কাজে মন বসেনা, কাজ করতে ভালো লাগেনা, আমাদের মনের কমন ব্যাপার এবং আমাদের চিন্তার সবচেয়ে বেশি প্রাধান্যের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে- কাজে মন না বসলেও যাঁরা জরুরী কাজটি সময়মত করে ফেলতে পারেন, তাঁরাই আসলে সব জায়গায় সেরা স্থান দখল করতে পারেন।
কাজে মন না বসা তাঁদের কাছে একটা অজুহাত মাত্র। মন বসছে কি বসছে না – অথবা, ভালো লাগছে কি লাগছে না – এসব তাঁদের কাছে কোনও ব্যাপারই নয়। কাজ করা জরুরী, তাই কাজ করতে হবে। এবং তাঁরা সেটা করেও দেখান। কেউ কেউ এটা সব সময়েই পারেন, কেউবা চর্চার মাধ্যমে এই ক্ষমতা অর্জন করেন।
সত্যিকথা বলতে কাজে মন না বসলেও ভালোভাবে কাজ করতে পারা এতটা সহজ নয়। তাহলে পৃথিবীর সবাই বড় বড় সফল মানুষ হয়ে যেত। কিন্তু এটা অসম্ভবও নয়। বহু মানুষ এটা করে দেখিয়েছেন। আপনিও পারবেন। শুধু সঠিক উপায়ে চেষ্টা করে যেতে হবে। এই উপায়গুলো হয়তো একদিনেই আপনাকে সুপার প্রোডাক্টিভ বানিয়ে দেবে না। কিন্তু ধৈর্য ধরে চর্চা করে গেলে আপনি যে কোনও অবস্থাতেই প্রয়োজনীয় কাজটি সময়মত সুন্দর ভাবে করে ফেলতে পারবেন।
সুপার প্রোডাক্টিভ হওয়ার অন্যতম শর্ত হল কাজের প্রতি নিজের ভেতর থেকে মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা সৃস্টি করতে পারা। হাই পারফর্মাররা প্রয়োজনমত নিজেদের মধ্যে কাজ করার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারেন। এই কারণেই তাঁরা যে কোনও অবস্থায়ই সেরা পারফর্মেন্স দিতে পারেন, এবং এই কারণেই অন্যদের চেয়ে তাঁরা বেশি সফল।
লক্ষ্যকে ‘ডিজাইন’ করুন
আমরা সব সময়েই লক্ষ্য ঠিক করা এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করার কথা শুনি। কিন্তু শুধু একটি লক্ষ্য ঠিক করা এবং তার জন্য কাজ শুরু করাই কি যথেষ্ঠ? আসলে শুধু লক্ষ্য ঠিক করলেই হবে না। সেটাকে রীতিমত ডিজাইন করতে হবে। চোখ বন্ধ করলেই যেন পুরো রোডম্যাপ চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কর্মীকে কোম্পানীর পক্ষ থেকে টার্গেট ঠিক করে দেয়া হয়, তারা বেশি সফল ভাবে নিজেদের কাজ করতে পারে।
লক্ষ্য ডিজাইন করা মানে একটি লক্ষ্য ঠিক করে তার পূরণের জন্য প্রতিটি কাজ স্পষ্ট ভাবে ঠিক করা।
ধরুন, একজন লোক লক্ষ্য ঠিক করলেন ৩ মাসের ভেতরে তিনি ১০ কেজি ওজন কমাবেন। ওজন কমানোর জন্য তিনি প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করবেন, এবং আগের চেয়ে কম খাবেন। এই ধরনের অস্পষ্ট লক্ষ্য সাধারণত পূরণ হয় না। কারণ লক্ষ্যের অস্পষ্টতার কারণে তিনি আসলে কতটা কি করবেন – সেটাই ভালোমত বুঝতে পারবেন না। এই কারণে ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত কাজ করে যাওয়ার মটিভেশনই তাঁর মধ্যে আসবে না। তিনি যেদিন ভালো লাগবে, সেদিন বেশি ব্যায়াম করবেন। আর যেদিন লাগবে না, সেদিন হয়তো করবেনই না।
এর বদলে তিনি যদি লক্ষ্য ঠিক করেন, তিনি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা শরীরচর্চা করবেন। এর মধ্যে থাকবে ৩০ মিনিট দৌড়ানো, বাকি ৩০ মিনিট এর ১০ মিনিট পেটের চর্বি কমানোর ব্যায়াম, ১০ মিনিট বুকডন, এবং ১০ মিনিট জাম্পিং জ্যাক – তাহলে তাঁর লক্ষ্যটি অনেক বেশি নির্দিষ্ট হবে।
এছাড়া দুপুর বেলায় ১ প্লেটের বেশি ভাত খাবেন না, রাতের বেলা ৩টি রুটি ও সব্জী খাবেন। – এর ফলে তাঁর লক্ষ্যটি অনেক বেশি নির্দিষ্ট হবে। তিনি খুব ভালোভাবে জানবেন, কখন তাঁকে কি করতে হবে। এভাবে প্রতিদিনই তাঁর ওজন কমানোর ব্যাপারে নতুন করে মোটিভেশন সৃষ্টি হবে। প্রতিদিন এই নির্দিষ্ট কাজগুলো না করলে তাঁর নিজেরই ভালো লাগবে না।
আপনার লক্ষ্য যেটাই হোক, সেটাকে যত ভালোভাবে পারেন বিস্তারিত ভাবে ডিজাইন করুন। ঠিক কখন, কোন কাজটি কিভাবে ও কতক্ষণ করবেন – তা খুব ভালোভাবে ঠিক করুন। প্রয়োজনে লিখে রাখুন। করনীয় কাজগুলো লিখে রাখলে সেই কাজ করার আগ্রহ ও তাকে গুরুত্ব দেয়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়