সারাদিনের কাজের চাপ সামলে এসে ফ্রেশ হয়ে নিজেকে একটু পরিপাটি করে গুছিয়ে নিলো হৃদিতা,উদ্দেশ্য আজ একটা ভালো ডিনার টাইম কাটানো শুদ্ধর সাথে,কেননা আজ একটা মারাত্বক বিপদ থেকে শুদ্ধ বাচিয়ে নিয়েছে হৃদিতাকে,বলা যায় হৃদিতার ক্যারিয়ার এবং কোম্পানি দুইটাই একত্রে বাচিয়েছে শুদ্ধ তার স্কিল দিয়ে।
এদিকে শুদ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিজেকে খুব ইজি ড্রেসে পরিপাটি করেছে,করেই ব্যালকনিতে বসে আছে ভাবছে আজকে ডিনার একটু দ্রুত করে এসে বই নিয়ে বসবে সাথে একটু অফিসের ফাইল গুলিতে চোখ বুলিয়ে নিতে হবে,কেননা আগামীকাল ও একটা বড় কোম্পানির সাথে মিটিং,এমন ভাবতে ভাবতেই ডোরবেল বেজে উঠেছে,দরজায় চোখ রাখতেই সে হৃদিতাকা দকেহতে পেলো।
শুদ্ধ- কি ব্যাপার রেষ্ট না নিয়েই এখন এখানে?
হৃদিতা- বিরক্ত করলাম নাকি?
শুদ্ধ- খুব সাধারনের মাঝেও অনন্য সুন্দর দেখাচ্ছে হৃদিতাকে, সামলে নিয়ে বললো- কোন সুন্দরীর সাথে এমন সন্ধ্যায় বসতে পারলে কার বিরক্তি আসে বলেন শুনি?
হৃদিতা- ওহ আচ্ছা,আপনার এই জ্ঞান ও কাজ করে? আমার জানা ছিলোনা।
শুদ্ধ- হা হা হা, সব জানতে নেই,বলুন কি করতে পারি?
হৃদিতা- আসলে আমি চাইছিলাম আজকের ডিনার টা আমি করাবো,একটু আলোচনা করে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।
শুদ্ধ- হঠাত, কি হলো বলেন তো।
হৃদিতা- আজ আপনি যে বড় একটা ঝামেলা থেকে বাচালেন আমিসহ আমাদের কোম্পানিকে তাতে করে এইটা আপনার প্রাপ্য।
শুদ্ধ- আমিতো শুধুই কাষ্টমার সার্ভিসের টেকনিক এপ্লাই করেছি,শিখবেন নাকি?
হৃদিতা- সেটাই আলোচনার মাঝে জেনে নিতে চাই।
শুদ্ধ- এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে আসতে হবে আপনাকে তাহলে এই ব্যালকনিতে।
হৃদিতা- মনে মনে খুশি হয়েই চা বানিয়ে নিয়ে বেলকনিতে এসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জানতে চাইলো- আচ্ছা আজকে আপনি ঐ ভদ্রলোককে কিভাবে সামলে নিলেন বলেন তো।
শুদ্ধ- আপনি কি জানেন?
হৃদিতা- মানে?
শুদ্ধ- এই টেকনিক দিয়েই আজ থামিয়েছি,আসুন একটু খুলে বলি।
আজ আমাদের যার সাথে সাক্ষাত হয়েছিলো উনি মনে করেন যে, উনি আমার কিংবা আপনার চেয়েও বেশি জানেন ইনফ্যাক্ট উনি ভাবেন উনি অনেক জানেন এবং যে কাউকে জ্ঞান দেবার ক্ষমতা রাখেন।এমন কারো সামনে আপনি যদি পড়ে যান তাহলে এমন সমস্যা হয়,যেখানে খুব দ্রুত বিতর্ক বেঁধে যেতে পারে।
হৃদিতা- আরে বাহ,এইটা আপনি দারুন বলেছেন তো। আজ তো এই কাজ টাই হচ্ছিলো,আমি যতই ওনাকে প্রজেক্ট নিয়ে বলতে চাইছি উনি ততই বোঝাতে চাইছেন উনি জানেন,নতুন কিছু যেয বলি।
শুদ্ধ- শুনুন, এই টাইপের মানূষের সামনে পড়লে বুঝতে হবে বিতর্ক খুব সন্নিকটে। এটা থেকে বাচতে হলে আপনাকে কিভাবে আলাপচারিতার সময় নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নেয়া যায়।
হৃদিতা- আমিতো এইজন্য ওনাকে থামাতে চাইছিলাম,কিন্তু উনি তো থামতেই চাইলোনা।
শুদ্ধ- এই ব্যাপারটা অনেকটা নতুন কারো প্রেমে পড়ার মতই,যখন কেউ আপনাকে বোঝাতে চাইছেন যে উনি অনেক জানেন,এবং আপনাকে বিব্রত করাই তার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় তখন আপনি তাকে থামাতে চাইলেই তো থামবেনা।
দেখেন- সচারারচর আমরা যা করে থাকি তা হলো, ব্যাক্তিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে ফেলি,যা তর্কের সৃষ্টি করে দেয়।
হৃদিতা- আমিও তো এইটাই করছিলাম।
শুদ্ধ- এইজন্যই আমি আপনাকে কথা বলতে না দিয়ে নিজে নিয়ন্ত্রন নিয়েছিলাম। দেখেন কাষ্টমারের কাছ থেকে এমন হতাশাজনক ব্যাবহার কেউ চাইবেনা।
এজন্য আমাদের যা করা উচিত- যখন দেখবেন এমন কোন মানূষের সাথে আপনার সাক্ষাত হয়ে গেছে যিনি বোঝাতে চাইছেন যে-উনি আপনার চেয়ে অনেক বেশি জানেন কিংবা আপনার জানা জিনসে কোন নতুনত্ব নেই বলে ধরে নিয়ে কথা বলছে তখন আপনাকে তার কনফিডেন্সে আঘাত করতে হবে খুব টেকনিক্যালি।
হৃদিতা- সেই টেকনিক কেমন?
শুদ্ধ- আপনি ওনার জানার ব্যাপারকে প্রশ্নবিদ্ধ করুন। ঠিক এভাবে-
-
আপনি আমাদের কোম্পানি এবং ভিন্ন উপায়ে দেওয়া সেবা সম্পর্কে জানেন কি?
-
ঈদের পর থেকে কিংবা নতুন বছরে আপনাদের যে পরিবর্তন হয়েছে, সেই সম্পর্কে আপনি কি জানেন?
-
এখনকার নিউজগুলি সম্পর্কে কি আপনি অবগত?
-
আমাদের কাষ্টমার সেবা সম্পর্কে আপনি কি জানেন?
হৃদিতা- আরে বাহ! এমন প্রশ্ন করলে তো উনি নিজেই কনফিউশনে পড়ে যাবে, ব্রিলিয়ান্ট।
শুদ্ধ- আগামীকাল আবার মিটিং,চলুন আজকে এখানেই শেষ করি,ডিনার টা সেরে আসি।
হৃদিতা- চলুন চলুন।