ব্যবসা মানে শুধু সেল নয়

“ব্যবসা মানে শুধু সেল নয়—এটা হলো একটা সিস্টেম তৈরি করা, যা আপনাকে আর আপনার পরিবারকে আগামীকাল নিরাপদ রাখবে।”
আজকের মত অবস্থা তো আগামীকালই থাকেনা আর একইভাবে পরিশ্রমটা কিভাবে করবেন?
আমি যখন চাকুরী একেবারে ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করার
চিন্তা করেছিলাম,তখন আমার সামনে সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে এসেছিলো- ফিক্সড ইনকাম টা বন্ধ হলে চলা কঠিন হবে কিনা?
একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার মাথায় যেটা সবার আগে এসেছে সেটা হলো- আজকে আমি হয়তো এই কাজটা করছি এবং ফিক্সড একটা ইনকাম করছ যা হয়তো এখনকার সংসার চালাতে সক্ষম কিন্তু আমার বাবা-মা সহ পরিবার একটু বড় হলেই তো আর সেটা করা সম্ভব না।
আর যদি আত্নীয়-স্বজন কিংবা প্রতিবেশিদের হকটা ঠিকঠাক আদায় করতে চাই,তাহলে এই চাকুরী আমার জন্য পারফেক্ট সিধান্ত না।
আমরা যারা উদ্যোক্তা আছি,তাদের ভাবনাটা দেখেও আমি বেশ অদ্ভুত চিন্তায় পড়ে যাই,আমরা সবাই যেন শুধু আজকের দিন,আজকের অবস্থান ও আজকের ব্যবসা নিয়েই ভাবি।
আচ্ছা আজকের দিনে ব্যবসাটা হয়তো ভালো সেল এনে দিচ্ছে বা বেশ ভালো ইনকাম এনে দিচ্ছে তাই আর চিন্তার কিছু নেই,কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ ব্যবসা কেমন হবে সেটার চিন্তা করি কি?
অথচ আমাদের আগামীর অবস্থান কেমন হবে সেটা কিন্তু নির্ভর করে আজকের এই প্ল্যানিং এর উপর আর সেটার কেমন এক্সিকিউশন প্রসেস সেটার উপরে।এই প্রগ্রেসটা নির্ভর করে এখন বসে নেওয়া বিভিন্ন রকম সিদ্ধান্তের উপর।
আমায় যারা খুব কাছ থেকে চিনেন,তাদের একটা কমন ইস্যু ছিলো- আমি কেন আমার ল্যাপটপ টা চেঞ্জ করছিনা? কেন আমি একটা Iphone কিনিনা? কেনই বা আমি একট গাড়ি কিনছিনা?
আমার সাথে তাদের চিন্তার পার্থক্যটা বিশাল বলেই তো আমার ধারনার সাথে মিলেনাই।
আসেন একটা সিনারিও নিয়ে আলোচনা করি-
ধরুন, আপনার হাতে কিছু টাকা আছে।আপনার এই ব্যবসার অবস্থাও খুব ভালো আছে।আপনি সিধান্ত নিয়ে নিলেন যে,একটা দামি ল্যাপটপ কিনবেন তার জন্য বাজেট ২ লাখ টাকা,একটা Iphone এর জন্য ২ লাখ টাকা আর একটা গাড়ি কিনলেন ৩০ লাখ টাকা দিয়ে।
অর্থাৎ আপনি আপনার রানিং ফান্ড থেকে একমাসেই ৩৪ লাখ টাকা সরিয়ে ফেললেন।এবং এই টাকা আপনি আবার ১/২ বছরে বানিয়ে ফেললেন।
অন্যদিকে একজন এই একই টাকা দিয়ে তার অফিসের সেটাপ করলেন যা তার কাজে লাগে এমন জায়গায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করলেন আর একদিকে অল্প কিছু জমি কিনে রাখলেন।
তার রাখা ও আবাদি জমিতে চাষ করিয়ে সবটা খরচ মিটিয়ে ২ বছর পরে তার কাছে প্রয়োজনের জন্য ঐ Iphone আর ল্যাপটপ কেনার টাকা এলো আর অফিস থেকেও তার ইনকাম টা বেড়ে সেই ৩৪ লাখ টাকার বেশিই ইনকাম হলো।
আপনি বলেন তো,আপনার কোনটা করা উচিত?
আপনার হাতে থাকা টাকা দিয়ে বর্তমানের শখ পুরণ করবেন নাকি এমন কোন সিস্টেম জেনারেট করবেন যা আপনাকে পরবর্তীতে প্রশান্তি এনে দিবে?ভবিষ্যতে আপনাকে আরও টাকা এনে দেবে?
আমি আমার নিজের জীবন আর আমার কর্মজীবনে এত এত ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন একটা জায়গায় নিয়ে এনালাইসিস করে বুঝেছি, আমাদের লাইফটাকে এই কয়েকটা সাইকেলে ভাগ করা উচিত।
জন্মের পর থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত – কেবলমাত্র দেখার ও জানার জীবন।
১৫-২০ বছর পর্যন্ত – শেখার জীবন।ভুল করবো আর শিখবো তবে হাল ছেড়ে দিব না।
২০-২৫ বছর পর্যন্ত – কাজ করবো আর অভিজ্ঞতা অর্জন করবো।
২৫-৩৫ বছর পর্যন্ত বয়সটা হলো আমাদের জন্য সেই সময়, যখন আমরা সর্বোচ্চ শক্তি আর ঝুঁকি নেওয়ার সাহস রাখি। এই সময়ে যদি আমরা আমাদের লাভের একটা অংশ দিয়ে কোনো সম্পদ তৈরি করি, সেটা হতে পারে নতুন একটা প্রজেক্টে বিনিয়োগ, একটা ছোট জমি কেনা, বা নিজের ব্যবসার একটা স্থায়ী কাঠামো বানানো, তাহলে ৪০ বছর বয়সে এসে সেই সম্পদই আমাদের বড় একটা সাপোর্ট দেবে।
অনেকেই বলবেন, আমি যে ঐ বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকবো তার গ্যারান্টি কোথায়?
নাহ,মোটেও কোন গ্যারান্টি নেই।আমি এই লেখা শেষ না করেও চলে যেতে পারি কিন্তু তাই বলে কোন কিছুই থেমে থাকবেনা।
আমরা জানি এক সেকেন্ড বেঁচে থাকার গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবেনা তাই বলে তো আর আমরা থেমে থাকিনা তাইনা?
আমাদের সবার উচিত একটা সিস্টেম জেনারেট করা যেটা আমার উপস্থিতিতে আমাকে সহ পরিবারকে আর আমার অনুপস্থিতিতে আমার গোটা পরিবারকে সাপোর্ট দিবে।
যদি আজকে একটা সিষ্টেম জেনারেট করতে পারেন, তাহলে পরবর্তীতে আপনাকে শুধু আজকের চাহিদা মেটানোর জন্য লড়াই করতে হবে না। আপনার তৈরি করা সিস্টেম, আপনার বানানো সম্পদই আপনার জন্য কাজ করবে। এটাই হলো আর্থিক স্বাধীনতা।
Financial Independencey মানে আজকে ভালো থাকা নয়,কেবলমাত্র নিজের দ্বায়িত্ব পালন করা নয়।বরং আমার উপরে বা আমার সারাউন্ডিংবের সবাইকে ভালো রাখা বা রাখার চেষ্টা করা।
আজকে একটা সেটাপ করে ফেলতে পারলে আপনি ঐ সময়ে চাইলে নতুন কিছু শুরু করার ঝুঁকি নিতে পারবেন, বা পরিবারকে আরও ভালো সময় দিতে পারবেন।
আমার কাছে এখন ব্যবসা মানেই শুধু ফেসবুকে পেজ খুলে ব্যবসা নয় কিংবা সারাদিন কন্টেন্ট বানানো আর ঐ ফেসবুকে এড দেয়া নয়।এটা একটা সিস্টেম তৈরি করা, যাতে আপনার ব্যবসা টিকে থাকে এবং সেটার একটা দীর্ঘমেয়াদী গ্রোথের ব্যবসা করা।
আমি বিশ্বাস করি, এখনকার পরিশ্রমটাই ভবিষ্যতের ইনভেস্টমেন্ট।আর বয়সের সাথে সাথে আমাদের কায়িক শ্রমের ক্ষমতা কমতে থাকে তাই কায়িও শ্রমটা কমিয়ে ঐ সময়ের জন্য যদি শুধু ব্রেইনের ব্যাপারটা রাখা যায়,লাক্সারিটা তো সেখান থেকেই আসবে।
আমার ৩০ জন নতুন উদ্যোক্তার লিস্টে যারা থাকবেন তাদেরকে তো নিয়ে এই যাত্রা শুরু করবো আর সাথে আমার পুরাতন যারা আছেন,তাদের মধ্যে থেকে ৭০ জনকে নিয়ে প্রথম ধাপে এই ১০০ জনের জন্য একটা সিস্টেম তৈরি করার প্ল্যানিং এ নেমে যাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *