সময়ের মূল্য, আহারে এই রচনা পড়তে পড়তে জিবন শেষ,আবার এখন নাকি এইটা নিয়ে কথা বলে সৌভিক ভাই।নাহ,আসলে আমি বলিনা, এইটা সবাই বলে।
সময় নষ্ট করা মানে জীবনের অংশ নষ্ট করা । আপনি সময়কে মূল্য না দিলে সময়ও আপনাকে মূল্য দিবে না। Value of Time
একটি অপরুপ সুন্দর গ্রামে দুই জন বন্ধু ছিল। একজনের নাম ফরহাদ এবং অন্যজনের নাম শহিদুল। দুজনেই ছোট বেলা থেকে খুব ভালো বন্ধু এবং পড়াশোনাতেও খুব ভালো। একজন ক্লাসে প্রথম হলে অন্যজন দ্বিতীয় হতো প্রতি ক্লাসে। গ্রামের সবাই তাদের দুইজনকে অনেক ভালবাসে। দুই বন্ধুরই স্বপ্ন তারা অনেক বড় হবে। দু্ই বন্ধু মিলে ঘুরে বেড়াবে সারা বিশ্ব।
স্বপ্নগুলো নিয়ে তার দুইজন প্রায়ই আলোচনা করত। কবে যে তাদের এমন দিন আসবে যবে তারা সারা বিশ্ব ভ্রমণ করবে। এভাবে করে তারা দুই বন্ধু বড় হতে লাগলো।
দেখতে দেখতে এস এস সি পরীক্ষা চলে আসলো। দুইজনই একসাথে খুব ভালভাবে এস এস সি পরীক্ষা দিল। এস এস সি পরীক্ষার পর তারা একসাথে তাবলিগে গেল ৭ দিনের জন্য। এই সাতদিন তার একসাথে সারাক্ষন থাকার সুযোগ পেল। প্রতি রাকাত নামাজ আদায় করে দুইজনই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দোআ করতো।
এক সাথে খুব ভাল সময় কাটলো সাত দিন। তাবলিগে থাকা অবস্থায় তারা সিদ্ধান্ত নিল জেলা শহরের ভাল কলেজটিতে তার দুই জনেই ভর্তি হবে রেজাল্টের পর।
কিছুদিনের মধ্যেই রেজাল্ট বের হলো, দুইজনই স্টার মার্ক সহ স্কুলের সেরা রেজাল্ট করেছে। এলাকায় তাদেরকে নিয়ে সবাই আনন্দিত। তাদের বাবা মাও অনেক খুশি। রেজাল্ট বের হবার পর তার তাদের শিক্ষকদের কাছে গিয়ে দোআ নিয়ে আসলো। দুই জন তাদের পরিবারের সাথেও আলোচনা করল যে তার জেলা শহরের কলেজে ভর্তি হবে। পরিবারও তাদের কথা মত তাদেরকে জেলা শহরের কলেজে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে দিল।
যথারিতি তারা কলেজের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করল এবং থাকার জন্য একটি মেস ভাড়া করল। এখন তারা দুই বন্ধু একসাথেই থাকে সুযোগ পেলেই তারা তাদের স্বপ্নের কথা আলোচনা করে। কবে তারা বিশ্বটাকে দেখবে, কবে আসবে সেই মহেন্দ্র ক্ষন। দুই বন্ধু খুব ভাল ভাবে পড়াশোনা করতে লাগলো। কিছুদিনের মধ্যেই তারা শিক্ষক এবং অন্যন্যদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠল। প্রথম বছরের পরীক্ষায় তারা দুইজনেই খুব ভাল রেজাল্ট করলো।
দ্বিতীয় বর্ষে উন্নীত হওয়ার কিছুদিন পর পাশের বাসায় একটি নতুন ভাড়াটিয়া আসলো। একদিন ফরহাদ জানালা খুলতেই দেখলো একটি মিষ্টি মেয়ে তাদের জানালার পাশে বসে বসে বই পড়ছে। সেদিন দুজনে চোখাচোখি হলেও কোন কথা হলো না। রবিনের পড়ার টেবিলের সামনেই জানালা আর ওপাশের জানালাটাও একদম সামনেই। প্রায়ই পাশের বাসার মেয়েটির সাথে তার দেখা হয় কিন্তু কোন কথা হয় না।
একদিন ফরহাদ এবং শহিদুল দুজনই প্রাইভেট পড়তে গিয়েছে। যাওয়ার সময় জানালাটা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছে। যাওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রচন্ড বৃষ্টি । এদিকে জানালা খোলা থাকায় বৃষ্টির পানি এসে ফরহাদের বইগুলো ভিজে যাচ্ছিল। মেয়েটি দেখতে পেয়ে একটা লাঠি দিয়ে কোনমতে জানালা চাপিয়ে দিয়েছে যাতে বইগুলো না ভিজতে পারে।
দুই বন্ধু যখন বাসায় আসলো দেখলো ফরহাদের কিছুটা বই ভিজে গেছে, কিন্তু জানালা কে চাপিয়ে রেখেছে?
সন্ধার পর পড়তে বসছে ফরহাদ এমন সময় মেয়েটি এসে বলল বৃষ্টি এসে তো আপনার সব বই ভিজে যাচ্ছিল। আমি কোনমতে জানালাটা চাপিয়ে দিয়েছিলাম। অহ্ আচ্ছা, তাহলে আপনি জানালা চাপিয়ে দিয়েছিলেন।
ধন্যবাদ আপনাকে। ধন্যবাদ দিতে হবে না। দেখছিলাম বইগুলো ভিজে যাচ্ছে আর আপনাদের কাউকেই বাসায় দেখছিলাম না তাই একটু চাপিয়ে দিয়েছিলাম এটা বললো মেয়েটি।
মেয়েটিঃ কি নাম আপনার?
ফরহাদঃ আমার নাম ফরহাদ আর আমার বন্ধুর নাম শহিদুল, সে এখন ঘুমাচ্ছে। সারা রাত পড়বে তো তাই। আপনার নাম কি?
মেয়েটিঃ আমার নাম পপি। আমি ক্লাস দশম শ্রেনীতে পড়ছি। আপনি কিসে পড়ছেন?
ফরহাদঃ আমরা দুজনই ইন্টার সেকন্ড ইয়ারে পড়ি।
এর মধ্যেই পপি মায়ের ডাক পপি… এইদিকে আয় তো মা।
এভাবে কিছুদিন চলার পর তার দুইজন বাহিয়ে দেখা করা শুরু করল। ফরহাদ আস্তে আস্তে ক্লাস ফাঁকি দিয়েও পপির সাথে ঘুরতে বের হয়। আর পপি প্রাইভেট পড়ার কথা বলে ফরহাদেরর সাথে ঘুরে বেড়ায়। দারুন সময় কাটছে ফরহাদ ও পপির। শহিদুল টের পেয়ে বন্ধুকে অনেক বার বুঝানোর চেষ্ঠা করল যে এভাবে পড়াশুনা করলো তো তুই ফেইল করবি।
এই শুনে
Forhad Hossain বললো আরে এটাইতো সময় লাইফ এনজয় করার এখন না করলে কি বুড়া হলে করবো নাকি। উল্টো
Shahidul Islam কে ফরহাদ বোঝায় লাইফটা এনজয় কর। পপির একটা ফ্রেন্ড আছে তুই ওর সাথে সময় কাটা।
এভাবে ফরহাদ তার বেশির ভাগ সময় পপির সাথে ঘুরে বেড়ায় আর শহিদুল সারাদিন রাত পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে। দেখতে দেখতে ফাইনাল পরিক্ষা চলে আসলো। এবার ফরহাদ তো কোন কুলকিনার পাচ্ছেনা কি করবে। দুজনেই পরিক্ষা দিল। রেজাল্ট আউট হলো ফরহাদ কোনমতে সেকেন্ড ডিভিশন পেলো। আর শহিদুল আবার কয়েক বিষয়ে লেটার সহ স্টার র্মাক পেল।
ভর্তি পরিক্ষায় ফরহাদ কোন পাবলিক ইউনির্ভাসিটিতে এপ্লাই করার সুযোগই পেল না। আর শহিদুল চান্স পেলো হলো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফরহাদ কি করবে? সে জেলা শহরের সেই কলেজেই ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে গেলো।
কিছুদিন পর ফরহাদ ও পপি বাড়ীতে না জানিয়ে বিয়েও করে নিল। আর শহিদুল সফলতার সাথে অনার্স শেষ করল। মাস্টার্স পড়া কালিন সময় সে উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করল। কিছুদিন পর কানাডা থেকে অফার আসলো শতভাগ স্কলাশীপ সহ। শহিদুল কানাডা যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেল।
শহিদুল কানাডায় অনেক বড় একটি মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে চাকরী পেয়ে গেলো এবং কানাডায় স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ পেলো। এখন শহিদুল কানাডিয়ান পাসর্পোট ধারী। বিশ্বের যেকোন দেশে যেতে তার কোন সমস্যা নেই। কিছুদিন পর বিয়েও করলো। মেয়েটিও কানাডায় পড়তে গিয়েছিল।
এখন তারা দুইজন সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হয়ে যায়।
অন্যদিকে ফরহাদ তার পড়াশুনাই শেষ করতে পারলো না। তারপরও এখন ছোটখাটো একটা চাকরী করছে। শহিদুলের লাইফ এখন ফরহাদের কাছে স্বপ্ন। যদিও তার সুযোগ ছিল শহিদুলের মত লাইফ কাটানোর।
সময়ের ব্যবধানে দুই বন্ধুর জীবনযাপন সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেল। শুধু সময়ের মূল্য না দেয়ার কারনে।
সময়ের সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে তার মূল্য সারা জীবন ভোগ করতে হবে যেমন রবিন এখন করছে।
তাই “সময়ের মূল্য যথাযথ দিতে হবে কারণ সময়কে মূল্য না দিলে সময়ও কিন্তু আপনাকে মূল্য দেবে না”।প্রতিটি মূহুর্তকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করূন, সময় চলে গেলে আর সেটাকে আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না।