একটা মফস্বল শহরের রাজকীয় পরিবার থেকে নিমিষেই নিম্ন-মধ্যবিত্ত বনে যাওয়া পরিবারেই জন্ম হয় কাব্যের।
জন্মের পর থেকে ছেলে ডাক্তার হবে নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবে এই চিন্তায় ব্যাস্ত সবাই,এদিকে কাব্যের প্রথম পছন্দ ক্রিকেট।কিন্তু পরিবার সেটাতে রাজী নয়,কারন পরিবারের বক্তব্য হলো- ক্রিকেট কোন সিকিউর পেশা নয়, কারন এইটা দিয়ে সমাজ মেইনটেইন করা যাবেনা।
যাহোক সেই স্বপ্ন বাদ দিয়ে কাব্যকে অন্যকিছু ভাবার সুযোগ না দিয়েই তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বলা হলো,এবং সেখানেও তার পছন্দে নয়,বরং তার পছন্দ কম্পিউটার আর পরিবার চাই সিভিল।
শেষমেষ এ যাত্রায় কারো কথায় কান না দিয়ে কাব্য কম্পিউটারে ভর্তি হয়ে গেলো,এই যে নিজেফ সিধান্তে ভর্তি হওয়া এই ব্যাপারটার ঝাল টের পেয়েছে কাব্য টোটাল ছাত্র জীবনে।
কেননা এই সময়ে কেউ তাকে সাপোর্ট করেনি,এমন কি বাবা-মায়ের কাছেও মনে হয়েছে মেধাবী ছেলেটা তার ভবিষ্যত নিজের হাতে নষ্ট করেছে।
মামা আর খালারা বলেছে এই ছেলে এখনই এমন বেয়াড়া হলে ভবিষ্যতে বাবা-মাকে দেখবেও না,আর কাব্যের চাচা ফুফুরা তো জানেও না কাব্য কি পড়ে কি করে।শুধু জানে লেখাপড়া করে সে চাকুরী পাবেনা।
এত কিছুর মাঝেও কাব্য স্বপ্ন দেখতো একটাই- তার অনেক সম্মান হবে, তাকে চিনবে সবাই।আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সে সব টাই করবে এবং করতে রাজী।
যাহোক,এগুলি বলা অনেক সহজ হলেও করাটা অনেক কঠিন,এইটা জানে কাব্য।এদিকে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান বলে সংসারের হাল ধরা ও সকলের মুখ বন্ধ করার জন্য একটা চাকুরী কাব্যকে পেতেই হবে দিনশেষে,নইলে নিজের সিধান্ত যে ভুল সেটিও প্রতিয়মান হয়ে যাবে সকলের নিকট।
অবশেষে কাব্য তার ইঞ্জিনিয়ারিং এর গ্রাজুয়েশন কম্পলিট করার আগেই সোনার হরিন নামক চাকুরীটা পেয়েই গেলো,এবং সেটা সম্পূর্ন নিজ যোগ্যতা বলেই।
না কারো সুপারিশ আর না কারো দয়া কিংবা টাকা পয়সা দিয়ে নয়।কাব্যের পরিবার এই চাকুরীতে খুশি এবং সবাই যেন এখন এই সাকসেসফুল লাইফের ভাগীদার হতে চাই।
মামারা বলে আমাদের ভাগ্নে তো ব্রিলিয়ান্ট ওকে দেখে শেখার আছে অনেককিছু,চাচারা বলে আমাদের ভাইপো আজ সরকারি চাকুরী পেয়েছে।ছেলেটা মারাত্বক মেধাবী।সকলেই তাদের পরবর্তী জেনারেশনকে কাব্যের উদাহরণ দেয়।এটা জেনে কাব্যের ভালো লাগার চেয়ে লজ্জা ও অপরাধবোধ কাজ করে বেশি।
যখনই কাব্যের চাচাতো কিংবা মামাতো চাই বোন গুলি তার কাছে সাজেশন চাই,কাব্য বলে- সেটাই করো,যেটা করতে তুমি ভালোবাসো, সফলতা সেখানেই নিহিত।
কাউকে দেখে নয় কিংবা শুনেও নয়,নিজের সফলতার লক্ষ্যমাত্রা নিজেকেই ডিফাইন করতে হবে।
যাহোক,কাব্যের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কাব্য নিজের একটা সফটওয়্যার ফার্ম করেছে,লক্ষ্য একটাই- ঠকবে না কেউ আইটি সার্ভিস নিয়ে,ব্যবসা শুধু টাকার জন্য যেন না জয়,এইটা হবে সার্ভিস যা সত্যিকারের সেবা দিবে সবাইকে। বিশ্বাস অর্জন করে ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে।মানুষ একনামে চিনবে তাকে আর তার প্রতিষ্ঠানকে।টাকার অংক দিয়ে কাব্যের ভালোথাকা বা সফলতা নয় বরং সে চাই তার সফলতা ঐখানেই হোক।
৮ বছর চাকুরী করেও সেই শান্তিটা কাব্যের আসেনা যা সে তার স্বপ্নের পিছনে ছুটে পেয়েছে।এজন্য তার বক্তব্য নিজেকে চাকুরী থেকে সরিয়ে নিয়ে শুধু কাজ করতে চাই নিজের স্বপ্নের জন্য।
এখন সবার বক্তব্য হলো- সোনার হরিন সরকারী চাকুরী মানুষ পাইনা,আর কাব্য তুমি ছেড়ে দিবা? এইটা কেমন পাগলামো সিধান্ত?
সকল বাহবা দেয়া মানুষগুলিও এখন তার বিপক্ষ্যে যাচ্ছে।
কিন্তু কাব্যের প্রশ্ন- সফলতার অর্থ কি? টাকা? নাকি সম্মান? চাকুরী নাকি ব্যাবসা?
আসল উত্তর হলো- যার যার কাছে সফলতা তার তার স্বপ্ন পুরনের মধ্যেই নিহিত।
কাব্যের স্বপ্ন তো এই চাকুরী করে নিজেকে বন্দি করে রাখা নয়,তার স্বপ্ন সব সময় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা,সেটাও তার কর্মের মাধ্যমে।
সমাজ,মানুষ কি বলবে এসব নিয়ে ভাবলে কি আর নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে? কিংবা সফলতা আসবে?
আসুন এই রকম সাহসী কাব্যদের পাশে দাঁড়ায়,তাদের সাহস যোগায়, যার যার স্বপ্নের নিকট তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করি।