আজকে আমরা যে সকল বিষয় নিয়ে কথা বলবো :—-

* ক্লাউড কম্পিউটিং কি?
* এটি আমরা কেন ব্যবহার করি?
* ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদঃ

* ক্লাউড কম্পিউটিং কিভাবে কাজ করে?
* ক্লাউড সার্ভার কি?
* ক্লাউড সার্ভার এবং ডেডিকেটেড সার্ভারের (নরমাল সার্ভার) মধ্যে
পার্থক্য
* ক্লাউড স্টোরেজ কি?
* এটি কিভাবে আমাদের নানান ডিভাইস পরিবর্তন করছে?
* ক্লাউড এর অসুবিধা।
* ক্লাউড এর ভবিষ্যৎ।

ধরুন,

আপনার এনিমেশনের জন্য আপনার একটি এডবি আফটার ইফেক্ট সফটওয়্যার দরকার
যেটি হয়তো আপনার কম্পিউটার কনফিগারেশনের সাথে যাচ্ছে না কিন্তু, সফটওয়্যাটি
দরকার তাহলে কি করবেন? তখন আপনি ইন্টারনেটের মধ্যমে কোন একটি সর্ভিস
প্রভাইডারের কাছে ফ্রি / অর্থের বিনিময়ে কানেক্ট হবেন যা আপনাকে এডবি আফটার
ইফেক্ট সফটওয়্যার টির এনভাইরনমেন্ট দেবে ব্যবহারের জন্য ।

অথবা,

আপনার ১৬/ ৩২ কোর প্রসেসরের প্রসেসিং পাওয়ার দরকার হতে পারে কোন বড়
ক্যালকুলেশনের জন্য কিংবা মেশিন লার্নিং এর বড় কোন মডেল রান করার জন্য , যা
আপনার / আমার মত গরিবের পক্ষে দিবাস্বপ্নের মত । কিন্তু সেই জন্য কি আমরা
মেশিন লার্নিং শিখতে পারবো না ? অবশ্যই পারবো । আর এই জন্য আমরা ক্লাউড
কম্পিউটিং এর মাধ্যমে (সাধারন পিসি থেকেই) কমমূল্য দিয়েই (হয়ত ঘন্টা হিসেবে) ঐ
সার্ভিস পেতে পারি নেটওয়ার্কের মাধ্যেমে কানেক্টেড থেকে ।

-এটাই হল ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাধারণ ধারণা।

ক্লাউড কম্পিউটিং কী?

ক্লাউড কম্পিউটিং হলো এমন এক প্রকার সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক পরিসেবা বা
সার্ভিস, যা নেটওয়ার্ক স্টোরেজ স্পেস এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের দ্রুত
ও সুবিধাজনক ব্যবহার নিশ্চিত করে।
তাহলে এককথায় ক্লাউড কম্পিউটিং হলঃ “ কম্পিউটারের রিসোর্স গুলো মানে
হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর সার্ভিস গুলো নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে প্রদান করা
“।

এটি আমরা কেন ব্যবহার করি?
ক্লাউড কম্পিউটিং এর কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা আছে বিশেষ করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে।
এসব জানার পরে সহজেই বোঝা যাবে আমরা কেন এটি ব্যবহার করি কিংবা করব?

১। নিজের চরকায় নিজেই তেল লাগানোর ব্যবস্থাঃ এর মাধ্যমে একজন গ্রাহক তার
চাহিদামত রিসোর্স ব্যবহার করতে পারেন এবং কাজ শেষে তা ফেরত দিয়ে দিতে পারেন ।
এতে তার বাড়তি মেইনট্যানেন্সের জন্য লোক রাখতে হয়না। যেমন ধরুন, আপনার একটা
সুপারশপ আছে। এবং ২ জন সেলসম্যান আছেন।সারাদিন সেখানে কাস্টমারের ভিড় সমান
থাকেনা। বিকেলের দিকে ঘন্টা তিনেক ভিড় সরবোচ্চ থাকে, তখন ২ জনের সেলসম্যানের
পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হয়না। ওই ৩ ঘন্টার চাপ সামলাতে বাড়তি আরো ৩/৪ জন
সেলস্ম্যান দরকার পড়ে। কিন্তু ৩ ঘন্টার জন্য বাড়তি সেলস্যম্যানদের সারাদিন তেমন
কাজ নেই। সুতরাং এদের সারাদিনের জন্য বেতন দিয়ে রাখাও পোষায় না। এক্ষেত্রে
ক্লাউড কোম্পানি আপনাকে শুধু ৩ ঘন্টার জন্যই আপনার দরকারী সেবা আপনাকে
দিতে পারে। যা আপনার অনেক খরচ বাচিয়ে দিতে সক্ষম।

২। যত লাগে তত নিনঃ এটা বলতে বোঝায় আপনার ঠিক যতটুকু লাগবে আপনি ততটুকুই
নিতে পারবেন। আপনাকে বেশি বা কম নিতে হবেনা। যেমন, আজ মেন্যু বেশি ৫ টা পাতিল
লাগবে রান্না করতে সুতরাং ৫ টাই নিলেন। কাল হয়ত ২ পাতিলেই হয়ে যাবে বাকি ৩ টা

ফেরত দিলেন। আবার হয়ত মেন্যু বাড়ল ৭ টা পাতিল লাগবে বাড়িয়ে নিলেন। আপনার
সুবিধামতই ক্লাউড কোম্পানিগুলো আপনাকে আপনার দরকারী সেবা দিবে।

৩। সেবা যত, টাকা ততঃ আপনি যতক্ষণ রিসোর্স ধরে রাখবেন ঠিক ততক্ষণের জন্যই
আপনাকে টাকা দিতে হবে। রিসোর্স ছেড়ে দিলেন তো আর পে করতে হবেনা, আবার
নিলেন যতক্ষণ কাজ করাবেন ততক্ষণ এর জন্য পে করার সুবিধা আছে আপনার।
হোটেল এর মত নয়, যে চেক ইন করলেন তো ২০ মিনিট থাকলেও ২৪ ঘন্টার ভাড়া গুণতে
হবে, আবার ২৪ ঘণ্টা থেকে ২৪ মিনিট বেশি হয়ে গেলে বাড়তি আরো ২৪ ঘণ্টার ভাড়া
গুণতে হবে।

৪। যেখানে মধু, সেখানেই যদুঃ
আপনি মাইগ্রেট ও করতে পারেন। আপনি যে কোম্পানি
থেকে বর্তমানে সেবা নিচ্ছেন কোনো কারণে অন্য কোম্পানি থেকে আরো ভালো সেবা
পেলে আপনি মুহূর্তের মাঝেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে সেই কোম্পানির সেবা নিতে পারেন।
কোনো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল বা থ্রেট নাই।

৫। চৌধুরী সাহেবের মত লম্বা হাতঃ আপনি যে কোনো জায়গা থেকে ফোন বা পিসির
মাধ্যমে আপনার ক্লাউড কম্পিউটিং এর কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন
ইন্টারনেটের সাহায্যে। আপনাকে এটার জন্য সারাদিন অফিসে বসে থাকা কিংবা
আলাদাভাবে মেইনট্যানেন্সের কথা চিন্তা করতে হবেনা।

৬। আপনার চেয়ে আপনার ডাটার সিকিউরিটি বেশিঃ আপনি গুম হয়ে যাইতে পারেন
যেকোনো মুহূর্তে কিন্তু আপনার ডাটা গুম হওয়ার ভয় নেই। আপনার যদি অনেক বেশি
ডাটা থাকে আপনি হয়ত আলাদা হার্ডডিস্ক ব্যবহার করে ব্যাক আপ রাখলেন। কিন্তু
সেই হার্ডডিস্ক যে ক্র্যাশ করবেনা সেই গ্যারান্টি নাই। আবার অন্য কোনোভাবেও
আপনি ডাটা হারিয়ে ফেলতে পারেন। কিন্তু ক্লাউডে আপনার এই ভয় নেই। আপনার ডাটা
রক্ষার গ্যারান্টি ক্লাউড আপনাকে দিবে। সুতরাং এই সুযোগে আপনি নিজের দিকে
একটু বেশি খেয়াল রাখার সময় ও পাবেন।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর প্রকারভেদঃ
ব্যবহারকারীর ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং ধরণের হয়ে থাকেঃ

১। পাবলিকঃ পাবলিক ক্লাউড বলতে বোঝায় যেখানে একই রিসোর্স কয়েকজন থেকে শুরু
করে, কয়েক হাজার কিংবা কয়েক লাখ গ্রাহক শেয়ার করতে পারে।। পাবলিক ক্লাউডে
সাধারণত সফটওয়্যার সেবা দেয়া হয় (Software-as-a-Service)। যেমন, একটা
উদাহরণ দেয়া যাক। গুগল এর জিমেইল তো আমরা প্রায় অনেকেই ব্যবহার করে থাকি।
এটি একটি পাবলিক ক্লাউড এর উদাহরণ। গুগল এর সমীক্ষা মতে, ২০১৭ সালের
এপ্রিল পর্যন্ত মাসিক জিমেইল সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন।
যেখানে প্রতিটি জিমেইল একাউন্ট আলাদা পাসওয়ার্ড এর সাহায্যে সুরক্ষিত থাকে।
কিন্তু যেখানে এই সফটওয়্যারটি স্টোর করা আছে সেটি ১ বিলিয়ন মানুষ শেয়ার করছে।
এটাই মূলত পাবলিক ক্লাউড সেবার মূল ধারণা।

২। প্রাইভেটঃ এটা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের কাজে ব্যবহার করে
থাকে। এর বাইরে কারো সাথে শেয়ার করার সুযোগ নেই।

৩। হাইব্রিডঃ এটাতে পাবলিক এবং প্রাইভেট দুইটাই আছে। একটা অংশ হয়ত পাবলিক
যেখানে অন্য একটা অংশ প্রাইভেট। যেমন, একটা কোম্পানি তাদের কাস্টমারদের সাথে
যোগাযোগ করার জন্য পাবলিক ক্লাউড অংশ ব্যবহার করছে, আবার কাস্টমারদের
ডাটা রাখার জন্য প্রাইভেট ক্লাউড অংশ ব্যবহার করছে।

৪। কমিউনিটিঃ এটা একাধিক প্রতিষ্ঠান শেয়ার করতে পারে। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর
বাইরে কারো এর একসেস নেই।

IaaS: Infrastructure-as-a-Service: এতে অবকাঠামো বা Infrastructure ভাড়া
দেয়া হয়। যেমন, কারো যদি একটা মেশিন লাগে তার কাজের জন্য তাহলে ভার্চুয়ালি সেই
মেশিন ভাড়া দেয়া হল কিংবা নেটওয়ার্কিং সেবা দেয়া হল। যদিও গ্রাহকের কাছে এর
কোনো হার্ডওয়্যার রূপ নাই তবে এটি একটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার এর মতই কাজ করে।
এখানে ইউজার নিজের মত করে সেই মেশিনে দরকারী কাজ করতে পারেন।এবং পুরো
নিয়ন্ত্রণ ইউজারের হাতে থাকে এই সিস্টেমে।
আর খুব সহজ করতে বলতে গেলে, ধরুন আপনি এক কাপ চা বানাবেন। ক্লাউড কোম্পানি
আপনাকে চা-পাতা, দুধ এবং চিনি দিবে। সেসব ক্লাউড থেকে ভাড়া করে আপনি নিজের
মত করে চা বানাতে পারবেন। গাড় লিকার, হালকা লিকার যেমন খুশি। ক্লাউড কোম্পানির
কাজ হবে আপনাকে শুধু উপাদান ভাড়া দেয়া। এর বাইরে কিভাবে বানাবেন, কতটুকু আগুন
দিবেন, পানি কতটুকু গরম হবে সেসব নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে।

PaaS: Platform-as-a-Service: এতে প্লাটফর্ম ভাড়া দেয়া হয়। যেমনঃ অপারেটিং
সিস্টেম, ডাটাবেজ কিংবা কোনো সার্ভার বা মনিটরিং সিস্টেম। ইনফ্রাস্ট্রাকচার
নেয়ার পর হয়ত ইউজার দেখল তার কাজের জন্য কিছু বাড়তি এপ্লিকেশন বা প্লাটফর্ম
লাগবে। তখন চাইলে সেটা ইউজার নিজেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তৈরি করতে পারে কিংবা
রেডিমেড ক্লাউড থেকে প্রয়োজনীয় সিস্টেম, ডাটাবেজ কিংবা এপ্লিকেশান ব্যবহার
করতে পারে। এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হল, উক্ত সিস্টেম, ডাটাবেজ কিংবা এপ্লিকেশান
এর নিয়ন্ত্রণ ইউজারের থাকবে না যেটা শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার এ ছিল।
আগের চা এর উদাহরণ টা দিয়ে বলতে গেলে এই পর্যায়ে ক্লাউড কোম্পানি আপনাকে চা
বানানোর জন্য রেডিমেড গরম পানি কিংবা আরো রেডিমেড চাইলে লিকার ও দিয়ে দিবে।
আপনার কাজ হবে দুধ, চিনি মিক্স করে কাপে ঢালা। এক্ষেত্রে আপনি নিজের ইচ্ছেমত
পানির তাপমাত্রা বা লিকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আপনাকে যেটা দেয়া হবে সেটা
দিয়েই চা বানাতে হবে।

SaaS: Software-as-a-Service: এটা হচ্ছে ক্লাউডে চলা কোনো সফটওয়ার যেটা
ইউজাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন তাদের মোবাইল ফোন
কিংবা পিসির সাহায্যে। এদের এক কথায় ওয়েব সার্ভিস ও বলা যায়। এখানে ইউজারকে
উক্ত সফটওয়্যার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয়না। যেমন, মাইক্রোসফট অফিস ৩৬৫।
চা এর উদাহরণটা ই আবার দেই। এই পর্যায়ে আপনি ক্লাউড কোম্পানি থেকে
রেস্টুরেন্ট সুবিধা পাবেন। আপনাকে কিছুই করা লাগবেনা। আপনি যেমন চা চান সেটাই

ক্লাউড কোম্পানি আপনাকে দিবে। সেটা র-টি, মিল্ক-টি, ব্ল্যাক-টি, কোল্ড-টি, আসাম-
টি যা ই হোক না কেন। এখানে আপনার কাজ শুধু আরাম করে খাওয়া। কিভাবে চা বানাতে
হবে, বানানোর পর পরিবেশন করতে হবে কিছু নিয়েই আর আপনার মাথাব্যাথা নাই। এই
মাথাব্যাথা রেস্টুরেন্ট এর বা ক্লাউড কোম্পানির।

যেভাবে কাজ করেঃ

ক্লাউড সার্ভারঃ

ক্লাউড সার্ভিস প্রভাইডাররা যে সার্ভার ব্যবহার করে তাই ক্লাউড সার্ভার বলে
যেখানে এসব এনভারনমেন্ট গুলো সার্ভিস হিসেবে রাখা হয় ।

ক্লাউড সার্ভার এবং ডেডিকেটেড সার্ভারের (নরমাল সার্ভার) মধ্যে পার্থক্য

1.প্রাপ্যতাঃ

ক্লাউড সার্ভারগুলি কোনও সমস্যা হলে একেবারে ডাউন হয়ে যায় না, একাধিক নোডের
মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যর্থ নোডের ওয়্যারলোডটি ধরে নেয় এবং এটি আপনার
ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনের জন্য শূন্য ডাউনটাইম এবং সর্বাধিক নেটওয়ার্ক
আপটাইম নিশ্চিত করে।

ডেডিকেটেড সার্ভারগুলির সাথে, ডাউনটাইম এবং হার্ডওয়্যার ব্যর্থতার ঝুঁকি থাকে
কারণ তাদের লোড ভাগ করার জন্য একাধিক নোড নেই।

  1. রিসোর্স বৃদ্ধিকরণঃ

ক্লাউড সার্ভারে বরাদ্দকৃত রিসোর্স বৃদ্ধি বা হ্রাস — কম্পিউটিং কোর, র‍্যাম, এবং
স্টোরেজ ও সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি খুব সহজ এবং সময় কম লাগে ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে রিসোর্স বৃদ্ধি করা কঠিন এবং সময় ব্যয়কারী টাস্ক ।

  1. তথ্য সুরক্ষা নিরাপত্তাঃ

ক্লাউড সার্ভারে আপনার পরিষেবার জন্য আপনার প্রোভাইডারকে নিরাপত্তার জন্য
পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেডিকেটেড আইটি সাপোর্ট, সুরক্ষা এবং এনক্রিপশন,
ফায়ারওয়াল এবং ডেটা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ক্লাউড সার্ভিস প্রদানকারীরা তথ্য
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে আপনাকে আপনার সংবেদনশীল এবং গোপনীয় ব্যবসায়িক তথ্য
নিরাপদ করার জন্য আপনার ডেডিকেটেড সার্ভার আপগ্রেড করার জন্য প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপগুলি নিতে হবে।

  1. খরচ ও কর্মদক্ষতাঃ

ক্লাউড সার্ভারে ঘন্টাভিত্তিক,রিসোর্স-ভিত্তিক বিলিং ক্লাউড সার্ভার হোস্টিং এর
বড় বেনিফিটগুলির মধ্যে অন্যতম । সাধারণতঃ আপনি র‍্যাম, ব্যান্ডউইথ, এসকিউএল
স্টোরেজ এবং ডিস্ক স্পেস এর ইউজ হিসাবে অর্থ প্রদান করবেন, অর্থাত আপনি
শুধুমাত্র সেই কম্পিউটিং রিসোর্স গুলির জন্য অর্থ প্রদান করেন যা আপনি আসলে

ব্যবহার করেন। এসব সার্ভিস একইসাথে দেওয়া বেশ ব্যয়বহুল, কিন্তু ক্লাউড সার্ভিস
প্রোভাইডারেরা তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং ডেডিকেটেড সার্ভারের চেয়ে তুলনমূলক কম
দামে আপনার কাছে বিক্রি করে দেয় ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে সাধারণত মাসিক বিল দেওয়া হয় এবং আপনি কতগুলি স্পেস
ব্যবহার করেন তার পরিমাণ অনুসারে পরিশোধ করতে হবে এদের মুল্য তুলনামুলক ভাবে
বেশি ।

  1. নিয়ন্ত্রণঃ

ক্লাউড সার্ভারে ইউজারের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল নেই এবং অনেক কিছু ক্লাউড সার্ভিস
প্রোভাইডার কর্তৃক প্রদত্ত ।

ডেডিকেটেড সার্ভারে ইউজারের সম্পূর্ণ কন্ট্রোল থাকে । যেমন একটি অ্যাপ্লিকেশন,
প্রোগ্রাম এবং কর্মক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা যোগ করতে পারে ।
ইউজার এর উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং মূলত ৪ ধরনের হয়ে থাকেঃ

  1. Public cloud: এক ধরনের ক্লাউড সার্ভিস যা সাধারন জনগন ব্যবহার করতে
    পারবে।
  2. Private cloud: যেটা শুধু কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জনগন ব্যবহার করতে
    পারবে।
  3. Hybrid cloud: এটা পাবলিক এবং প্রাইভেট দুইটার সংমিশ্রণে তৈরি।
  4. Community cloud: এটা একাধিক প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারবে।
    সার্ভিসের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং কে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ
  5. IaaS (Infrastructure-as-a-Service)
  6. PaaS (Platform-as-a-Service)
  7. SaaS (Software-as-a-Service)

নিচের ছবিটি দেখে আমরা ক্লিয়ার ধারণা

চিত্রঃ সার্ভিসের উপর ভিত্তি করে ক্লাউড কম্পিউটিং উদাহরনঃ (Image
Source: The Gadget Square)

ক্লাউড স্টোরেজ কি?

ক্লাউড স্টোরেজ হল ভার্চুয়ালি ডাটা সংরক্ষণের একটি উপায়। একসময় আমরা
দরকারি ডাটা পেন ড্রাইভ বা হার্ডডিস্ক এ সরংক্ষণ করে রাখতাম।সেসবের ই উন্নত
এবং সিকিউর রূপ হল ক্লাউড স্টোরেজ। ধরুণ খুব প্রয়োজনীয় বা ব্যক্তিগত কোনো
ডাটা হার্ডডিস্ক বা পেন ড্রাইভে রাখলেন। কোনোভাবে হার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করল কিংবা
পেন ড্রাইভ চুরি হয়ে গেল তখন আর কিছু করার থাকেনা। কিন্তু আপনি যদি ক্লাউড এ
স্টোর করে রাখেন তাহলে এই ভয় টা আর থাকেনা।
আবার ধরুন হঠাত করে কোথাও কাউকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডাটা পাঠানো দরকার। কিন্তু
ডাটা আছে বাসায় হার্ডডিস্ক বা পেন ড্রাইভে। কি করবেন তখন? আপনার সেই ডাটা
যদি ক্লাউডে স্টোর করা থাকে আপনি যে কোনো জায়গা থেকে সেটা একসেস করে কাজ
করতে পারবেন। আপনাকে সারাক্ষণ স্টোরেজ একসেসরিজ নিয়ে চলাফেরা করতে হবেনা।

অনেকেই গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স কিংবা মাইক্রোসফট এর ওয়ানড্রাইভ ,কিংবা এপল
এর আইক্লাউড ব্যবহার করছেন। এখানে একাউন্ট খুললেই আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু
স্পেস দেয়া হবে। পরে চাইলে আপনি আরো বাড়তি স্পেস ও কিনে ব্যবহার করতে পারেন।
যারা এখন ও করেন না তারাও ব্যবহার শুরু করতে পারেন। একবার শুরু করলেই দেখবেন
ফেঁসে গেছেন। এসব ছাড়া আর চলছেই না এমন মনে হবে।

Cloud Storage
অনেক নাম করা কোম্পানি আছে যারা ক্লাউড এর এই সেবাগুলো দিয়ে থাকে অনেক কম
খরচেই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

Cloud Computing Providers

ক্লাউড এর অসুবিধাঃ

আচ্ছা এতক্ষণ তো ক্লাউড এর গুণগান এ করলাম। But Everything has some
merits and demerits. এটা তো আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি। সেই সূত্রে
ক্লাউড এর ও কিছু সমস্যা আছে।
♦ ক্লাউড এর একটা বড় সমস্যা হল সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি সমস্যা। যেমন, আপনি
যে কোম্পানির ক্লাউডে ডাটা রাখলেন তারা যে আপনার ডাটা দিয়ে কিছু করছেনা তার
কোনো গ্যারান্টি নাই। কিছু কনফিডেনশিয়াল সেক্টর আছে যেমন, প্রতিরক্ষা সেক্টর।
তারা ক্লাউড ব্যবহার করলে তাদের জন্য সুবিধা থেকে অসুবিধা বেশি। প্রথমত তারা
তাদের ডাটার সর্বোচ্চ গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে চায়। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন
এনক্রিপশান টেকনিক ব্যবহার করতে পারে সিকিউরিটি ইস্যু নিশ্চিত করতে। কিন্তু
এরপর ও কথা থাকে। তাদের ডাটা থেকে ছোট একটা অংশ কিংবা একটা সিঙ্গেল
ইনফরমেশান দরকার হলে তাদেরকে পুরো ডাটাটাই আগে ডিক্রিপ্ট করতে হবে। এবং
একটা ছোট অংশের জন্য পুরো ডাটাসেট ডিক্রিপ্ট করার পদ্ধতিগুলো যেমন
সময়সাপেক্ষ, তেমন ব্যয়বহুল ও।
♦ আরো কিছু সমস্যা আছে যেমন, ইন্টারনেট দিয়েই যেহেতু এই পুরো সিস্টেমের সাথে
কানেক্ট থাকতে হয় তো ইন্টারনেটে বলতে গেলে কোনো কিছুই ১০০% সিকিউর না।
তথ্য ফাঁস কিংবা করাপ্ট হবার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়।

♦ আবার কোনো কারনে ইন্টারনেট কানেকশান না থাকলে বা খুব ধীরগতির হলে ক্লাউডে
কানেক্টেড থাকাও সম্ভব নয়। ক্লাউড ব্যবহারের আগে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট
কানেকশান নিশ্চিত করতে হবে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এর এইসব ইস্যু নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। হয়ত একসময়
গবেষকরা সফল হবেন। ক্লাউড কোম্পানিগুলোর কাছেও আমাদের সিকিউরিটি পুরোপুরি
নিশ্চিত হবে এবং ব্যবহার ও আরো সহজ হবে।
ক্লাউড এর ভবিষ্যৎঃ
ক্লাউড বিশেষজ্ঞরা ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক কিছু বলেন। কিছু
উল্লেখযোগ্য ভবিষ্যৎবাণী ই আমরা তুলে ধরবঃ
“ট্রেডিশনাল ডাটা সার্ভিস এবং ট্রেডিশনাল প্রযুক্তি সারভিসগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
নিজের কোম্পানির জন্য ডাটা সেন্টার তৈরি, যন্ত্রপাতি কেনা কিংবা বিভিন্ন
সফটওয়্যার ইন্সটলেশান এসব আমরা ভুলে যাব।এই সবগুলো একটি ইকোসিস্টেমে পড়ে
যাবে এবং এই ইকোসিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করবে ক্লাউড।“
–David Hartley, Virtual CIO & Principal, Technology Advisory Services
for UHYLLP
“ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে বিশ্বে এক অসীম যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।
১০/১৫ বছরের মাঝেই মানুষ রাউটার, ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক এসব নিয়ে আর কথা
বলবে না।“
–Marcus Vlahovic, Founder & CEO of Sustain body
“১০/১৫ বছরের মাঝেই ৫০% ছোট কোম্পানি তাদের কোম্পানির ওয়ার্কস্টেশান এর
জন্য আলাদা কম্পিউটার টাওয়ার, সার্ভার কেনার পরিবর্তে সহজভাবে একটি মনিটর,
মাউস, কীবোর্ড এবং এসব নিয়ন্ত্রণ এর জন্য একটি থিন ক্লায়েন্ট কিনবে। বাকি
কাজ ক্লাউড সরবরাহকারী কোম্পানিই করবে। এমন কি কোনো সফটওয়ার আপডেট
নিয়ে ও ভাবা লাগবেনা।“
–Mike Smith, Founder of AeroComInc.com

“হিস্টোরি চক্রাকারে ঘুরে আসে। একসময় বড় বড় মেইনফ্রেম এবং কেন্দ্রীয়
কম্পিউটারগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছিল শক্তিশালী দূরবর্তী ব্যক্তিগত কম্পিউটার
দ্বারা। এবং এই শতকের প্রথম দিকে আমরা আবার ক্লাউড এর মাধ্যমে ফিরে গেছি
কেন্দ্রীয় কম্পিউটার ব্যবস্থায়। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হয়ত হবে, আর্টিফিশিয়াল
ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং নিউরাল ইন্টিগ্রেশান এর মাধ্যমে যন্ত্র
এবং ব্রেইন কে সংযুক্ত করে দেয়া।“
–Jeff Schilling, CSO of Armor

ক্লাউড কম্পিউটিং এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে আজকের মত বিদায়।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধাঃ

কম খরচঃ যেহেতু এতে আলাদা কোন সফটওয়্যার কেনার প্রয়োজন হয় না বা কোন
হার্ডওয়্যার এর প্রয়োজন হয় না। তাই স্বাভাবিক ভাবে খরচ কম হবেই।

সহজে ব্যবহারঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর কাজ গুলো যেকোনো স্থানে বসেই মোবাইলের
মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যায় তাই এটা সহজে ব্যবহার যোগ্য।

অটো সফটওয়্যার আপডেটঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর সফটওয়্যার গুলো আপনার
আপডেট করার প্রয়োজন নেই। এগুলো অটো ভাবে আপডেট হয়ে থাকে। তাই আলাদা ভাবে
এটা মেইনটেন্স এর খরচ লাগে না।

যতটুকু ব্যবহার ততটুকু খরচঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এ আপনি যত টুকু ব্যবহার করবেন
শুধু মাত্র ততটুকুর জন্য পয়সা আপনাকে গুনতে হবে। যেটা কিনা ডেস্কটপ কম্পিউটিং এ
সম্ভব না।

ডকুমেন্ট কন্ট্রোলঃ মনে করুন কোন একটা অফিসে যদি ক্লাউড কম্পিউটিং না
ব্যবহার করে তবে সেই অফিসের ডকুমেন্ট সমূহ কন্ট্রোল করতে বা এক স্থান থেকে
অন্য স্থানে নেবার জন্য আলাদা লোকের প্রয়োজন হবে কিন্তু ক্লাউড কম্পিউটিং এ
সেই ধরনের কোন সমস্যা নেই। অতিরিক্ত লোক ছারাই সকল ডকুমেন্ট কন্ট্রোল করা
যায়।

সম্পূর্ণ সিকিউরঃ ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পূর্ণ সিকিউর কারন এতে আপনার ডাটা
হারানোর বা নষ্ট হবার কোন চান্স থাকে না। ল্যাপটপ বা কম্পিউটার হারিয়ে যায়।
হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যায় ইত্যাদি সমস্যা থেকে ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পূর্ণ মুক্ত।

অসুবিধা: এটা তেমন কিছু না কেননা সব সার্ভিস এর কিছু না কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে
ক্লাউড এর কিছু অসুবিধা হচ্ছেঃ
১। আপনার তথ্য যদি ক্লাউডে রাখেন, তাহলে সেই তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গের
সম্ভাবনা থাকে। আপনে যে আপনার মহামুল্যবান তথ্য আরেক জনের হাতে তুলে দিচ্ছেন
সে যে আপনার তথ্য নিয়ে গবেষণা করবে না তার কি গারান্টি আছে ?
২। তথ্য করাপ্টেড হয়ে যেয়ে পারে নিমিষে
৩। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নাও থাকতে পারে ।
৪। তথ্য ফাঁস হবার সম্ভাবনা।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশন এবং সার্ভিসঃ

Outright => out right হল একটি ফাইনান্স অ্যাপ্লিকেশন। এটা ছোট খাট বিজনেসের
আকাউন্ট এর কাজে ব্যবহার করা হয়। বিজনেসের প্রফিট, লস, আয়, ব্যয় ইত্যাদির
খরচ খুব সহজে করা যায়।

Google Apps => গুগল অ্যাপস অনেক সুবিধা দেয় যেমনঃ ডকুমেন্ট তরি করা,
স্প্রেডশিড তৈরি, স্লাইড শো তৈরি, ক্যালেন্ডার মেইনটেন্স, পার্সোনাল ইমেইল
ইত্যাদি তৈরি করার সুবিধা দেয়।

Evernote => প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নোট সমূহ খুব সহজে কন্ট্রোল করা, ব্যবহার
করা, যেকোনো স্থানে যেই নোট সমূহ ব্যবহার করাতে Evernote খুবই উপকারি।

Quickbooks => Quickbooks এক ধরনের একাউন্ট সার্ভিস। এর মাধ্যমে ক্যাশ
নিয়ন্ত্রন করা, বাজেট তৈরি, বিজনেস রিপোর্ট তৈরি ইত্যাদির কাজে খুব ভাল সাপোর্ট
দেয়।

Toggl => এটি একটি টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপলিকেশন। মূলত প্রোজেক্ট কন্ট্রোল এবং
টাইমিং এর জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। প্রোজেক্ট তৈরিতে কত সময় লাগলো, কোন
খাতে কতটুকু সময় সকল হিসাব এর মাধ্যমে জানা যায়।

Skype => Skype কম্পিউটার কে ফোনে রূপান্তর করে ফেলেছে। বিশ্বের যেকোনো
স্থান থেকে কম্পিউটার এর মাধ্যমে কথা বলা, ভিডিও চ্যাট করা ইত্যাদির সুবিধা
দিচ্ছে।

DropBox => অনেক দরকারি একটি সার্ভিস। ভার্চুয়াল হার্ডডিস্কও বলতে পারেন।
মানে আপনি যেকোনো ধরনের ফাইল রাখতে পারবেন এবং সেটা যেকোনো পিসি থেকে
কন্ট্রোল করতে পারবেন খুব সহজে। অন্যের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। A Content By Md Shouvikur Rahman

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *