গতপর্বে শেষ করেছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ার আমাদের দেয়া সময় নিয়ে,আজ একটু দেখি আরো কিছু ব্যাপার।
শুধু সোশ্যাল মিডিয়া কেন, ফোন মার্কেট, পোশাকের ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে খাবারের ব্র্যান্ড পর্যন্ত এই FOMO মার্কেটিং কাজে লাগিয়ে মানুষের টাকা ও সময় নষ্ট করে ফায়দা লুটছে।
মানুষের হাতে খুব ভালো কাজ করছে এমন একটি আইফোন সেভেন প্লাস থাকার পরও সে দরকার হলে ধার করেও আইফোন টেন কিনছে। কারণ আইফোন টেন না কিনলে কি হারাতে হবে – সেই ভয়ে অস্থির হওয়ার পাশাপাশি সে বন্ধুদের কাছে বা সমাজে ‘ভাব’ ধরে রাখতে চাইছে।
অন্যরা যা জানে, তা জানার আকাংখাও এর অন্তর্গত। মানুষ জন্মগত ভাবেই কৌতুহলী। এই স্বভাব মাঝে মাঝে দুর্বলতাও। যা জানার দরকার নেই, তা জানার জন্যও মানুষ পাগল হয়ে ওঠে – যখন ভাবে, অন্যরা যদি জানে, এবং সে না জানে – তাহলে কি হবে?
এই ভয় এবং কৌতুহলের কারণে মানুষ “অমুক নায়িকাকে নিয়ে একি বললেন তমুক নায়ক!” – টাইপের ভিডিও বা আর্টিকেলে ক্লিক করে। যদিও অমুক নায়িকাকে তমুক নায়ক গুলি করে মেরে ফেললেও তার কিছু যায় আসে না।
হ্যাঁ – যদি জানাটা কাজের হয়, তবে অবশ্যই জানবেন – কিন্তু যা জেনে কোনও লাভ নেই, সেই ফাঁদে পড়ার কোনও মানে হয় না। আপনি যদি বিজ্ঞানের ছাত্র বা গবেষক হন, এবং আপনার ওয়ালে যদি আপনার কাজের বিষয়ে একটি নতুন গবেষণার খবর আসে – আপনি অবশ্যই সেটা পড়তে পারেন। কিন্তু পাশের দেশের কোন নায়কের বিয়ে হওয়ায় কোন নায়িকা তিন দিন ঘর থেকে বের হননি – এটা জানা এমনকি পেশাদার পেশাদার অভিনেতা বা পরিচালকেরও দরকার নেই। যেমন আমি বাংলাদেশের খেলার নিউজ ছাড়া অন্য কোন নিউজ দেখিনা বললেই চলে।
আপনি কি জানেন, সিগারেট থেকে শুরু করে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, হিরোইনের মত নেশার শুরু হয় FOMO- এর ফাঁদে পড়ার কারণে?
বিশেষ করে বন্ধুরা যখন সিগারেট বা অন্য নেশা করে – তখন নিজেরও মনে হয়, ওরা যে মজা পাচ্ছে – তা তো আমি মিস করবো; অথবা মনে হয় ‘অভিজ্ঞতা’ নেয়ার দরকার আছে।
বাজে নেশা থেকে শুরু করে, ক্ষতিকর অসামাজিক সম্পর্ক, অতি খরচ – সবই আসলে এই – ‘না করলে কি হবে’, ‘এমন সুযোগ আর পাবো না’, ‘মানুষ কি মনে করবে’, ‘জীবন তো একটাই, এটা না করলে সারাজীবন আফসোস করতে হবে’ – ইত্যাদি মনে হওয়ার ফসল।
এই মনে হওয়া গুলোই ফোমো এর ফাঁদ – যা আপনার সময় ও অর্থ তো নষ্ট করেই – এমনকি জীবনও ধ্বংস করে দিতে পারে।