সব দিক বিবেচনা করে কাজ করার উপায়- সিক্স হ্যাট টেকনিক 

সব দিক বিবেচনা করে কাজ করা উচিৎ – এই কথাটা আমরা প্রায়ই শুনি। যাঁরা এই কাজটা করতে পারেন, তাঁদের ভুল কম হয়। বেশিরভাগ কাজেই তাঁরা সফল হন। কিন্তু সবার এই গুণ থাকে না। কিছু মানুষ জন্ম থেকেই যে কোনও কাজ সব দিক বিবেচনা করে করতে পারে, কেউ শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজের অজান্তেই শিখে যায়। – কিন্তু অনেকেই এটা পারে না।
কিন্তু তাই বলে এটা শেখা যাবে না – এমন কোনও কথা নেই। আমরা অনেক কিছুই নিজে নিজে পারি না, কিন্তু ভালো করে বোঝার মত উপাদান পেলে মানুষ সবকিছুই শিখতে পারে। সব দিক বিবেচনা করে চিন্তা করার ক্ষমতাও শেখা সম্ভব।
✅ হোয়াইট হ্যাট
হোয়াইট হ্যাট বা সাদা টুপি টেকনিকে চিন্তা করার সময়ে শুধুই তথ্য আর পরিসংখ্যানে ফোকাস করতে হবে, এবং সবকিছুকে 2+2=4 লজিকে ফেলে চিন্তা করতে হবে। যুক্তি বা তথ্যের বাইরে কোনও চিন্তা করা যাবে না। statistics বা পরিসংখ্যান যেটা বলবে – সেটাকে ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গত দুই বছর ধরে যদি একটি পন্যের বিক্রী ২% হারে বাড়ে, তবে এই বছরও তেমনটা হবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করার চিন্তা করতে হবে। হাতে থাকা তথ্যকে ভিত্তি করে চিন্তা করা ছাড়া আর কিছু করা যাবে না।
✅ রেড হ্যাট
রেড হ্যাট বা লাল টুপি পর্যায়ে ডাটার বদলে ইমোশন বা আবেগ দিয়ে চিন্তা করতে হবে। মন কি বলছে, ভাবতে গিয়ে কেমন অনুভূতি হচ্ছে – এটার ওপর জোর দিতে হবে। খারাপ লাগা, ভালো লাগা, আনন্দ, রাগ – সব ধরনের অনুভূতিকেই গুরুত্ব দিতে হবে।
যে কোনও বিষয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে তথ্য ও পরিসংখ্যান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে মানুষের অনুভূতিও তেমই গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যায়ে অনুভূতির কারণ বোঝার চেষ্টা করবেন না। শুধু অনুভূতি কেমন হচ্ছে তা মনে রাখুন।
✅ ইয়োলো হ্যাট
ইয়োলো হ্যাট বা হলুদ টুপি হল পজিটিভ চিন্তা করার ধাপ। যে কোনও বিষয়ের দিকে আপনি আশাবাদী হয়ে তাকাবেন, এবং সেটির সব ভালো দিকগুলো খুঁজে বের করবেন। যদি নেগেটিভ দিক ধরা পড়েও, তা আপাতত এড়িয়ে যান। শুধু পজিটিভ দিক গুলোতে ফোকাস করুন। কোনও নতুন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করতে গেলে, কি কি কারণে আইডিয়াটি সফল হতে পারে – শুধু সেটা নিয়েই চিন্তা করুন। বাকি সব ভুলে যান। যখন হতাশ বা নিরাশ থাকবেন, তখন ইয়োলো হ্যাট টেকনিক আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এছাড়া ইয়োলো হ্যাট থিংকিং এর মাধ্যমে একটি আইডিয়া বা প্রজেক্ট এর সম্ভাবনাগুলো সামনে আসবে।
✅ ব্ল্যাক হ্যাট
ব্ল্যাক হ্যাট বা কালো টুপি হল ইয়োলো হ্যাটের ঠিক উল্টো। ব্ল্যাক হ্যাড মুডে শুধু নেগেটিভ বা নেতিবাচক দিকগুলোতে ফোকাস করবেন। কোনও আইডিয়া কেন সফল হবে না, এবং কোনও কাজ করলে কি কি ক্ষতি হতে পারে, ক্ষতির পরিমান কেমন হতে পারে – এসব বিষয়ে ফোকাস করুন। এই সময়ে কোনও পজিটিভ চিন্তা মাথায় আসলে সেটা নিয়ে ভাবতে যাবেন না। শুধু খারাপ দিকগুলোতে ফোকাস করুন। ব্ল্যাক হ্যাট চিন্তার সময়ে যে কোনও আইডিয়া বা প্রজেক্ট এর ঝুঁকিগুলো সামনে চলে আসবে।
✅ গ্রীন হ্যাট
গ্রিণ হ্যাট বা সবুজ টুপি সৃষ্টিশীলতা ও পরীক্ষামূলক চিন্তার চিহ্ন। যে কোনও সমস্যা বা বিষয় নিয়ে নতুন ধরনের সমাধান ও নতুন আইডিয়ার প্রয়োগ কিভাবে করা যায় – তা নিয়ে কাজ করে গ্রিণ হ্যাট মেথড। এই ধাপে আপনি যে কোনও বিষয় নিয়ে নতুন কিছু চিন্তা করার চেষ্টা করবেন। যা আগে করা হয়নি, বা যে বিষয় নিয়ে ভাবছেন – সেই বিষয়ে যেসব আইডিয়া আগে প্রয়োগ করা হয়নি – তা নিয়ে চিন্তা করবেন। ভাবনার বিষয়টি নিয়ে মনে মনে এক্সপেরিমেন্ট করার চেষ্টা করবেন।
ধরুন, হোয়াইট হ্যাট এর পরিসংখ্যান বলছে গত দুই বছর ধরে নীল এর সাথে কমলা রংএর কম্বিনেশনের পোশাক ১৮ থেকে ২৫ বছরের ক্রেতারা বেশি কিনছে। এখন ”গ্রিণ হ্যাট পরে“ চিন্তা করার সময়ে আপনি হয়তো নীলের সাথে বেগুণী কম্বিনেশন করলে কি হতে পারে – তা নিয়ে চিন্তা করতে পারেন।
এরকম আরও নতুন নতুন আইডিয়া মাথায় আনার উদ্দেশ্যেই এই ধাপে চিন্তা করবেন। আউট অব দ্য বক্স বা গতানুগতিক ধারণার বাইরে নতুন কিছু ভাবার চেষ্টা করবেন। এই ধাপ থেকে অনেক ইউনিক আইডিয়া বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
✅ ব্লু হ্যাট
ব্লু হ্যাট বা নীল টুপি হল শেষ ধাপ। এখানে অন্য সব পদ্ধতি থেকে পাওয়া ফলাফল বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ডাটা কি বলছে, প্রজেক্ট বা আইডিয়ার ব্যাপারে বেশিরভাগের অনুভূতি কি, সম্ভাবনা ও ঝুঁকির মাত্রা কেমন – এর মধ্যে কোনটি বেশি, আইডিয়াতে নতুন কি যোগ করা যায় – এইসব বিষয় এক করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় এই ধাপে। মানে সবগুলো মিলিয়ে একটি চিন্তা। আগের পদ্ধতি ঠিক ভাবে আলাদা আলাদা ভাবে চিন্তা করার ফলে প্রতিটি দিক নিয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা হয়ে যাওয়ার কথা – যা ব্লু হ্যাট ধাপে এসে সিদ্ধান্ত নেয়াকে সহজ করবে। প্রয়োজনে আগের পদ্ধতি গুলোর ফলাফল ফাইল আকারে নিয়ে বসতে হবে।
সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকি, ডাটা ও লজিকের পাশাপাশি সৃষ্টিশীল চিন্তা এবং অনুভূতি এক করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে – সেই কাজ সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আপনাদের চাহিদায় আমি একটি উদাহরন দিয়ে বোঝাবো এটাকে ইনশাআল্লাহ।

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *