“FOMO” নামক ফাঁদে পড়ার ক্ষতিগুলি একটু জেনে নিই- (পর্ব ০৩)

 
আমাদের কথাতো আগের দুই পর্বে মোটামুটি বলেছি এখন দেখুন- বিশেষ করে বাচ্চাদের এটা দারুন ভাবে প্রভাবিত করে। বিজ্ঞাপনে অন্য বাচ্চাদের কিছু খেতে দেখলে, সেটা না কিনে দেয়া পর্যন্ত তারা বাবা-মায়ের ঘুম হারাম করে ফেলে। অন্য দুইজনকে কিছু ব্যবহার করতে দেখলে, নিজের কাছে থাকা ভালো জিনিস বাদ দিয়ে সেটা পেতে ইচ্ছা করে। সেটা পাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে।
বড় হলে আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি। কারও কাছে ভালো জিনিস দেখলে সেটা পাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করি না। কিন্তু অবচেতন মনে সেই স্বভাবটি রয়েই যায়। এই কারণেই, নিজের ভালো একটি ফোন থাকলেও নতুন মডেলের ফোন কিনতে ইচ্ছা করে, বাসায় রান্না করে অনেক কম খরচে খাওয়া যায় জেনেও রেস্টুরেন্টে যেতে ইচ্ছা করে – কারণ পরিচিত মানুষরা সেখানে যাচ্ছে, ফেসবুকে সেল্ফি দিচ্ছে।
সেল্ফির প্রসঙ্গ ধরেই বলি, সোশ্যাল মিডিয়া কিন্তু পুরোটাই ফোমো-মার্কেটিং নির্ভর।
ফেসবুকে আপনি যতই স্ক্রোল করবেন – ততই নতুন নতুন কনটেন্ট আপনার সামনে আসবে। ছবি, স্ট্যাটাস, ভিডিও – আরও কত কি! – আর এই নতুন কনটেন্টের সম্ভাবনাই ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের ফেসবুকে বসিয়ে রাখে। বের হতে মন চায় না, কারণ অবচেতন মন ভাবে, ”বের হলেই হয়তো নতুন কিছু মিস করে ফেলবো”
আবার মানুষ যখন দেখে, বন্ধুর ঘুরতে যাওয়ার ছবিতে শত শত লাইক ও কমেন্ট পড়েছে – তখন তারও ইচ্ছা হয় তেমনটা পেতে। সে হয়তো ঘোরাঘুরি তেমন একটা পছন্দ করে না – কিন্তু লাইক পাওয়ার লোভে ঘুরতে গিয়ে একগাদা ছবি তুলে নিয়ে আসে।
আবার দেখবেন, কিছু মানুষ ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসে পুরো ছুটির দিনটা কাটিয়ে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে। নিজেকে কিভাবে এতে ’প্রেজেন্টেবল’ করা যায়, কিভাবে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় – এসব নিয়েই বহু মানুষের দিন কাটে। এর ফলে মানুষের মাঝে সম্পর্ক গুলো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি, প্রতিনিয়ত অন্যের মত হওয়ার জন্য মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিজেকে ক্রমাগত ছোট ভাবছে, এবং অন্যকে হিংসা করার মাত্রা বাড়ছে।
গত বছর আমেরিকায় হওয়া ঋণ বিষয়ক একটি গবেষণায় দেখা যায় ১৮-৩৪ বছর বয়সী আমেরিকানদের মধ্যে ৪০% মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভালো লাইফস্টাইল’ দেখাতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। – একটি সমাজের জন্য এরচেয়ে ভয়ঙ্কর আর কি হতে পারে?
এই সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের যত সময় নষ্ট করছে – পৃথিবীর ইতিহাসে মনেহয় কোনওকিছু এত মানুষের এত সময় নষ্ট করতে পারেনি।
এর মাঝেও ব্যাতিক্রম আছে, আর সেটা হলো- যারা লেখাপড়া ও স্কিল ডেভলপমেন্টে সময় ব্যয় করছেন তারা এগিয়ে যাচ্ছেন যোজন যোজন।
কোন দলে নিজেকে সামিল করছেন সেই ব্যাপারটা ভেবে দেখার দ্বায়িত্ব আপনার।

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *