বেশ কয়দিন একসাথে থাকলেও এখনো আশেপাশের এরিয়াগুলিকে ভালো করে দেখা হলোনা শুদ্ধ ও হৃদিতার,এইজন্য তারা আজ একত্রে বের হয়েছিলো সন্ধ্যার পরেই।
সারাক্ষন একত্রে ঘুরতে যেয়ে হৃদিতা খেয়াল করলো যে- শুদ্ধর একটা দারুন গুন আছে,সে খুব সহজেই মানূষের সাথে কথা চালিয়ে যেতে পারে।
হৃদিতা- শুদ্ধ, আপনি কি আমাকে একটা জিনিস শেখাবেন?
শুদ্ধ- কি জিনিস সেটা আবার?
হৃদিতা- কিভাবে মানুষের সাথে খুব সহজেই কথা চালিয়ে নেয়া যায়?
শুদ্ধ- হা হা হা, এইটা কোন কথা বললেন?
হৃদিতা- আরে মশাই, আমার মত মুখচোরাও এত কথা বলে আপনার সাথে,আর কয়েকদিন ধরেই তো দেখছি সেটা।
শুদ্ধ- শুনুন- অনেক সময়েই এমনটা হয় যে আমরা কারও সাথে কথা বলার সময়ে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রশ্ন করি এবং বেশ ভালো ভালো কথা বলি – কিন্তু ওপাশ থেকে ‘হ্যাঁ’, ‘না’, ‘ওয়াও – তাই নাকি!’, ‘ভালোতো’ – ইত্যাদি ছোট ছোট উত্তর আসতে থাকে। এর ফলে এক সময়ে গিয়ে আপনার আর কথা বলার আগ্রহ থাকে না। আড্ডা বা কথপোকথন ওখানেই শেষ হয়ে যায়।
হৃদিতা- অনেকেই বোঝে না যে আসলে তার ভুলটা কোথায় হয়েছে, এবং কিভাবে প্রশ্ন করতে হয়।
শুদ্ধ- ভুলটা আসলে হয় প্রশ্ন করার ধরনে। আমার কাছে এই প্রশ্নগুলি হলো ‘বন্ধ প্রশ্ন’ । এগুলি আসলে এমন প্রশ্ন যার উত্তরে ছোট ছোট কথা বললেই চলে। কিন্তু এমন কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলোকে ‘খোলা প্রশ্ন’ বলা যায় – সেগুলোর উত্তর এক-দুই কথায় দেয়া সম্ভব নয়। এখানে একটি তথ্য আপনাকে জানিয়ে রাখি, মানুষ নিজের ব্যাপারে কথা বলতে খুব পছন্দ করে – কেউ হয়তো স্বীকার করে, আর কেউ করে না। কিন্তু ব্যাপারটা এটাই। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা আপনার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।
ধরুন আপনি আপনার এক নতুন পরিচিত বন্ধুর এক পার্টিতে গিয়েছেন। পার্টিতে আপনি শুধু তাকেই চেনেন, যেমন আজ আমি ঐ ফাইচ স্টারে শুধু আপনাকেই চিনতাম। তো আপনার বন্ধু (ধরা যাক তার নাম স্বচ্ছ) খাওয়াদাওয়া ও অন্যান্য আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, এবং আপনি ভবঘুরের মত পার্টির এখানে সেখানে ঘুরছেন। খুবই বেদনাদায়ক একটি ব্যাপার। এখন ধরা যাক আপনি ঠিক করলেন কারও সাথে কথা বলে সময়টা পার করবেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে পেলেন আপনার সমবয়সী একজনও একা একা এক কোনে দাঁড়িয়ে আছেন। আপনি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে কথা শুরু করলেন:
আমি আর আপনি এইটা করতে পারি-
শুদ্ধ: হাই
হৃদিতা: হ্যালো
শুদ্ধ: পার্টিটা বেশ ভালোই না?
হৃদিতা: হ্যাঁ, ভালোই…
শুদ্ধ: আপনি স্বচ্ছ এর বন্ধু?
হৃদিতা: হ্যাঁ…
শুদ্ধ: আমিও… আচ্ছা আপনি খেয়েছেন?
হৃদিতা: না…
শুদ্ধ: আচ্ছা, আমিও না
হৃদিতা: (বিব্রত হেসে) ও… ঠিক আছে… আচ্ছা আমি একটু ওদিকটায় যাই, কথা বলে ভালো লাগল
শুদ্ধ: (বিব্রত হাসি) ওকে
এই কথাবার্তার ভুলটা কোথায়, তা হয়তো অনেকেই ধরতে পারবে না। কিন্তু এটা বুঝতে না পারার কারনেই আমরা অনেকে প্রথম দেখায় আলাপ জমাতে পারি না।আবার আপনি যদি ভেবে থাকেন, শুধু প্রশ্ন করে যাওয়ার কারনে আলাপ জমেনি, তাহলেও ভুল করবেন।
আসলে শুধু মাত্র প্রশ্ন করেই একজন মানুষের সাথে অনেক্ষণ কথা বলা যায়। কিন্তু সেজন্য সঠিক ধরনের প্রশ্ন করতে হবে।
হৃদিতা- সেই সঠিক ওয়েটা কি?
শুদ্ধ- আগেই বলেছি, প্রশ্ন আসলে দুই ধরনের: বন্ধ এবং খোলা প্রশ্ন। এই নাম দেয়ার কারণ হল, ‘বন্ধ’ প্রশ্ন কথা এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে কথা বন্ধ হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। অন্যদিকে ‘খোলা’ টাইপের প্রশ্ন গুলো মানুষকে মন খুলে কথা বলায়।
চলুন একই দৃশ্যে এবার খোলা প্রশ্ন করার ফলে কি ঘটে দেখি:
শুদ্ধ: হাই, আমার নাম শুদ্ধ… আপনি?
হৃদিতা: হাই, আমি হৃদিতা।
শুদ্ধ: পার্টি তো ভালোই চলছে …
হৃদিতা: হ্যাঁ, বেশ ভালো পার্টি
শুদ্ধ: আমার তো পার্টির ডেকোরেশন খুবই ভালো লেগেছে.. আপনার কোন জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে?
[এই ধরনের প্রশ্নে এক কথায় উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। কাজেই বড় উত্তর আসবে। আর আগেই বলেছি, মানুষ সব সময়েই নিজেকে তুলে ধরতে পছন্দ করে। – হৃদিতার উত্তরটা কি হতে পারে তার একটা আইডিয়া নেয়া যাক-]
হৃদিতা: আমার তো পার্টির সবকিছুই ভালো লেগেছে, গানগুলো বেশ ছিল
[এরপর আপনি গান নিয়ে তার সাথে কথা বলতে শুরু করতে পারেন। কোনও ধরনের গান তার পছন্দ, তার প্রিয় শিল্পী কে – ইত্যাদি ইত্যাদি]
এরপর আসা যাক আপনার করা আগের বারের দ্বিতীয় প্রশ্নে। প্রশ্নটি ছিল, হৃদিতা, স্বচ্ছ এর বন্ধু কি-না? – প্রশ্নটি এভাবে না করে, যদি বলা হত স্বচ্ছের সাথে তার কিভাবে পরিচয় হয়েছে – তাহলে কিন্তু “হ্যাঁ” এর চেয়ে আরও বড় একটি উত্তর পাওয়া যেত।
আবার খাবারের ব্যাপারেও কিন্তু আপনি কথা বাড়াতে পারতেন। আজকের মেন্যুতে তার প্রিয় খাবার কোনটি, এবং কেন সেটি প্রিয় – এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। – মোটের উপর প্রশ্নগুলো এমন হওয়া চাই যাতে করে সামনের মানুষটি নিজেকে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশ করার সুযোগ পায়।
হৃদিতা- এইগুলি কি আমার উপরে এপ্লাই হয়েছিলো?
শুদ্ধ- নাহ, এমন কেন মনে হলো? মনে মনে ( এপ্লাই তো করেছিলাম কত সহজেই বন্ধুত্ব করা যাবে সেই টিপস টা)
হৃদিতা- মুখের নয়,মনের টা জানতে চাইলাম।
শুদ্ধ- আগামীকাল জানাবো, চলুন রুমে যায়।
মোঃ সৌভিকুর রহমান
শিক্ষক (কম্পিউটার বিভাগ)
যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
আমার কাজ- লোগো ডিজাইন,ব্যানার ডিজাইন,বিজনেস কার্ড ডিজাইন,ফেসবুক পেজ ডেকোরেশন,ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইন,পেজ প্রমোট ও বুষ্টিং,কন্টেন্ট রাইটিং,ভিডিও এডিটিং ও সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট নিয়ে।
আমার পেজ- ICT CARE