কাষ্টমার সার্ভিস-০১ – কাষ্টমার সার্ভিসে আমার যেভাবে শুরু করা উচিত

সারাদিনেই তো আমরা অনেক পড়ালেখা করছি, চলুন এখন লেখাপড়া বাদ দিয়ে একটু গল্প করি।
শুদ্ধ– কি ব্যাপার, হৃদিতা ম্যাডাম কি হলো আপনার?
মন কেন বিষন্ন হয়ে রইলো বলুন তো,একে তো বৃষ্টির দিন তারপরে এত সুন্দর রিসোর্টে উঠেছেন।আবার আজকে এতবড় বিজনেস মিটিং,আপনাকে কি বিষন্ন হলে মানাবে?
হৃদিতা– নাহ! তেমন কিছুই না, আসলে আমি একটু ভাবছি আমার অবস্থান টা নিয়ে।
শুদ্ধ– কেন? সেটায় আবার কি এলো গেলো বলুন তো। এত বড় কোম্পানির এত বড় দ্বায়িত্ব আছেন তবুও অসন্তুষ্টি কেন?
হৃদিতা– মনে হচ্ছে আমি যেখানে যেটি বলা দরকার সেটি হয়তো সেখানে বলতে পারছি না, আর এটার ইফেক্ট আমার ব্যাক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনে এসে হানা দিচ্ছে।সেদিন যদি আপনি সামলে না নিতেন তাহলে কি হতো বলেন?
এতবড় বাজেটের কাজটাই তো হারাতাম আমরা।
শুদ্ধ– এটাকে এতবড় ভাবার কিছু নেই,কাজের ব্যাপারে একে অপরের প্রতিযোগী হলে লাভ নেই। তবে একটা ব্যাপার আছে।
হৃদিতা– সেটা কি? একটু বলেন তো মশাই।
শুদ্ধ– “আপনি যদি যেকোন পরিস্থিতিতে কাউকে প্রভাবিত করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু শক্তিশালি শব্দের ব্যাবহার জানতে হবে।”
হৃদিতা- আচ্ছা? শক্তিশালি শব্দ আবার হয় নাকি? আর হলেও সেটা কেমন? আমায় একটু বোঝান তো।
শুদ্ধ – হ্যাঁ শক্তিশালি শব্দ তো হয় কিন্তু সেটি শেখার সময় ও আপনাকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে একটি সাধারন নিয়ম।
বলতে পারেন যেকোন ক্ষেত্রেই আপনাকে এটি মানতে হবে।
হৃদিতা– আচ্ছা, এভাবে না বলে আমায় একটু ক্লাস নিয়ে বুঝিয়েই বলুন।
শুদ্ধ– “আপনার জীবনে আপনি যা কিছু শিখলেন বা শিখছেন, তার সব কিছুকে সহজ, সরল এবং কার্যকারী ভাবুন।”
হৃদিতা- সব কিছু কাজে আসে? আর সহজ সরল ও তো হয় না
শুদ্ধ- হয় তো, এখানেই তো একটা দারুন ব্যাপার আছে।
হৃদিতা- আচ্ছা, ক্ষনে ক্ষনে আপনি যেন আমায় আরো বেশিয় ডুবিয়ে দিচ্ছেন কথার জালে।আমি মনেহয় ফেসেই গেলাম।
শুদ্ধ– আরে বাবা,আমি কথায় ফাসাতে চাইছিনা, বরং আমায় আপনি এটা বলেন- আচ্ছা আমি বহুবার সেদিন আপনার রুমে যাবার পরে যে, দুধ চা টা বানিয়েছিলেন, আমার কাছে সেটার স্বাদ অনন্য ছিলো।আমি এসে অনেকবার বানাতে চেষ্টা করেছি কিন্তু আপনার বানানো স্বাদ টা এলোই না যেন। আপনি কিভাবে বানান?
উফ! এত যে কঠিন এই কাজ টা।
হৃদিতা– আরে না মশাই! এই চা বানানো টা একেবারেই সহজ কাজ। এটা নিয়ে পরে নাহয় আপনাকে বলবো ক্ষন? এখন সময় যাচ্ছে সকালের মিটিং এর আগেই আমায় শিখিয়ে দেন,আমি প্রমিস চা করে খাইয়েই একসাথে বের হবো।
শুদ্ধ– দেখেছেন প্রিয়, এই বেলাতে আমার কাছে যা কঠিন হয়ে ধরা দিলো আপনার কাছে একান্তই তা চর্চার বশে খুব সহজ হয়ে এসেছে। তাই ঐ সহজ, সরল আর কার্যকারী ব্যাপার টা এমই ভাবেই আসবে আপনার কাছে।
হৃদিতা- এই,আপনি কি তাহলে বলার জন্যই প্রশংসা করেছেন?
শুদ্ধ– আরে নাহ নাহ,ঐটাও সত্য।
হৃদিতা– আচ্ছা, আপনি আমায় কিছু ঐ যে ম্যাজিক ওয়ার্ড শিখিয়েছিলেন সেদিন ঘাসের উপরে বসে। আসলে সেগুলির মধ্যেই কি কিছু নিহিত আছে?
শুদ্ধ– আজকে আমি ম্যাজিক ওয়ার্ডের চেয়েও বেশি জোরালো কিছুই বলতে চাই আপনাকে, কিন্তু ম্যাজিক ওয়ার্ড কে ব্যাখ্যা করতে চাই না, তাতে বরং অনেক সময় চলে যাবে।
হৃদিতা– “ম্যাজিক ওয়ার্ড হচ্ছে আমার কিংবা আপনার অবচেতন মস্তিস্কের সাথে কথা বলা একগুচ্ছ শব্দ।”
এটুকু অন্তত ঠিক আছে কিনা বলেন তো
শুদ্ধ- হ্যাঁ তা বটেই, ভালো ছাত্রী হলে সব মনে থাকে।
আমি আজকে যে আলোচনা করতে চাইলাম কাউকে প্রভাবিত করার জন্য সেটি বরং বলি-
“আমি জানি না এটা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় কিনা, কিন্তু……. “
হৃদিতা- কি ব্যাপার কিন্তু বলেই থেমে গেলেন কেন?
শুদ্ধ- কথা টা তো ঐ পর্যন্তই।
হৃদিতা- মানে?এইটা কোন কথা? এত আগ্রহ জন্ম নিলো আর থামিয়ে দিলেন কেন?
শুদ্ধ– আমাদের মনের মধ্যে, কোন পন্যের প্রদর্শনীতে ক্রেতা আর বিক্রেতার কথোপকথনে বিক্রেতার সব চেয়ে চিন্তার জায়গা থাকে পন্যের দাম, মান সব কিছু বলার পরে ক্রেত্তার দ্বারা প্রত্যাক্ষিত হবার ব্যাপার টা তাই না?
হৃদিতা- খুব স্বাভাবিক নয় কি? কেননা এত কিছু করার পরেও সে যখন আমার পন্য কিংবা আমার দিকে আস্থার সহিত তাকাচ্ছে না তখন আমার তো অসহায়ত্ব বোধ করা টা খুব স্বাভাবিক আর এটা নিয়েই তো আমার চিন্তা চলমান।
শুদ্ধ- আপনি তো ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারছেন না, তার দিকে শক্তিশালি শব্দের তীর ছূড়তে পারছেন না।
হৃসিতা- শুদ্ধ, আপনার এই কথার মধ্যে কিন্তু পাওয়ার আছে। আপনি আমাকে কি বলেছেন তা আমার মনে নাই কিন্তু টুকু মনে আছে আর জানার আগ্রহ বাড়ছে এজন্য
শুদ্ধ– হ্যাঁ, আমি এটাই বলতে চাইছি, ধরুন আমাদের অফিসের বস আপনাকে ডেকে জানালো-
ম্যাডাম আপনি আমাদের কোম্পানির জন্য যে কাজ করছেন সেটি দারুন এবং এর জন্য আমাদের আনন্দ অনেক, কিন্তু আপনার কিছু কাজে যদি একটু পরিবর্তন আনা যেত তাহলে হয়তো আরো বেটার হতো।
আপনি ভেবে দেখুন তো। কি করতেন?
হৃদিতা– ইশ ! এমন বললে তো আমার হাসিমাখা মুখেই আমি বসের রুম থেকে বের হয়ে এসে আমার সকল কাজ কে আবার রিভিশনে বসে যেতাম আর একটা পর্যায়ে বসের বলা কথার ঐ কিন্তুর আগ পর্যন্ত সব ভুলে শুধু কিন্তুর পরের টুকু খুঁজে বের করতাম।
শুদ্ধ- এবার ভাবেন কাউকে প্রভাবিত করতে গেলে আপনার এই বলার এপ্রোচ টা কতটা জরুরী।সেটা আপনার ব্যাক্তিগত কাজে হোক কিংবা পেশাদারী কাজেই হোক।
হৃদিতা- চলুন এককাপ চা খাওয়ায় আর এই আলোচনা পরে আবার হবে এমন আশা রেখে উঠি?
শুদ্ধ- হ্যাঁ সেটাই হওয়া উচিত, অন্তত সকালে চায়ের কাপের চুমুক মিস করা উচিত হবেনা। তবে আলোচনার ব্যাপারে আমার জানা লাগবে বেশ, কেননা এই কথার এপ্লিকেশন কে কিভাবে করছে সেটি জানা জরুরী আর তারপরেই আবার আলোচনা হবে কিনা সেটি দেখবো।

Newsletter Updates

Enter your email address below and subscribe to our newsletter

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *