মানষিক প্রস্তুতি:
বিজনেস করে টাকা কামাবেন, ভাব নিবেন, আয়েশ করবেন কিন্তু কষ্ট করবেন না, সেক্রিফাইস করবেন না- তা হবে না। একজন সাধারণ চাকরিজীবী যে পরিশ্রম করে তার চাইতে দ্বিগুণ, তিনগুণ শ্রম, চেষ্টা সাধনা দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে না পারলে- বিজনেস আপনার জন্য না।
ছ্যাঁচড়ামি ওরফে মার্কেটিং:
বিজনেস শুরু করার প্রথম মাসে- আপনাকে হাজারটা জায়গায় ঠুসা দিতে হবে। খোঁচা মারতে হবে। একবার দুইবার না করে দিবে তারপরেও আবার যেতে হবে। অন্য মানুষদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
আগে ইগোর জন্য যার সাথে কথা বলতে চাইতেন না। এখন তাকেও তেল মারতে হতে পারে। বিজনেস করতে করতে একটা লেভেলে উঠার আগ পর্যন্ত আপনাকে এইটা চালিয়ে যেতে হবে।
তারপর আপনি লোক হায়ার করবেন, তারা একটা প্রসেস ডেভেলপ করে বাকিটা চালিয়ে নিবে। কিন্তু শুরুটা আপনাকেই করতে হবে।
আইডিয়া:
আপনার বিজনেসের আইডিয়া ইউনিক হতে হবে এমন কোন কথা নাই। আপনার টেকনিক ভালো হতে এমন কোন কথা নাই। বরং বিজনেস করতে করতে আপনার আইডিয়া মডিফাই হবে, চেইঞ্জ হবে। যে আইডিয়া, রেভিনিউ জেনারেট করতে পারেনক- সেই আইডিয়ার ভ্যালু শূন্য।
বিজনেস প্ল্যান:
একটু চেখে দেখলাম, ট্রাই মারলাম। সেটা মনের মধ্যে থাকলে, বিজনেস করার দরকার নাই। স্ট্যাবল জব আছে সেজন্য। সেটাই আপনার জন্য ভালো।
বিজনেস করার ইচ্ছা থাকলে একটা কথা মানে রাখবেন- “Do or do not. There is no try.”।
হাতের কাছের মুরগি ধরেন:
স্টার্ট উইথ ইউর ফ্রেন্ড। আপনি স্পেশাল ডিজাইনের ড্রেস বিক্রি করতে চান। অনলাইনে বা দোকানে। দোকান দেয়ার আগে আপনার ফ্রেন্ডদের ও পরিচিতদের কাছে বিক্রি করেন।
কলিগদের কাছে ট্রাই করেন। আশেপাশের লোকজনের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। আপনার ডিজাইন সেন্স অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য কিনা। সেটা বুঝে ফেলবেন।
প্রোডাক্টের কোয়ালিটি এডজাস্ট করা লাগলে এদের সাথে সহজেই করে ফেলতে পারবেন।আপনি যদি ভালো প্রোডাক্ট বা ভালো সার্ভিস দেন তাহলে এদের কাছে আপনার প্রোডাক্ট দেখে অন্যরা জানতে চাইবে। এবং আপনি,আপনার টার্গেট মার্কেট পেয়ে যাবেন।
অথবা আপনার টার্গেট মার্কেট যদি আপনার আশেপাশের মানুষ না হয়। তাহলে সেই টার্গেট গ্রুপের লোকজনের সাথে গিয়ে মিশে তাদের ফ্রেন্ড হোন। তারপর তাদের কাছে বিক্রি করার চেষ্টা করেন।
লার্ন কুইকলি, এডজাস্ট কুইকলি:
ধরেন,আপনি প্লাস্টিকের জুতা বিক্রি করতে চাচ্ছ। কিন্তু ৯০% লোকজন বলতেছে চামড়ার জুতা চায় তারা। এক্ষেত্রে, হয় প্লাস্টিকের জুতা চেইঞ্জ করে চামড়ার জুতা বানাতে হবে। অথবা যাদের কাছে এতদিন বিক্রি করার চেষ্টা করেছেন, তাদের বাদ দিয়ে অন্য কারা আছে, যারা প্লাস্টিকের জুতা কিনতে পারে তাদের কাছে যেতে হবে।
এমনও হতে পারে এক বছরে আট-দশবার আপনার প্ল্যান, স্ট্রাটেজি, এপ্রোচ চেইঞ্জ করতে হবে। এই চেইঞ্জ করাটাই, এই গেইম খেলাটাই বিজনেসের আসল মজা।
শুরুতে সব খাইতে যেয়েন না পেট খারাপ হবে:
একটা প্রোডাক্ট বা একটা সার্ভিস নিয়ে শুরু করেন। যা পাব তাই খাবো করতে গেলে, কিংবা সবার জন্য কাস্টমাইজড করে জিনিস রেডি করতে গেলে, আপনার তো শুরুর দিকে ফোকাসড থাকাটা টাফ হয় যাবে।
কাস্টমার লয়াল্টি পাওয়া টাফ হয়ে যাবে। আর লয়াল কাস্টমার ছাড়া একটা বিজনেস বেশিদিন টিকবে না। তাই একটা জিনিস করেন, সেটা ভালোভাবে করেন।
কত চার্জ করবো
শুরুর দিকে লাভ কত বেশি হচ্ছে সেটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করা যাবে না। বরং কাস্টমার ধরার দিকে বেশি ফোকাসড হওয়া লাগবে। এইজন্য অনেক কোম্পানি শুরুতে কম দামে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দেয়,সেটাও অন্যায়।
প্রোডাক্ট কোয়ালিটিতে নজর দিতে হবে এবং দামটা বাজার বুঝে করতে হবে। পরে একটু টাকটিক্স ইউজ করবেন,যেটা আপনার মেন্টরের সাথে বসে ঠিক করবেন।
বিজনেসের নাম:
কোম্পানির নাম যত চমৎকারই হোক না কোনো, কেউ যদি আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস না নিতে চায়। নাম দিয়ে কোন লাভ হবে না। তাই বিজনেস শুরু করার প্রথম মাসে নামটাই শুধু সিলেক্ট হবে,কিন্তু রেজিস্ট্রেশন,টিন বা কাগজপত্র কিংবা বিজনেস প্ল্যান এইগুলা নিয়ে সময় নষ্ট করার দরকার নেই। সামনের মাসে এইগুলা নিয়ে চিন্তা করা যাবে।
ইম্পলিমেন্টেশন-
একটাই জিনিস মেটার করে, সেটা হচ্ছে ইমপ্লিমেন্টেশন। কত আলতু ফালতু লোক দেখবেন, ফাউল কনসেপ্টের বিজনেস করে, ক্লায়েন্টের সাথে ভালো রিলেশন মেনটেইন করে বহাল তবিয়তে দেদারসে ব্যবসা করে যাচ্ছে। আপনিও সেই স্টেজে যেতে পারবেন যদি মিনিমাম ৫ বছর লেগে থাকতে পারেন।
এর মধ্যে অনেক ঝড় ঝাঁপটা আসবে, অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে তারমধ্যে লেজ গুটিয়ে না পালালেই আপনি একটা সময় পরে স্ট্যাবল হয়ে যাবেন।
এইমাসে শুরু করেছি,আবার আগামীমাসেও শুরু করবো- বিজনেস ইমপ্লিমেন্টেশন নিয়ে কোর্স। যারা মাঠে নেমে সিরিয়াস হয়ে তাদের বিজনেস বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করবেন, কিভাবে করবেন এসবই শিখবেন।
তো বিজনেস করছেন,আমাকে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিবেন-
১. আপনার টার্গেট মার্কেট কোনটা?
২. কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করতে চাইছেন? স্পেসিফিক একটা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস যেটা দিয়ে শুরু করে দিতে চাইছেন।
৩. প্রথম যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বিক্রি করবেন সেটা দাম কত রাখতে চান?
৪. কি কি উপায়ে আপনি,আপনার প্রথম কাস্টমার ধরার চেষ্টা করেছেন?
৫. প্রথম কাস্টমারের কাছে কত টাকা দিয়ে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করেছেন?