সফলতার সংজ্ঞা অবশ্যই মানুষ ও তাদের লক্ষ্যভেদে আলাদা হয়।আমার আজকের গল্পে সফলতার যে সংজ্ঞা আমি এঁকেছিলাম সেই স্থানে আমি পৌছে গেছি,আলহামদুলিলাহ। চলুন কি সেই সফলতা দেখে আসি।
আপনারা যারা নিজের উদ্যোগের ক্যাপিটাল কম বলে মার্কেটিং করতে পারছেন না নিজের ইচ্ছামত তাদের জন্য এই টার্মটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।আজকের আলোচনায় আমি এই টার্ম নিয়েই লিখবো।
আপনার কাছে ক্যাপিটাল হিসাবে টাকার কমতি থাকতে পারে,কিন্তু সময়ের তো কমতি নেই। কেউ যদি নিয়ম করে সময় দিতে পারেন নিজের উদ্যোগের পিছনে তাহলে অবশ্যই সেটাই আপনার ইনভেষ্টমেন্ট।
আগষ্ট, ২০১৬– আমি ভেবে দেখলাম আমার যেহেতু আইটি ফার্ম তাই আমায় অনেক ব্যাপারেই ডাক্তারের ভুমিকা পালন করতে হয়, অনেকেই বুঝলেন না তো?
ডাক্তারকে যেমন যেকোন সময়ে পরামর্শ দিতে হয় বিভিন্ন রোগ নিয়ে ঠিক তেমনই আমাকেও আইটির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সমাধান দিতে হয় সেই ২০০৭ এর পর থেকেই।তবে ডাক্তার আর আমার মাঝে পার্থক্য হলো- ডাক্তার সাহেব সমস্যার সমাধানের পরামর্শ দেন ফী নিয়ে, আর আমায় দিতে হয় ফ্রীতে।
ভাবলাম একটা ইউটিউব চ্যানেলে যদি আমি কিছু কমন সমস্যার ভিডিও বানিয়ে রাখি তাহলে তো সমস্যা নাই, একই সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন এলে আমি শুধু ভিডিও লিংক দিয়ে দিব। তাহলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।এতে আমার সময় বেঁচে যাই,একই সাথে উপকৃত হবে আমার ছাত্র০ছাত্রী সহ আইটি নিয়ে জানতে চাওয়া মানুষগুলি।
১২ই আগষ্ট, ২০১৬– এই স্বপ্ন আর ইচ্ছা থেকেই তৈরি করে ফেললাম আমার ইউটিউব চ্যানেল ICT CARE. প্রথম ভিডিও প্রকাশ করেছি ৭ই সেপ্টম্বর,২০১৬, সেটা ছিলো আমার চ্যানেলের লোগো ইন্ট্রো।
কেন আজ এই গল্প বলছি?
আমরা যারা ইউটিউব নিয়ে কাজ করি কিংবা করতে চাই তারা জানি যে- ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন করতে পারাতা একটা সফলতা,আর এইটা এমন একটি সফলতা যেটার সুফল আপনি আগামী জীবনের সব দিন ভোগ করবেন,শুধু আপনিই নন,আপনার পরের সকল প্রজন্ম এই সুফল ভোগ করবে।
কিভাবে এই সুফল সবাই ভোগ করবে?
আমার চ্যানেল মনিটাইজেশন হয়েছে আরো ২২ মাস আগে, আর আমরা জানি যে মনিটাইজেশন হলে আমাদের চ্যানেলের ভিডিও গুলিতে ইউটিউব থেকে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়।এবং এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন বাবদ আমাদেরকে ডলার দিয়ে থাকে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। যেটা আপনি ভোগ করতে পারবেন আজীবন ধরেই (কিছু শর্তের ব্যাপার আছে,জানতে চাইলে আমি আলদা পোষ্টে লিখে জানাবো)।
আমার চ্যানেলের যে গ্রোথ তাতে ইউটিউবের পার্টনার প্রোগ্রামের অংশ হতে যেসকল শর্ত দরকার হয় তার সব গুলি ফিলাপ হয়ে যায় অটোমেটিক প্রতিবছর। সেটা ইনশাআল্লাহ আমি আর কাজ না করলেও ফিলাপ হবে।
তাহলে দেখুন, এই যে ইনকামটা হবে সেটা আমার পরে আমার সন্তান ভোগ করতে পারবে এবং সেটা বিনা পরিশ্রমেই এক প্রকার। তাহলে এইটা নিশ্চয়ই একটা রয়েল ইনকাম।
এই পর্যায়ে আসতে আমি কি করেছি?
আমি শুধু বিগত ৫ বছর ডেডিকেটেড ভাবে কাজ করেছি, নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেছি,সময় দিয়েছি,শ্রম দিয়েছি আর লেগে থেকেছি একটা লক্ষ্যকে পাখির চোখ করে।
এই পথে বাঁধা কেমন ছিলো?
এমন কোন সফলতা নেই যেখানে বাঁধা নেই, আমার চ্যানেলে বছর তিনেক কাজ করার পরে এলো মনিটাইজেশন, কারন আমি টাকা ব্যয় করে বুষ্ট করিনি কোন ভিডিও কোনদিন। শুধু কন্টেন্টে ফোকাস করেছি।মনিটাইজেশন চলে আসার পরে ১০০ ডলার হয়ে গেলো,টাকা তোলার আগে বেঁধে গেলো বিপত্তি।
বিপত্তির নাম পিনকোড
ইউটিউব কর্তৃপক্ষের দেয়া ৬ ডিজিটের যে পিন সংখ্যা সম্বলিত চিঠি তারা পাঠালো সেতা পড়ে গেলো করোনার প্রথম ঢেউ এর মাঝে, গেলাম পিছিয়ে।সেটা এতটাই যে- টানা তিনবার চিঠি দিয়েও আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। অবশেষে গতকাল আমি আমার আইডি কার্ড ও ব্যাংক স্টেটমেণ্টের সাহায্য ভেরিফাই করে নিয়েছি, এবং আলহামদুলিলাহ চ্যানেল ভেরিফাই করে আমার চ্যানেলে আবার বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে।
আই সকল যাত্রাপথে আমি পেয়েছি অনেক মানুষকেই, আবার টিটকারিও পেয়েছি তার চেয়ে অনেক গুনে,কিন্তু হাল ছেড়ে দিইনি। আমার লক্ষ্য ছিলো আমার ছেলের জন্য হলেও আমায় এই কাজটা করে যেতে হবে।আলহামদুলিলাহ আমি সেই দিনের দেখা পেয়েছি।
আর যাত্রাপথে আমার প্রধান ক্যাপিটাল ছিলো সময়,শুধুমাত্র সময়কে ইনভেষ্ট করেই আজকের এই সফলতা আমার কাছে এসেছে।এইটা অনেকের কাছেই কোন ব্যাপার নাও হতে পারে।কিন্তু ঐ যে প্রথমেই বলেছি- সফলতার সংজ্ঞা এক এক জনের কাছে এক এক রকম।আমার কাছে এই অর্জনই আমার সফলতা।
সময়কে গুরুত্ব দিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকলে, সময় কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়না।