এই পোষ্টে হয়তো আপনাদের মনের অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।যদিও আমি চারিত্রিকভাবেই ব্যাখা দেয়া অপছন্দ করি,আমি সব সময় মনে করি-যেখানে কোন কাজ বা সিচুয়েশনের ব্যাখা দিতে হয় সেখানে আসলে কোন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকেনা।যেহেতু আপনাদের মাঝ থেকে এমন প্রশ্ন অনেক আসে তাই আজকে এই খোলাচিঠি আমি লিখছি।
জুলাই ২০২০, থেকে আমি মুলত বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের সাথে কাজ করা শুরু করি।আমি আইটিতে বিজনেস করতে নেমেছি ২০১২ থেকে যেটার অফিশিয়াল রুপ দিতে পেরেছিলাম ২০১৪ তে,বাসার ড্রয়িং রুমে।আর পুরোপুরি অফিশিয়াল করতে পেয়েছিলাম ২০১৫ তে।সেই থেকেই আমি মুলত আইটি নিয়ে কাজ করি।
কাজের শুরু থেকেই আমার একটাই মোটিভ ছিলো-কেউ যেন আমার দ্বারা কোনভাবেই না ঠকে।কম্পিউটার সায়েন্সে গ্রাজুয়েশন করে আমি কেন বিজনেস করবো এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি জীবনে বহুবার (এখনো হই,তবে সবাই সাহস করে বলতে পারেনা)।
আমার পরিবার ও আমাকে চেনা মানুষগুলির বক্তব্য এমন- সৌভিক এত ট্যালেন্টেড ছেলে, ওর বি সি এস দেয়া উচিত ছিলো,ওর জন্য ঐটা বেটার।কিন্তু ঐ যে বললাম,আমি বেশ ঘাড় ত্যাড়া মানুষ।আমার কাছে মনে হয়েছে-বি সি এস ক্যাডার হলে,আমি কেন সরকারের এতগুলা টাকা নষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লাম? যদিও টিচিং প্রফেশনে থাকার কারনে,আমাকে সবাই মাষ্টার বলেই ডাকে,ইঞ্জিনিয়ার আর কেউ বলেনা।
যাহোক,উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে গেলাম।ন্যায্য দামে সঠিক মানের সার্ভিস পেয়ে অনেকেই ঝুঁকে পড়লো আমার আইটির সেবাতে।তখন আমি দুইটা বড় বড় গ্রুপে নিয়মিত লিখতাম।ফ্যান-ফলোয়ার বলতে যা বোঝায় সেটা থেকে শুরু করে অর্থ, কোনটাই কম আসছিলোনা।কিন্তু সমস্যা একটা অনুধাবন করতে পারলাম।
গ্রুপ গুলিতে কিছু বাঘা (গ্রুপ এডমিনদের খুব একনিষ্ঠ ও কাছের কিছু মানুষ) পাবলিক ও আইটি সেবা দিতেন,কিন্তু সেবার মানের চেয়ে টাকার অংক নিতেন অনেক বেশি।আর তাই তাদের চেয়ে আমাকেই সকলে প্রাধান্য দিতে শুরু করলেন,এটা অবশ্যই গ্রুপ সংশ্লিষ্ট কারো ভালো লাগেনাই।আমি পড়ে গেলাম নিদারুন রোষানলে,গ্রুপ এডমিন থেকে শুরু করে তার সকল চেলা ও গ্রুপের সদস্যরা শুরু করলো আমার কন্টেন্ট কে নকল করে, কপি করে লেখা।
আমার লেখার মুল উদ্দেশ্য ছিলো- জ্ঞান সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া,আমি যখন ২০১৭ সালে ই-কমার্সের প্রথম বইটা লিখি, তখনো বাংলাদেশে এই সকল গ্রুপের জন্ম হয়নি,আমার গ্রুপ ICT CARE যখন ওপেন হয়েছে,তখনো এইসব গ্রুপের জন্মই হয়নি।তাই লেখা ছড়িয়ে যেতো, আমার খারাপ লাগতোনা কিন্তু কিছু অসাধু পাবিলিক আমার লেখা হুবহু লিখে নিজের নামেই চালাতো।এটা কষ্ট দিতো।তবুও আমি আমার লেখা চালিয়ে গেলাম।
এরপরে আমার ক্লায়েন্টদের মধ্যে কিছু মানুষ (যাদেরকে আমি খুব কাছের নজরে দেখেছি) আমাকে উতসাহিত করলো- আমার নিজের আসলে কিছু করা উচিত।এই জিনিসটা আমাকে বেশ ভাবালো তখন,যখন দেখলাম-আমি এত কিছু কন্ট্রিবিউট করছি অথচ নাম হচ্ছে সকল কপিবাজদের এবং সত্যি বলতে আস্তে আস্তে দেখলাম ও কিছু মাধ্যম থেকে কারন উদ্ঘাটন করে দেখলাম- আসলে ঐ সকল গ্রুপ গুলিতে হাইলাইটেড হতে গেলে, ট্যালেন্ট আর সততার চেয়েও যেটা বেশি গুরুত্ব বহন করে সেটি হলো- নিজের অস্তিত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যকে মান্য করে কাজ করা,তাকেই হুজুর হুজুর করা।
আমার দ্বারা ছোট থেকেই এসব কালচার নেই।মনে হয় আমার এই মান্য করার হাড় টা জন্মের আগেই নাই হয়ে গেছে।কারন-আমি ছোট থেকেই ভুল কে ভুল,আর সঠিক কে সঠিক বলতে শিখেছি।
সেই চিন্তায় অক্টোবর ২৮, ২০২০ তে জন্ম হয় এই গ্রুপের। দুই বছরে মেম্বার সংখ্যা অনেক কম বলে অনেকেই আমাকে বলেন কিন্তু বিশ্বাস করেন-আমি কোনদিন কাউকে গ্রুপে একটা মেম্বার এড করার নিয়ম করে দিই নি।আমি চেয়েছি একটা সঠিক শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম হোক,যেখানে সেল করা উদ্দেশ্য নয়,বরং এখান থেকে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা নিজেদের কাজগুলি বুঝে নিক।নিজেকে ঝালিয়ে নিয়ে শিখে নিয়ে, সেই জ্ঞান নিজের উদ্যোগে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করুক।
এই গ্রুপেই সারাজীবন থাকতে হবে এবং এখানে থাকলে অন্য কোথাও যাওয়া যাবেনা,এমন চিন্তাও কখনো করিনাই।কারন, উদ্যোক্তারা খুব অসহায় (সবাই না) হয়ে বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে। আমি এই ধান্দাবাজি থেকে বাঁচতে শেখাতে চেয়েছি।একটা গ্রুপ কেন্দ্রিক কখনো বিজনেস হতে পারেনা এই ম্যাসেজটা দিতে চেয়েছি।এবং এই ম্যাসেজ থেকে উপকৃত হওয়া মানূষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।সেটা তারা মুখে বা পাবলিক প্লেসে স্বীকার না করলেও, অন্তর থেকে স্বীকার করেই,নইলে আল্লাহ পাক নারাজ হবেন নিশ্চিত।
আমি কখনোই বাঁধা দিই নি,কারন কি জানেন?
আমি জানি-আমার সাথেও সবাই কথা বলে বা আমাকে মান্য করে কিংবা আমার সাথে দেখা করতে দূর দুরান্ত থেকে আসে তার কারন হলো-আমার দ্বারা তার উপকার হয় এবং আমাকে ভালোবাসে। তাহলে,অন্য এমন যেখানে যার উপকার হবে,ভালো লাগবে সেখানেই সে যাবে,এতে আপত্তির কিছু নেই। বরং এই গ্রুপ ছেড়ে কেউ চলে গেলেও আপত্তি নেই,শুধু আমাকে বলে গেলেই হবে- ভাই,আমি এই গ্রুপের দ্বায়িত্ব ছেড়ে ওমুক গ্রুপে যাবো,ঐটা বেটার কি এইটা খারাপ এটাও বলা লাগবেনা।
মজার একটা ব্যাপার হলো-যারা আমাকে উতসাহিত করেছিলো- অন্য একটা গ্রুপ খুলতে,তারাই এখন অন্য গ্রুপে একটিভ এবং ঐখানে নীতি কথা লিখে বেড়াচ্ছে,অথচ একদিন আমার সুনাম করতে করতে মুখে ফ্যানা উঠে যেতো।কিন্তু কেন আজ এমন হচ্ছে?
ঐ যে, সৌভিক তেলেও গলে না, সৌভিক হাওয়া নিয়ে কাউকে অযাচিত সুবিধা দেয়না।আমি নীতিতে বলিয়ান এক মানুষ যার ১০০% ইনকাম হালাল ও সৎভাবে হয়।
আমি যদি এই গ্রুপ ক্রিয়েট না করতাম,সবকিছু মেনে নিয়ে গ্রুপ গুলিতে একটিভ থাকতাম-তাহলে হয়তো গ্রুপের খুব কাছের কেউ হয়ে যেতাম।আরো বেশি ইনকাম হয়তো করতাম কিন্তু এতে মানসিক শান্তি আমি পেতাম না।আমার নিজস্বতা কিংবা স্বকীয়তা বজায় থাকতোনা।
আমি যা পেয়েছি,আল্লাহ পাক আমাকে যা কিছু দিয়েছেন,তার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা আর শুকরিয়া আদায় করি,আলহামদুলিলাহ।অনেকেই আমার সাথে অন্য লীডারদের কম্পেয়ার করেন,তাদেরকে বলবো-আমি সৌভিক,আমি আমার মত।ই-কমার্স ইন্ডাষ্ট্রিতে আমার চেয়ে কম বয়সে অন্য কারো অর্জনের চেয়ে আমার অর্জন অনেক বেশি।
এইদেশে আমার লেখা ই-কমার্স বই যখন বাজারে এসেছে তখন ঐ সকল গ্রুপের জন্মই হয়নি,আমার ব্যাকগ্রাউন্ড আর জন্ম থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ে থাকা,কিছু অভিজ্ঞতা আর জ্ঞান অন্তত আমার মাঝে আছে,আমি সেগুলি দিয়েই সবার উপকারে লিখি এবং এই গ্রুপেই শুধুমাত্র লিখি।আর কোথাও লিখিনা।তাইবলে,আমি কাউকে অসম্মান করিনা।
আমার ভাল লাগেনা তাই কোথাও আমি নাই, আপনার ভালো লাগলে থাকবেন ও যাবেন।আমি শুধুমাত্র এই গ্রুপকেই ভালোবাসি তাই এখানেই লেগে থাকি। সবার ভালোবাসা তো এক নয়, সবাই পয়েন্ট অফ ভিউ ও এক নয়।
অনেকেই আমাকে বলেন প্রতিনিয়ত- ভাই আপনার বন্ধু-বান্ধবীরা ০৭/০৯, তারা সবাই অন্য গ্রুপে।অথচ তাদেরকে আপনিই চিনিয়েছেন,তাদের পায়ের নিচের মাটি আপনি শক্ত করেছেন।তারা কেন নাই?
আসলে ভাই- আমি কাউকেই কোথাও বেঁধে রাখিনি,একজন শিক্ষকের কাজ শেখানো।আর ছাত্র-ছাত্রী সেটা শিখে যেখানেই হোক,নিজের লাইফে প্রয়োগ করে ভালো থাকলেই ভালো লাগা আমার। আর ০৭/০৯ আমার এস এস সি ও এইচ এস সি এর পরীক্ষার সাল,এই সালে যারাই পরীক্ষা দিয়েছে তারা আমার ব্যাচমেট,বন্ধু নয়।বন্ধুত্ব কি এতই সহজ রে ভাই?
যাহোক, এতকিছু লিখলাম, তার কারন হলো-অনেকের মনের প্রশ্ন ছিলো তাই।আমি আবার ক্লিয়ার করছি- কারো উপরে আমার কোন রাগ,ক্ষোভ কিংবা কোন কমপ্লেইন নেই।বরং আমি এত কথা বলছি- নিজে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।মানূষ মাত্রই ভুল করে,আর আমার কোন কর্মকান্ডের জন্য যদি কেউ কখনো কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন,তাহলে নিজগুনে ক্ষমা করে দিবেন।
আশা করছি-সকলের সকল প্রশ্নের উত্তর এখানেই আছে,আপনারা এই নিয়ে আমাকে আর কিছু ইনবক্সে না বললেই আমি খুশি হবো।একটা গ্রুপকে চালাচ্ছি কিন্তু জীবন সপে দিয়ে নয়।
আজ অবধি ডি পি বি এর যত ইভেন্ট করেছি,সকল ইভেন্ট সফলভাবে করতে পেরেছি,সবার চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা দিয়ে উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে কম খরচ করিয়েছি।কোন ইভেন্টের কোন অর্থ নিজের হাত দিয়ে খরচ করিনাই,সবটাই দ্বায়িত্ব বন্টন করেই খরচ করিয়েছি।এবং আপনাদের সামনেই তা ঘটেছে।
আসছে ২৮ অক্টোবর, ডি পি বি এর জন্মদিন।এই উপলক্ষ্যে কোন মিট আপ করবো কিনা, মেলা করবো কিনা অনেকেই জানতে চেয়েছেন।উত্তর দিচ্ছি- ” একটা পোষ্টে কমেন্ট করলে কিংবা রিয়াক্ট করলেই অনেকেই নাকি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন,সেখানে একটা ইভেন্ট করলে-সেই জায়গায় আপনি এলে বা স্টল নিলে আপনার ক্ষতি আরো অনেক বেশি হবে”।তাই আমি অন্তত কোন মিট আপ বা মেলা করতে আর চাইনা।
উদ্যোক্তারা ভালো থাকুক,ভালো করুক।একটা পরিবারে অনেক কাহিনী আর চাপা কষ্টের পরে নারীরা উদ্যোক্তা হয়।আর আমি নিজে কখনোই কারো কোন ক্ষতি চাইনা।আপনারা যেভাবে ভালো থাকবেন,যেভাবে আপনাদের ভালো হবে,সেভাবেই চলবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।