল – দুই কূল” হারানোর ভয় অথবা নতুন পরিস্থিতি বা জায়গার অনিশ্চয়তা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তোলে – এবং এই কারণেই মানুষ বেশিরভাগ সময়ে তার কমফোর্ট জোন ছেড়ে বের হতে পারে না।
ভবিষ্যতের আশায় কিছু করতে গিয়ে বর্তমানকে হারিয়ে ফেলার ভয়ই মূলত মানুষকে কমফোর্ট জোনের মাঝে আটকে রাখে।